পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৪৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

F5에 8voዒ হেমেন্দ্র তাদের সাদরে সবিনযে অভ্যর্থনা জানায়। বাড়িতে যেন দুজন মন্ত্রীর পদার্পণ ঘটেছে এমনিভাবে কাচুমাচু করে। কথা বেশি বলে নগেন। বিপিন একটু চুপচাপ মানুষ। আপনার নাতির সঙ্গে পারা যায় না মশায়। কাজের দায়ে একবেলা ঘরের ভাত নাই বা জুটল। আমাদের—আপনারা কেন এত ঝঞ্ঝাট পোয়াবেন ? দেখুন দিকি কাণ্ড। কিছুতে ছাড়বে না।-- বলে কিনা। রান্নাবান্না সব হয়ে আছে, না এলে সব নষ্ট হবে। এ মোক্ষম যুক্তির তো কোনো কাটান নেই ! হেমেন্দ্ৰ বলে, আপনাদের অনুগ্রহ। গোবিন্দের বড়ো ভাগ্য যে আপনাদের স্নেহ পেয়েছে। সামনে বলা উচিত নয়---বুদ্ধিমান ছেলে। এ বয়সে অল্পদিনে ব্যাবসার কায়দা ঠিক বুঝে গেছে। গোবিন্দ লজ্জিতভাবে একটু হাসে। গৌরী ঘোমটা দিয়ে পরিবেশন করে। ছবিরাণীকে বিশেষভাবে আড়ালে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। সামনে আসা বারণ ! খেতে খেতে তারা সহজভাবে এ কথা ও কথা বলার চেষ্টা চালিয়ে যায়, কিন্তু অস্বস্তি বোধ চাপতে পারে না ! সকলেবই অস্বস্তি--তাদেরও, বাড়ির লোকেরও। শুধু গোবিন্দই যেন সমস্ত ব্যাপারটা সহজ ও স্বাভাবিক ধরে নিয়ে খুশি হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের খাওয়া দ্যাখে ! কত সুস্পষ্ট সহজবোধ্য এই বিশেষ মানুষ দুটির এ বাড়িতে এভাবে বসে খাওয়ার অসংগতি আর অস্বাভাবিকতা ! ঠিক যেন একটা অন্যায় অসামাজিক ব্যাপার ঘটে চলেছে ! নন্দন ভাবে, ওরা কী সত্যই নাছোড়বান্দা গোবিন্দের আবদার এড়াতে না পেরে এভাবে এখানে CN 9ž ? আর কোনো মানে নেই তাদের আসার ? কিন্তু তাহলেও তো একটা বড়ো প্রশ্ন থেকে যায়এত জোর কেন গোবিন্দের আবদারের ? কেন ওরা হেসে উড়িয়ে দিতে পারে না গোবিন্দের আমন্ত্রণ ? কেন ওরা গোবিন্দকে ক্ষুন্ন কবিতে চায় না ? গোবিন্দ ওদের সঙ্গেই বেরিয়ে যায়। বিকালে নন্দন হাঁটতে হাঁটতে দোকানে গিয়ে গোবিন্দকে বলে, একটা কথা ছিল। Sojosipi roy (Kö ? আরে না-অন্য কথা । জন দুই খদের দোকানে বসেছিল, তাদের সামলাবার জন্য দীননাথ একই যথেষ্ট। গোবিন্দ রাস্তায় নেমে এসে বলে, কী কথা বড়দা ? নন্দন কদাচিৎ দোকানে আসে, তার দোকানে আসাটা কেউ পছন্দ করে না। আজ হঠাৎ এভাবে এসে কথা আছে বলায় গোবিন্দ একটু ভড়কে গেছে। নন্দন বলে, বলছিলাম কী তোর একটু সাবধান হওয়া দরকার। তোকে আমি ভালো করেই জানি, তুই কী প্ল্যান করেছিস ভেবেচিন্তে তাও বুঝতে পেরেছি। আমার উচিত তোকে সাবধান করে দেওয়া, আমি কিন্তু কর্তালি করছি না। বাবু, আগেই বলে রাখলাম। আমার যা বলার আছে বলছি, শুনে তুই যা ভালো বুঝবি করবি, আমি আর কথাটিও কইতে আসব না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে তার এই লম্বা ভূমিকায় গোবিন্দ আরও ভড়কে গেল। দাদাকে সে এতটুকু গ্ৰাহ্য করে না-কেন করবে ? কিন্তু যতই হােক এম এ পাস করা দাদা তো, বোকাহাবা নয়। সে যখন