পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৪৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88o মানিক রচনাসমগ্র নরেন টের পায়, উপায় ও পরামর্শ চেয়ে মণ্ট কেবল তার কাছেই আসে না এবং মণ্টর পরীক্ষা পাসের সমস্যা একমাত্র তাকেই শুধু বিচলিত করেনি। পাড়ার প্রৌঢ় উকিল বিনোদ যেচে তাকে পড়িয়ে ফাস্ট করে দেবার দায়িত্ব নিয়েছে শুনে সে আশ্চর্য হয় না। বিনোদও স্কুলে ফাস্ট হত। খুবলে খুবলে প্ৰায় সব বিষয়ে বিদ্যাচর্চার একটা বেঁক আজও বজায় আছে, সাহিত্যচর্চার চেষ্টা পর্যন্ত মাঝে মাঝে চলে। বোধ হয়। এই জন্যই ওকালতিতে তেমন পশার জন্মেনি, কোনো রকমে চলে যায়। নরেনকে সে বলে, তুমি নাকি মণ্টকে বলেছ ভালো কোচিং ছাড়া ফাস্ট হওয়া যায় না ? খুব খাঁটি কথা। কিন্তু স্মীরের মাস্টার তো ভালো পড়ায় ? কিন্তু পড়ায় তো সমীরকে-সামীরের স্ট্যান্ডার্ডে ফাস্ট যে হবে তাকে ফাস্ট করার জন্য পড়াতে হবে। আমিই পড়ােব ভাবছি। দেখি যদি উতরে দিতে পারি। মনে হয় ছেলেটার ফিউচাব আছে। পারবেন ? এককালের ভালো ছাত্র এম এ, বি এল, বিনোদ আহত হয়ে বলে, একটা স্কুলের ছেলেকে পড়াতে পারব না ? সে রকম পারার কথা বলিনি। একটা ছেলেকে ভালো করে পড়ানো তো কম ঝঞাটের ব্যাপার a ক-টা মাস চালিয়ে দেব। নরেন মনে মনে ভাবে, ক-টা মাস নয়, চালিয়ে দিলেন, মন্ট উত্তরে গেল, কিন্তু তারপর কে চালাবে ? মুখে সে আর কিছুই বলে না। বিনোদ খুব উৎসাহ করে মন্টকে পড়াতে আরম্ভ করে। কিন্তু দুচারদিনেই টের পাওযা যায় যে নরেনের আশঙ্কটা মিথ্যা নয়, এককালের ভালো ছাত্র হলেও তাব দ্বারা এ কাজ হবে না। এমনিতেই অবশ্য তার অকাজের সীমা নেই। যেচে যেচে পাঁচজনের দায় ঘাড়ে নিয়ে আর পরের উপর অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই তাব দিন যায়। কিন্তু দেখা যায় মণ্টকে পড়াতে না পারার কারণ মোটেই সেটা নয়। সকালে বিকালে একঘণ্টা করে পড়বার সময় সে করে নেয়। কিন্তু পড়াতে গিয়ে টের পায়, ছেলে পড়ানোটা একেবারেই তার ধাতে নেই। মণ্টকে পড়াতে হলে তাকে বেশ কিছুদিন খেটে খুটে ছেলে পড়ানো শিখতে হবে। এ তো বিদ্যা বা জ্ঞানলাভ নয়-কতগুলি বই পড়ে ছেলেদের পরীক্ষা পাস করার উদ্ভট ব্যবস্থা। বই পড়ানো আর পরীক্ষা সবই যেন একেবারে উদ্ভট আর জটিল এক জগাখিচুড়ি ব্যাপার। সেই কবে এককালে স্কুলে এ সব পড়েছিল, এতকাল পরে কি কিছু মনে থাকে ? ক’ত কিছু অদলবদলও হয়ে গেছে। नों बांदा, अभिांश छोड़ों श्ल मा। তবে বিনোদ জেদি মানুষ। নিজে পড়াতে না পারলেও মন্টর জন্য অন্য কোনো ব্যবস্থা নিশ্চয় সে করে দিত। হঠাৎ সে চলে গেল জেলে। শহরে সেদিন হরতাল হবে। বিনোদ রাজনীতি নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাত না। কিন্তু হরতালটা। ডাকা হয়েছিল ভাতকাপড়ের দাবিতে। চাবিদিকে ভাতকাপড়ের অভাবে মানুষ কীরকম অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ভালো করেই সেটা তার নজরে পড়ছিল।