পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র অষ্টম খণ্ড.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতিকথার পরের কথা ܬܬ আকাশে রাত্রিব ছাযা বুপ নিতে শুবু করেছে। কাছে ও দূরে শাঁখ বাজতে আরম্ভ করেছে। ডিসপেনসারির কেরাসিনের টাঙানো ল্যাম্পটা জুলিয়ে এনে গঙ্গা শুভকে বলে যায়, যাবেন না। চা আনছি। শুভ বলে, তবে কি বলতে চাও সুখীনদেব সঙ্গে পাল্লা দিতে পাবিব না ? নন্দ বলে, কেন পারবে না ? তবে ওই যে সস্তা বাসন বানিয়ে ওদের কাবু করবে। ভাবিছ, ওভাবে পাববে না। তুমি নানা প্যাটার্নের বাসন গড়বে, তোমার সব বাসন সমান নিখুঁত হবে, লোকে চোখ বুজে তোমার বাসন। কিনতে ভরসা পাবে। কিন্তু ওদেব ক্ষতি করলেও একেবারে হটাতে পারবে না। কেন ? জিনিসটা বাসন বলে, সস্তা বাসন দিতে পারবে না বলে। মস্ত গয়নার দোকানের পাশে স্যাকারাব কতটুকু ছোটাে দোকানও চলে দেখেছি তো ? বড়ো দোকানে কত প্যাটার্নের গয়না, লোকে কত নিশ্চিন্ত মনে কিনতে পারে যে এখানে ঠকবে না। তবু ছোটাে স্যাকরার দোকান উচ্ছেদ হয়নি। বড়ো দােকান অনেক কিছু পারে, শুধু কম দামে গয়না দিতে পারে না। তার দাম বরং কিছু বেশিই হয়। কাপড়ের মিল তাঁতিদের শেষ করেছে, গয়না বা বাসনের মিল করে স্যাকরা বা কঁসারিদের শেষ ধরা যায়নি। শুভ চুপ করে কথাটা ভাবে। কাল এই ভবাসা দেওয়া চলবে সুখনদের ! শেষ হবে স্যাকরারা। আর কাসাবিবা শেষ হবে তোমাবা বৈজ্ঞানিকরা যেদিন কাসার চেয়ে সস্তা। কিন্তু কাসার মতো টেকসই বাসন দিতে পারবে। একটা কঁাসার বাসনে একজনের জীবন কেটে যায়। ofSofi 5 CF (3 দুজনকে কাপে দিয়ে নিজে চলাটা-ওঠা কলাই-করা গ্লাসটা নিয়ে রোগীদের বেঞ্চটাতে বসে। সে প্ৰায সব কথাই শুনেছে দুজনেব। কথা শোনার জন্য ভিতরের দরজার কাছে বসে ল্যাম্প সাফ কবেছে, চাও করেছে। ওইখানে বসে। বিলাতফেবত একজন বৈজ্ঞানিক আব্ব একজন ডাক্তার এতক্ষণ ধবে মশগুল হয়ে খুঁটিযে খুটিয়ে পিতল কাসা ঘটিবাটি টি। য়ে আলাপ কবতে পারে-এটা উদ্ভট ঠেকছিল গঙগাব কাছে। চিনামাটিব কাপে চুমুক দিতে দিতে শুভ বাববার তাব হাতের কলাই কবা গেলাসটার দিকে তাকাচ্ছে দেখে গঙ্গাব প্ৰায় হাসি পেয়ে যায়। কী চিস্তাক্লিষ্ট গুরুগম্ভীর। এই অবিবাহিত ছেলেমানুষটা ! জমিদারের ছেলে বলে কী ? স্বামীর ঘবে থাকার সময় প্রায় এই বয়সি আরেকজন জমিদারের ছেলেকে সে কযেকবার দেখেছে, বাইবে রাত কাটাবার জন্য তাব স্বামীকে যার দরকার হত। সে ছিল হালকা হাসিখুশিতে উজ্জ্বল তামাশাপ্রিয় আর সাপের মতো বজাত। তার হাত ধরে টানার কথা বোকামি করে স্বামীকে বলে দিয়েছিল বলে স্বামীকে দিয়েই কত লাথি যে সে বজাতটা তাকে খাইয়েছিল প্ৰতিশোধ নিতে ! তার সামনেই অমৃত জিজ্ঞাসা কবেছিল, তুমি নাকি কাল ওর হাত ধরে টেনেছ ? সীেমেন অম্লান বদনে হেসে বলেছিল, বউদির সঙ্গে তামাশা কবছিলাম। রাগ করেছ নাকি तऐंठेनि ? অমৃত মন্তব্য করেছিল, মেয়েমানুষের মন তো নয়, আস্তাকুঁড়। সীেমেন চলে যাওয়ামাত্র অমৃত একটা লাথি মেরেছিল তাকে। শুভ সীেমেনের মতো নয়। ওর মুখ দেখলে কন্যাদায়গ্ৰস্ত বিপন্ন বুড়োর কথা মনে পড়ে যায়।