পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৫১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

GSVe মানিক রচনাসমগ্ৰ আশা করবে। সুদিনের। আপশোশও করবে। এত লেখাপড়া শিখে সংসারের জন্য কিছুই সে করতে পারে না-এ আপশোশ ঘুচবার নয়। তবে এ আপশোশের ঝাঁঝ আর তেমন আর লাগবে না, সহ্য হয়ে গেছে। একসঙ্গে কয়েকটা বইয়ের পুফ দেখার সুযোগ পেলে নিজে কষ্ট করে থেকে দু-পাঁচটাকা মাঝে মাঝে হয়তো দিতেও পারবে সংসারে। বাড়ি ফিরবে ঠিক করে নরেন ভাবে, কই খুশি হওয়া তো গেল না ? প্ৰাণের জ্বালা তো কমল aft || ? নিজের প্রাণকেই সে যেন বলে, খুশি হওয়া যায় কী ? তোমার জ্বালা কমে কি ? কোনোমতে ঠেকনা দিয়ে টিকে থাকা কী মানুষের জীবন যে খুশি হওয়া যাবে, জ্বালা জুড়োবে ? তল্পিতল্পা গুটিয়ে নরেনকে বাড়ি ফিরতে দেখে সকলেই খুশি হয়। এতদিন দেখা করতে এলে সকলে তার কাছে অপরাধী সেজে থেকে যে রকম আড়ষ্টভাবে কথাবার্তা বলত, বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যে তার অনেকখানিই যেন উপে যায় ! এটাও হিসাব করেছিল নরেন। ভিন্ন বেঁধে খাক, একবাড়িতে একসঙ্গে বাস করার জন্যই সহজ স্বাভাবিক হয়ে আসবে সকলের ব্যবহার। তাকে রান্নার আয়োজন করতে দেখে। উষা হাসিমুখে খুশির সঙ্গে বলে, উপোেস ঠেকানোর ব্যবস্থা করে এসেছ জানি ! নইলে তুমি আসতে না। তারপর বলে, আমি রোধে দিলে কোনো দোষ আছে ? নরেন একটু ভেবে বলে, একটা কথা মেনে নিলে দোষ নেই। কী কথা বলে। ঘাসপাতা যা রাঁধতে দেব, মুখ বুজে বেঁধে দেবে। এই দিয়ে কী করে খাবে, এতটুকুতে কী করে। পেট ভরবে, এ সব দরদের কথা মুখে আনতে পাবে না। উষা স্থিরদৃষ্টিতে কয়েক মুহূর্ত তার মুখের দিকে চেয়ে থেকে বলে, তাই হবে। ভেবেছ পারব। না ? দেখে নিয়ো-আমি তোমারই বোন ! মাধবের সঙ্গে নরেনের দেখাসাক্ষাৎ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। বইটা উপলক্ষ করে নয়, মাধব তাকে আরেকটা কাজ দিয়েছে বলে। মাধব তাকে একদিন বলে, বই ছাপাতে হেল্প করে মজুরি নিতে অপমান বোধ করেননি বলেই সাহস করে বলছি। পয়সা নিয়ে অন্যভাবে আমাকে একটু হেল্প করুন না ? বলুন। কতকগুলি কাজ আছে যাতে অনেক সময় চলে যায়। অথচ আমি নিজে না করলেও চলে, অন্যে করে দিতে পারে। যেমন ধরুন, একটা পার্টিকুলার পয়েন্ট নিয়ে একটা বইয়ে কোথায় কী বলা হয়েছে জানতে চাই, বইটা আমার পড়ার দরকার নেই। কিন্তু আমাকে বইটা আগাগোড়া ঘাঁটতে হয়। এ রকম আরও কতগুলি কাজ আছে, আপনি যা অনায়াসে করে দিতে পারেন। একটা কোটেশন চাই, কতকগুলি ফ্যাকস অ্যান্ড ফিগারস চাই মাধব থামতেই নরেন বলে, কাজ বুলেছি--তারপর বলুন। পুরো মাইনে দিয়ে অ্যাসিস্টেন্ট রাখার শিক্ষমতা আমার নেই। তাছাড়া দুদিন হয়তো এমন কাজ করব যে এ রকম হেল্প মোটেই দরকার হবে না। আপনি যদি সপ্তাহে তিন দিন কী চার দিন আসেন, দু-তিনঘন্টা আমার এই কাজগুলি করে যান