পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৩৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সতীশ ডাক্তার একটু হাসে। যাক গে, যাক গে। সতীশের সঙ্গে পঙ্কজ বেরিয়ে যায়। একেবারে রাস্তায় নেমে জিজ্ঞাসা করে, জুরটা কীসের ডাক্তারবাবু ? সতীশ থেমে দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত তার মুখের আগ্রহ ব্যাকুলতার ভাবটা লক্ষ করে। যতদূর বুঝেছি। বাবা, জুরটা হল নার্ভাস ফিভার। নাৰ্ভগুলি বিগড়ে গিয়েছিল, সেই সঙ্গে আরও কতকগুলি ফিজিক্যাল কাজ জুটে হাইপারপাইরেস্কিয়া ঘটিয়েছিল। কথাটার মানে বুঝলে তো ? ওটা হল একশো সাড়ে-পাঁচের বেশি জুরের ডাক্তারি নাম। একটু থেমে সতীশ আবার বলে, বাড়িতে বিশ্রাম করলে নার্ভাস রিয়্যাকশনের জন্য জ্বর-জুর ভাব হত, সেরে যেত। তার বদলে শরীরের ওপর অত্যাচার হওয়ায় বেশি জর এসেছে। কিন্তু এত বেশি জ্বর নিয়ে চলতে ফিরতে পারে ? সাধারণ জুরে পারে না, বিকারের জুরে পারে, কিন্তু প্ৰায় ক্ষেত্রেই বিপদ ঘটে। বিকারে একটা বেঁকে চলতে আরম্ভ করে, ঝোকটা একটু এলোমেলো হলেই পড়ে যায। বাইরে থেকে এক ফিরে নিজে নিজে বিছানায় গিয়ে শোয়-এ একেবাবে বেয়াব কেস। আমার মনে হয়। সমস্ত বিকারের কেঁ”কটা কনসেস্ট্রেটেড হয়েছিল বাড়ি ফেরাষ, তাই এটা সম্ভব হযেছে। রাতারাতি জুরি কমে যাওয়ায় ও বাড়িব সবাই যে প্রতিমাকে একেবারে ভুলে গিয়ে সুরমার বিয়ের উৎসবে মেতে থাকে তা নয়, তবে প্রতিমার সঙ্গে নির্জনে পাঁচ-দশমিনিট কথা বলার সুযোগ পঙ্কজ পায় । কাল কোথায় গিযেছিলে ? বন্ধুব বাড়ি। মিলিদের বাড়ি ? মিলি আমার বন্ধু নাকি ? রত্নার কাছে গিয়েছিলাম বিয়ের নেমস্তন্ন করতে । আগে কবনি ?

  1. ! ।

তাব।পর ? তারপর ভাবলাম, কলকাতার দেখবার জায়গাগুলি তো অনেকদিন দেখিনি। হাজার হাজার লোক রোজ দেখছে, আমি সেই যে ছেলেবেলা একবার দেখেছিলাম। আর যাওয়াই হয়নি। তাই ভাবলাম আজকে যতগুলি পারি দেখলে দোষ কী ? প্রতিমা হাসবার চেষ্টা কবে। একবাত্রে তার মুখ হয়েছে সাতদিন কঠিন জুরি ভোগ করা রোগীর মতো শুকনো। 可f夺叶夺? ঘুরে ঘুরে দেখলাম। প্ৰথমে গেলাম মিউজিয়ামে, তারপর দুপুরবেলা গেলাম চিড়িয়াখানায়। কিছু না খেয়ে ? তেলেভাজা খেলাম। আঃ, কী সুন্দর যে করে ওই সস্তা খাবারগুলো ! সন্দেশ রসগোল্লা পুডিং কোথায় লাগে। পঙ্কজ সকাল থেকে তিনবার থার্মেমিটার দিয়ে তার জ্বর দেখেছে। আবার থার্মেমিটারটা নামিয়ে প্রতিমার বগলে লাগিয়ে দিয়ে বলে, জুর এল। কখন ? তা জানি না। চিড়িয়াখানায় ঘুরতে ঘুবতে ভারী শীত করতে লাগল। বমি বমি লাগতে লাগল। একবার বমি করে ফেললাম।