পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 মানিক বচনাসমগ্ৰ শুভ ভিতরে ঢুকে বলে, বাইরে দাঁড়িয়ে চুপিচুপি তোমাদেব কথা শুনছিলাম, কিছু মনে কোরো না। চাষিদের জন্য মিটিং করলেই বাবাকে গাল দেওয়া হয় ? বাবার জন্যই চাষীদেব অবস্থা কাহিল। হয়েছে ? কৈলাস নীরবে একটা বিড়ি ধরায়। নন্দ যেন তাকে সাস্তুনা দেবার জন্যই বলে, একা তোমার বাবাব জন্য নয়। আরও কতজনে কতভাবে গরিব চাষির দফা নিকেশ করছে ! ধরণী মোটব চাপে না, সেকেলে চালচলন, খুব ধাৰ্মিক লোক। পারলে ওকে কুটিকুটি কবে ছিড়ে ফেললেও বোধ হয়। চাষিদের গায্যের জ্বালা মিটবে না। একটু ভেবেই নন্দ যোগ দেয়, একদিন সকালের দিকে ধরণীর বাড়িব দিকে যাও না বেড়াতে বেড়াতে ? কারও ঘরে ধান নেই, ঘাড় মটকাতে দেবার জন্য কীভাবে লোকে ভিড় করে গিযে ধন্না দেয় দেখতে পাবে। খানিকটা টেরও পাবে লোকের প্রাণে এত জ্বালা কেন। কৈলাস মাথা নেড়ে বলে, তুমি তো বেশ পবামর্শ দিলে ডাক্তার ! উনি গেলে কি আর টের পাবেন ? ওরা সব চুপ করে যাবে, ধরণী ওনাকে সম্মান করতে ব্যস্ত হবে। একটু বেশিক্ষণ বসলে সেদিনকার মতো হয়তো খেদিয়েই দেবে সকলকে। কার্জ না পেযে সবাই ওনার ওপব চটে যাবে। न्न् ब्, ऊ । শুভ গভীর মুখে আপশোশ করে বলে, ওই তো হয়েছে মুশকিল। নিজে দেখে শুনে সব জানতে আমার এত ইচ্ছে কিন্তু কাছে ঘোষবাব উপায নেই। শামুকের মতো খোলাব মধ্যে নিজেকে গুটিযে নেবে। একেবারে ছাপ মারা হয়ে গেছি। কৈলাস মনে মনে ভাবে, কেন, বাংলা দেশে আর গা নেই, তোমায, যেখানে কেউ চেনে না ? গরিব সেজে ঘুবে এসো না দুটাে দিন, এতই যদি জানবাব ইচ্ছে। যেটুকু দেখবে শুনবে তাতেই চােখ ছানাবড়া হযে, যাবে না তোমার ! . তবু তার জানিবার বুঝবার ইচ্ছােটাকে স্বীকার না কবে কৈলাস পাবে না। শখের কৌতুহল হতে পারে। তা হােক। সেটুকুই বা কজনের আছে শুভব মতো মানুষের ! খানিক চুপচাপ থেকে সে হঠাৎ প্রশ্ন কবে, এক কাজ কববেন ? চাষিরা নিজেদেব মধ্যে কী বলাবলি কবে আপনাকে শোনাতে পারি। কৈলাসের বুদ্ধিটা সহজ। মানুষের দাঁড়িযেছে একান্ত কহিল অবস্থা, ঘবে ঘরে ধান নেই, ধারণী সুদ বাড়িয়েই যাচ্ছে। লোচনের বাড়িতে আশেপাশের দুঃস্থ চাষিদের একটা বৈঠক হবে পরামর্শ করার জন্য-ধরণীর সুদের বাড়টা ঠেকাবার কোনো উপায় যদি খুঁজে পাওয়া যায়। তা, শুভ ইচ্ছা করলে বৈঠকটা কৈলাস লোচনের বাড়ির বদলে নন্দর ডিসপেনসাবির দাওযান্য বসাবার ব্যবস্থা করতে পারে। শুভ আগে থেকে এসে ভেতরে বসে থাকবে। দাওয়ার কথাবার্তা ভেতর থেকে অনায়াসে শুনতে পাবে। কিন্তু একটু সাবধান থাকতে হবে আপনাকে । কেউ না টের পায়। বৈঠকটা পণ্ড হয়ে যাবে। শুভর মুখ লাল হয়ে উঠেছে দেখে নন্দ তাড়াতাড়ি বলে, কী ছেলেমানুষের মতো কথা বলছি কৈলাসদা ! শুভ বলে, চোরের মতো লুকিয়ে কথা শুনতে হবে ? স্পাইয়ের মতো ? আপনার গেয়ো মাথায় বুদ্ধি এসেছে ভালো ! সে আপনার বিবেচনা। চাষিরা প্ৰাণ খুলে কথা কইবে আর আপনি শুনবেন—এ ভাবে ছাড়া তা হয় না। মনে মনে কৈলাস যোগ দেয়, কস্মিনকালে হবেও না !