পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S obr মানিক রচনাসমগ্র সুকুমারীর সর্বাঙ্গ শিহরিয়া ওঠে, এক মুহূর্তে তার এতক্ষণের সমস্ত জানা যেন বাতিল হইয়া যায়। চোখে একটু জল দেখিবামাত্র রাগ কমিয়া গিয়াছে । দাদাকে পরামর্শ দিয়া অপমান করানোর মতো আমাজনীয় অপরাধের জন্য যে রাগ হইয়াছিল। এমন গভীর মায়া তার জন্য তার স্বামীর, আর সে এতক্ষণ সন্দেহ করিয়া মরিতেছিল কিছুই তার আস্তরিক নয় ! চোখের পলকে উঠিয়া সুকুমারী নিবারণের পা চাপিয়া ধরে।---আমায় মাপ করো আমি বড় অন্যায় করেছি। নিবারণ অবশ্য তখন তাকে বুকে তুলিয়া নেয়।--তোমার জুর তো বেড়েছে দেখছি। জ্বর বেড়েছে ? গা গরম হয়েছে আমার ? বেশ গরম হয়েছে। দাড়াও, একবার থামোমিটার দিয়ে দেখি । থামোমিটারে দেখা যায়, সত্যই সুকুমারীর জুর হইয়াছে, প্রায় একশোর কাছাকাছি। থামোমিটারটি রাখিয়া আসিয়া নিবারণ সুকুমারীর গায়ে আদর করিয়া হাত বুলাইয়া দেয়। সুকুমারী আরামে চোখে বোজে। নিবারণ বলে, আমার সত্যি রাগ হয়েছিল। রাগ করে থাকতে পারলাম না কেন জানো ? সুকুমারী নীরবে মাথাটা একটু কান্ত করে। মনে মনে বলে, জানি, আমায় ভালোবাস বলে। আবার প্রায় কানের সঙ্গে মুখ লাগাইয়া অতি মৃদুস্বরে নিবারণ বলে, আজ জানতে পারলাম কিনা তোমার খোকা হবে, জানা মাত্র সব রাগ কেমন জল হয়ে গেল। ধীরে ধীরে চোখ মেলিয়া সুকুমারী বিস্ফোরিত চোখে স্বামীর মুখের দিকে চাহিয়া থাকে, জানা মাত্র সব রাগ জল হয়ে গেল ! এই তবে নিবারণের ক্ষমা করিবার কারণ। যে খোকার মা হইবে তার গুরুতর অপরাধও ক্ষমা করিতে হয় ! গায়ের চামড়া বড়ো চড়াচড় করিতে থাকে সুকুমারীর, যেখানে যেখানে নিবারণের হাত বুলানোয় এতক্ষণ আরামের সীমা ছিল না। পেটটো জ্বালা করিতে থাকে। মুখটা তিতো লাগে। মাথাটা ঘুরিতে থাকে। হঠাৎ সে করে কী, নিবারণকে দু-হাতে ঠেলিয়া দিয়া ছুটিয়া খোলা ছাদে চলিয়া যায়। ক্ষীণ চাদের আলোয় মিস্ত্রিরা ঘরের যে গাঁথনি আরম্ভ করিয়াছিল অস্পষ্ট হইলেও দেখা যাইতেছিল। তবু সেই হাতখানেক উঁচু গাঁথনিতে হােঁচট খাইয়া সুকুমারী দাড়াম করিয়া পড়িয়া যায়।