পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৩১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সার্বজনীন USS পরমেশ্বর বলে, দশ টাকা কম দিতে হবে, নইলে চলবে না। তোমাবা অন্য বাড়ি খুঁজে নাও। ভয়ানক যেন রেগে গিমেছে, এমনিভাবে বলে । সুরঞ্জন একটু ভড়কে গিয়ে বলে, বরাবর যা দিয়ে এসেছি।-- বিধুবাবু বরাবর দশ টাকা বেশি নিতেন, এবার থেকে দশ টাকা কম দিতে হবে। ঠিক ভাড়া কত হওয়া উচিত আমি হিসেব করে দেখেছি। আমাকে ঠকাতে পাববে না। ঠিক ভাড়া দিতে না চাও, উঠে যাও। এবাব সুরঞ্জনের মুখে হাসি ফোটে। বেশ তো ঠিক ভাড়াই নিন ! টাকা নিয়ে মহেশ্বব বসিাদ দেয়। পরমেশ্বর হেসে বলে, আমার মতলবটা টেল পেলে না, এই তুমি শিক্ষিত বুদ্ধিমান ছেলে ? কয়েক মাস দশ টাকা করে কম নিয়ে ডিফল্টার দাঁড় কবিযে তোমাদের ভাগিয়ে দেব। সুব্যঞ্জন হাসিমুখে তাকে রসিদটা দেখাষা। মঙ্গেশ্বব নিজেই রাসিদের পিছনে লিখে দিযেছে যে চলতি মাস থেকে দশ টাকা ভাড়া কমানো হল। পূজা এগিয়ে আসছে। মহেশ্বর নতুন অবস্থায় নতুনভাবে পূজার কাবস্থা কবাব চিন্তা আর হিসাবনিকাশ নিয়ে সব সময় ব্যাপ্ত আৰু বিব্রত হয়ে আছে। পরমেশ্বব নিঞ্জে থেকে পরামর্শ দিযেছে, পঙ্কজের সঙ্গে পরামর্শ কর। ও পাড়াবা সার্বজনীন পূজায খুব খাটে— ওব কাছে সব জানতে পাববে। ছোটােখাটো কিন্তু চকচকে নতুন গাড়িতে চেপে এক বধিবাব সকালে বিধুভুষণেরা এ পাড়ায় বেড়াতে আসে, চেনা লোকদেব সঙ্গে দেখা কর৩ে আসে । বুঝতে অবশ্য কষ্ট হয় না। কাবুবই যে দেখা কবাৰ চেয়ে নতুন কেনা গাড়িটা দেখাতে আসাই তাদেব বেশি জরুর্বি ছিল। কোনো একদিন গাড়ি কেনােটা টাকা নষ্ট করার বদলে প্রযোজনীয় হয়ে উঠতে পাবে ভেবে এ বাড়িতে বিধুভুষণ একটা গ্যারেজ তৈবি করেছিল, সম্রাস্ত পাড়ায় আধুনিক প্যাটানের গ্যাবেজবিহীন ছোটোখাটো বাড়িটা কেনার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি কেনা ও তার পরকীব হয়ে পড়েছে। একটা গ্যারেজও তৈবি করে নিতে হযেছে তাড়া ৩াড়ি। একজন ড্রাইভারও রাখতে হয়েছে গাড়িটা চালাবার জন্য। তাবা কেউ গাড়ি চালাতে জানে না। বিধুভুষণেব অবশ্য হিসাব ঠিক কবই আছে। নিজেরা গাড়ি চালালে কোনোই দোষ হয় না। আজকাল, গাড়ি একটা থাকলেই হল। গাড়ি চালাতে শিখে লাইসেন্স পাওয়া পর্যন্তই সে কান্তিলালেব মাইনে গুনবে। অবশ্য গাডি চালাতে শিখতে হবে খুব ভালো কবেই। কাস্তিলালের খবচটা বাচাতে চেযে কলকাতা শহরে কঁচা হাতে গাড়ি চালাতে গিয়ে আকসিডেন্ট ঘটিয়ে হয়তো অপচয্য কবে বসবে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেব কিংবা জীবনেব ! ও বকম বেহিসাবি টাকার মায়া বিধুভুষণের নেই। তাব আগেব বাড়িব সামনেই গাডি টাড়ায। পাড়াব অনেক বাড়ি থেকেই গাড়িটা এখানে দেখা যাবে। তারা নেমে বাড়ির ভিতবে গেলে কাস্তিলােলও নেমে দাঁড়িয়ে একটা বিড়ি ধবায়। এমন একটা মুখভঙ্গি করে থুতু ফেলে যেন গাড়ি আর গাড়ির মানুষগুলির নোংরা সান্নিধ্য থেকে মুক্তি পেযে বেঁচেছে। পদ্মা মুখ ফিরিয়ে তার সেই মুখভঙ্গি দেখে ভাবে, বিড়ি টানতে ভালো লাগে না বেচারার। কিন্তু কী করবে। সিগারেট কিনতে নিশ্চয় পয়সা কুলোয় না।