পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৪৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*० 8 es চাকরি খুইয়েও মণ্টকে সে পড়াচ্ছিল বলে আরও বেশি রাগ হয়েছিল বাড়ির সকলের। ঝাল ঝাড়বার সুযোগ জুটছিল না। ছেলেপিড়ানোর কাজও কী করতে পার না ? দুটাে পয়সা আসে ? জুটিয়ে দিন না ! একটা বেয়ারার কাজ পেলে এখুনি নিয়ে নিই, টিউশনি খুঁজছি না ভাবছেন ? তারিণী তখন আর কিছু বলেনি। ছেলেব চাকরির জন্য সে-ও প্ৰাণপণে চেষ্টা শুরু কবেছিল, এবার একটা টিউশনি জুটিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগে গিয়েছিল। রবিবার সকালে বাইরে থেকে বাড়ি ফিরেই তারিণী বলে, ভূপেশীবাবুকে ধরেছিলাম, উনি তোমায় রাখতে রাজি হয়েছেন। সকাল বিকাল এক ঘণ্টা করে ছেলে আর মেয়েকে পড়াবে। ওঁর সঙ্গে আজকেই দেখা করে কথা বলে সব ঠিক করে আসবে। কত দেবেন ? পনেরো টাকা ? দু-বেলা পড়িয়ে পনেরো টাকা ? ছোটো ছেলেমেয়ে তো-নীচের ক্লাসে পড়ে। ওর বেশি দেবে না। এখন এতেই লেগে যাও, আবেটা তো খুঁজতেই হবে। ভূপেশীবাবুর না মাস্টার ছিল ? ওকে রাখবেন না । ভূপেশের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে গিয়ে তাকে ওই প্রশ্ন করলে সে বলে, হ্যা, মাস্টার আছেভালো পড়ায় না। দশ টাকায় পড়াচ্ছিল-আই এ ফেল। আমি ভাবলাম পাঁচ টাকা বাড়িয়েই দি, পাস করা একজন ওদের পড়াক । মনটা খুঁতখুঁত করে নরেনের। তাব জন্য একজনের কাজ যাবে ! সে-ও হয়তো তারই মতো বেকার। হয়তো এই দশটা টাকার টিউশনিটাই তার একমাত্র उञ् । কিন্তু সে কাজটা না নিলে কি কোনো উপকার হবে ও বেচারার ? ভূপেশ পাস করা মাস্টার চায়। আরেকজন পাস করা বেকারকে সস্তায় পেলেই ভূপেশ ওকে বিদায় করে দেবে। হরিপদ তার আসন্ন বিপদের খবর পায় তার ছেলেমানুষ ছাত্রছাত্রীর কাছে। বাড়িতে মাস্টার বদলের আলোচনা শুনে তাদের মন খারাপ হয়ে গেছে। ন-বছরের উমা বলে, আপনিই থাকুন মাস্টারমশাই ? আপনার কাছে পড়তে ভালো লাগে। তোমার বাবা না রাখলে কী করে থাকিব ? তারা স্নানমুখে ছলছল চোখে চেয়ে থাকে ! রাত্রে হরিপদ নরেনের কাছে যায়। কোনো ভূমিকা না করে সোজাসুজি বলে, এটা কী আপনার উচিত হচ্ছে দাদা ? নিজেকে নিচু করে একজনের চাকরি খাওয়া ? হরিপদীর বয়স তার চেয়ে অনেক কম। বোধ হয় দু-একবছরের মধ্যেই আই এ ফেল করে পড়া ছাড়তে হয়েছে। নরেন বলে, আমার কী দোষ বলে ? ছেলেমেয়ের জন্য ভূপেশীবাবু বি এ পাস মাস্টার চান। চান বলেই আপনি যাবেন ? গ্র্যাজুয়েট হয়ে পনেরো টাকায় দুবেলা পড়াতে রাজি হয়ে আমার চাকরিটা খাবেন ? উচিতমতো বেতন দিত, আপনি পড়াতেন, আমার কিছু বলার থাকত না। আপনি গ্র্যাজুয়েট হয়েও এত সস্তায় যাচ্ছেন বলেই তো আমাকে তাড়াচ্ছে। তুমিও তো সস্তায় পড়ােচ্ছ-দশ টাকায় দুবেলা।