পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৪৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8GS মানিক রচনাসমগ্ৰ নইলে সে কি আসত ? এ তো শখ বা সুখের বেড়াতে আসা নয় বাপের বাড়িতে ! ঝগড়া করে টাকা আদায় করতে আসা। মনেপ্ৰাণে অশোকের পক্ষে না থাকলে, দুজনে মিলে এসে এ রকম ঝগড়া করে টাকা আদায়ের পরামর্শ না করে থাকলে-বিষের চেয়ে তিতো এই বাপের বাড়ি আসা সে কি মেনে নিত ? অথবা অশোক তাকে কান ধরে টেনে এনেছে ? সে ভয়ে এসেছে ? অশোকের চাকরির পয়সায় সারাজীবন তাকে খেতে পরতে হবে জেনে এত বড়ো ব্যাপারে তাকে চট্যাবার আতঙ্কের তলে চাপা পড়ে গেছে বাপ-ভায়ের জন্য তার স্বাভাবিক সমর্থন ও সমবেদনা ? কলহে একটু টিল পড়েছে বোঝা যায়। চেঁচামেচি কমিয়ে সকলেই একটু ভাববার চেষ্টা করছে, উপায় কী, মীমাংসা কী, এখন কী করা যায় ! নন্দন মৃদুস্বরে বলে, তুমি অশোককে একটু বুঝিয়ে বলতে পারলে না। সন্ধ্যা ? রাগ কোরো না, আমার কোনো কথা বলার অধিকার নেই জানি। একদিন ছেলেমানুষি ভালোবাসা হয়েছিল বলেই বিয়ের পরেও তোমাকে উপদেশ দেওয়া চলে না। সন্ধ্যাও মৃদুস্বরে বলে, ও সব কথা থাক না। কী জ্বালায় আছি তুমি বুঝবে কী। একলা মানুষ, চাকরি কর আর সাধ মিটিয়ে স্মৃর্তি করে বেড়াও। থাক, থাক, ও সব আমি জানি, আমায় বলতে হবে না,-আমার জন্য বিয়ে করনি বলতে যাচ্ছিলে তো ? ও সব ফকির কথার মানে আমি জেনে গিয়েছি। চাকরি করে মাইনে পাবার স্বাদ আজও পাইনি সন্ধ্যা। একটা মাসের জন্যও পাইনি। মুখ না ফিরিয়েও কণ্ঠে বিস্ময় ও তিরস্কার ধ্বনিত করে সন্ধ্যা বলে, সত্যি ? আমার জন্যে নয় 65 ? 疹 সন্ধ্যার কথা শুনে মনে মনে নন্দনের হাসি পায়। তাকে পায়নি বলে সে চাকরি পর্যন্ত বর্জন করেছে। এ কথাটার কোনো মানে নেই -কথাটা বলার একটা মানে আছে। সংসারের ঝঞ্ঝাটে নিজে সন্ধ্যা পেকে গিয়েছে, তাদের এককালের ভালোবাসার ফাঁকি আর ছেলেমানুষি বুঝে গিয়েছে-কিন্তু তাকে সন্ধ্যা ধরে রেখেছে আগের দিনের সেই রকম ছেলেমানুষটি বলে। তাই সন্ধ্যা বলতে পেরেছে কথাটা-তারই জন্য সে চাকরি করা বাদ দিয়ে সন্ন্যাসী হয়নি No p ওদিকে ঝগড়াঝাঁটিটা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে টের পেয়ে নন্দন স্বস্তি বোধ করে। এখন মিনিট দশ-পনেরো ওরা খাওয়াখাওয়ি করবে। সন্ধ্যার সঙ্গে চরম অবোঝা-অবুঝির একটু ফয়সালা করার সুযোগ সে পাবে কিছুক্ষণ। সে যে থেকেছে, এটা সন্ধ্যাকে বুঝিয়ে দিলে নিজের প্রাণটা তো তার একটু হালকা হবে ! ওরা ওদিকে ঝগড়া করুক, পরস্পরকে যারা বাঁচাবে তারা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া কবুক-এই ঝগড়ার ভিতর থেকেই বেরিয়ে আসবে। আগামী দিনের মিল-আমি বঁচিলে তুমি বঁচবে, তুমি বঁচিলে আমি বঁচিব, বাঁচার এই খাঁটি নীতি । সে বলে তোমার আশ্চর্য বোধশক্তি দেখেই তোমায় ভালোবেসেছিলাম। তুমি বোধ হয় ভাব, ভালোবাসাটা অনিয়মে ঘটে, এলোমেলো উলট-পালটে যথেচ্ছ নিয়মে ঘটে ! এ জগতে ওটা আজ পর্যন্ত ঘটেনি। পেটের খিদে আর প্রাণের ভালোবাসা এক নিয়মে চলে এসেছে।