পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S S tr মানিক রচনাসমগ্ৰ ঠিক সেই সময় দুরুদুবু বুকে গভীর আগ্রহের সঙ্গে মাঠে রেলিং ঘোষিয়া এগারোটি ঘোড়ার মধ্যে একটির অগ্ৰগতি লক্ষ করিতে করিতে মাখন ভাবিতেছিল, এবারও না জিতিলে বিপদে পড়িবে বটে, কিন্তু যদি জেতে সন্ধ্যার পর ঘোড়দৌড়ের মাঠ হইতে বন্ধু অবনীর সঙ্গে শ্ৰান্ত ক্লাস্ত মাখন ফিরিয়া আসে। সুরেশের মতো অবনী এখন তার অন্তরঙ্গ বন্ধু। মানুষটা সে একটু বেঁটে, রোগা লাজুক আর ভীৰু। কথার জবাবে পারিলে কথা বলার বদলে মৃদু একটু হাসিয়াই কাজ সারে। কখনও কেউ তাকে উত্তেজিত হইতে দেখিয়াছে কিনা সন্দেহ। ঘোড়া ছুটিবার সময় মাখন যখন আগ্রহে উত্তেজনায় বঁহাতের বুড়ো আঙুলটা কামড়াইতে থাকে, অবনী নিবিকারভাবে বিড়ি টানিয়া যায়। জিতিলে মাখন তুররে বলিয়া প্রচণ্ড একটা চিৎকার করিয়া লাফাইয়া ওঠে, হারিলে ঝিমাইয়া পড়ে। অবনী জিতিলেও মৃদু একটু হাসে, হারিলেও হাসে। নলিনীর সাজপোশাক দেখিয়া দুজনেই একটু অবাক হইয়া যায়। ফ্যাশন করিয়া শাড়ি পরিয়াছে, রঙিন ব্লাউজ গায়ে দিয়াছে, শুধু ঘষামাজায় খুশি না হইয়া গালে বোধ হয় একটু রঙের। আর চোখে একটু কাজলের ছোয়াচ দিয়াছে। মাখন বলে, কোথায় যাবে ? নলিনী একগাল হাসিয়া বলে, কোথায় আবার যাব । 6छ् 6 ? সেজেছি ? কী জ্বালা, কোথাও না গেলে বাড়িতে বুঝি ভূত সেজে থাকতে হবে ? তারপব অবনীর কাছে গিয়া বলে, সাইকে বুঝি তালা বন্ধ করে রাখেন, আসে না কেন ? অবনী নীরবে মৃদু একটু হাসে। চলুন সইয়ের সঙ্গে দেখা করে আসি। বলিয়া স্বামীর যে বন্ধুর সঙ্গে তিন হাত তফাতে দাঁড়াইয়া নলিনী সংক্ষেপে কথা বলিত, রীতিমতো তার হাত ধরিয়া তাকে টানিয়া তোলে এবং মাখনের দিকে এক নজব না। চাহিয়াই বাহির হইয়া যায়। প্ৰাণপণে চেষ্টা করিয়াও নলিনী ভিতরের উত্তেজনা গোপন করিতে পারে না। অবনীর বউ বলে, কী হয়েছে সই ? কিছু না। কোমরে আঁচল জড়াইয়া অবনীর বউ রান্না করিতেছিল। নলিনীর চেয়ে সে বয়সে বড়ো, কিন্তু বড়োই তাকে ছেলেমানুষ দেখায়। মানুষটা সে সব সময়েই হাসিখুশি, কাজ করিতে করিতে গুণগুণ করিয়া এখনও গান করে। তাকে দেখিলেই নলিনীর বড়ো হিংসা হয়, মনটা কেমন করিতে থাকে। ওর স্বামীও তো জুয়া খেলে, তার চেয়ে অনেক কষ্টেই ওকে সংসার চালাইতে হয়, দুটি ছেলের মধ্যে একটি ওর মরিয়া গিয়াছে, তবু সব সময় এমন ভাব দেখায় কেন, দুদিন আগে বিবাহ হইয়া আসিয়া স্বামীর আদরে মাটিতে যেন পা পড়িতেছে না ? অবনীর বউ বলে, এমন সোজগুজে হঠাৎ ? নলিনী বলে, এমনি এলাম তোমায় দেখতে ? কী ভাগ্যি আমার । ভাতের হাঁড়ি উনানে চাপাইয়া হাসিতে হাসিতে অবনীর বউ কাছে আসিয়া বসে ।