পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতিকথার পরের কথা 9ܪ কৰ্জ ? তা বেশ। ফজলু মিঞার খবর কী? তেনা ভালো আছেন। তা, তেনা কাত্তিকে দেড়ভাগি আপিস চান তাই আপনার কাছে এয়েছি। বটে ? তা বেশ। কাত্তিকে দেড়ভাগি অন্যায়। জুলুম বটে।-ধারণী যেন মাটির পৃথিবীতে ফিরে আসে হঠাৎ, মুখটা দেখায় গভীর : ইন্দ্ৰ, ধান কি আছে কার্জ দেবার মতো ? কিছু আছে। অল্প-স্বল্প দেয়া যায়। তখন ধারণী বলে, শোনো বলি, কাত্তিকে দেড়ভাগি চাইব না। আমি, আমার বাপু বিবেক আছে। ও সব গোলমালে কােজ নেই। ধানের বাজার-দরে ধান দেব, টাকায় সুদ ধরব-ধারণী গলা খাঁকরায়,-সুদখোর মহাজন হলে আট আনা ধািবত, চাের আনা দিয়ে, তাই ঢের। শুনে স্তম্ভিত হয়ে যায় উপস্থিত সকলে। সকলে মরিয়া হয়ে প্ৰাণপণে নাড়াচাড়া করে প্রস্তাবটা মনে মনে, বোকা চাষাভুসো মানুষ, কথাটার যে মানে বুঝেছে তা হয়তো ভুল, হয়তো অন্য মনে VECE তোরাব বলে, কত্তা ? রাজেন দাস বলে, এটা কী বলছেন ? কেন ?-ধারণী আশ্চর্য হয়ে যায়,--দেড়ভাগিতে মনে আধমান সুদ দিতে হত তোমাদের, vাকায় আট আনা। আমি কি চামার, মাসে আট আনা সুদ চাইব ? চলতি দরের হিসেবে টাকার খাত দিয়ে ধান নাও, চাের আনা সুন্দ দেবে, টাকায় বা ধানে যা তোমাদের খুশি । ধানে শোধ দিলে--? সংশয়ভরে প্রশ্ন করে একজন। ধানেই দিয়ো, নির্কিকারভাবে বলে ধরণী, টাকায় চার আনা ধরে দর হিসেবে ধানেই দিয়ো। এবােব জ্বালা বোধ করে সকলে। এতই বোকা ঠাউরেছে তাদের ধরণী, তরফদার ? আজি ধানের দর কোথায় ফসল ওঠার আগে, ফসল উঠলে তা কোথায় নেমে যাবে। চার আনা সুদ !-বিনা সুদে এই কড়ারে ধান কার্জ নিলে দেড়ভাগি হিসাবেরও অনেক গুণ বেশি ফিরিয়ে দিতে হবে ধরণীকে। ব্যাটা ধড়িবাজ ডাকাত । রাখাল বলে, আজকের চোরাবাজারি দরে মোরা ধণ' নিতে পারি কত্তা ? চাের আনা সুদে ? তবে দেড় ভাগি হিসেবে নাও। পুলিন যেন হাঁফ ছাড়ে, ধরণীর চলতি দরের হিসাবে কার্জ দেবার প্রস্তাব শূনে তার মাথা ঘুরে গিয়েছিল ! তাই দেন, কত্তা তাই দেন। রও দাদা, রও। তাড়ফিয়ো না অত।--তোরাব বলে ধমক দিয়ে, দেড়া ভাগির কার্জ মোরা ছোেব। না কেউ । বােট না কি ? মুচকে হাসে ধরণী, তুমি দেখছি নেতা হয়ে উঠেছ তোরাব। তা হাম্বিতম্বিটা ফজলু মিঞার হােতা করলে হত না ? জাতভাই ছিল, তারিফ করত ? গরিব চাষার জাতভাই ! তোরাবের এই কথার পিঠে কথা চাপিয়ে খোঁচা দেবার স্পর্ধায় অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়ে ধারণী দুবার গলা-খাঁকারি দিয়ে গভীর মুখে তামাক টানতে থাকে। তার ভাবটা এই যে, এতই যদি তেজ তোমাদের, আমার কাছে এলে কেন বাপু ? এক কাজ কেন করেন না। সামন্ত মশায় ? রাজেন দাস বলে মধ্যাস্থের ভঙ্গিতে, ছ-আনা মেনে নেন। দেড়পো ৬াগেই ধানটা দিয়ে প্ৰাণটা বাঁচান গরিবদের। আপনার কথাও থাক মোদের কথাও থাক । বাজারে যেন দর্য করছে জিনিসের !