পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SSbr মানিক রচনাসমগ্র সত্যপ্রিয় নামিবামাত্র কয়েকটি চাপা গলায় উচ্চারিত হয়, ওই যে উনি, ওই যে উনি-কর্তা এসে গেছেন। জ্যোতির্ময়ের কাকা আর জ্যোতির্ময় অভ্যর্থনা করিবার জন্য আগাইয়া যায়। আর হাসিমুখে অগ্রসর হইয়া, নিজের আগমনটা সহজ করিয়া দিবার জন্য, নিজে তিনি যে কতদূর নিরহত্তকারী সরল সহজ মানুষ এটা প্রমাণ করার জন্য, সত্যপ্রিয় বলে, না, না, আপনারা ব্যস্ত হবেন না। আমারই তো অপরাধ হয়ে গেল, আমাদের জ্যোতির্ময়বাবুর বাড়ির কাজ, প্রথম থেকে এসে আমারই তো সব দেখাশোনা করা উচিত ছিল-বড়ো দেরি করে ফেললাম। তারপর জ্যোতির্ময়ের দিকে চাহিয়া, কেমন লাগছে জ্যোতির্ময়বাবু নববিবাহের স্বাদ ? মা-লক্ষ্মীকে দেখতে পাব তো ? বেশিক্ষণ থাকা তো উচিত হবে না, তাই ধীরে ধীরে সতপ্রিয় উপরের দিকে অগ্রসর হইতে থাকে, কিন্তু সমস্তক্ষণ হাসিমুখে এদিকে ওদিকে চাহিয়া দ্যাখে, নিবৃন্দবেগ শাস্তভাবে এর সঙ্গে ওর সঙ্গে কথা বলে, যেন তাড়াহুড়া কিছুই নাই, সে বহুক্ষণ থাকিবে। পিছনে পিছনে উপহার হাতে চলিতে থাকে ভূষণ। উপরে উঠিয়া নতুন বউয়ের সামনে দাঁড়াইয়া সানন্দ কণ্ঠে সত্যপ্রিয় বলে, বাঃ। বাঃ, সুন্দর মুখশ্ৰী, চমৎকার লাবণ্য। বেঁচে থাকো মা, সুখী হও । বলিয়া ভূষণবাবুর হাত হইতে মখমল মোড়া কেসটি লইয়া অপরাজিতার হাতে দেয়। এবার প্রত্যাবর্তনের পালা, অথচ ব্যস্ততা দেখাইলে চলিবে না। সুতরাং দূরের একজন পরিচিত দেখেছেন যোগেনবাবু ? আর কি আমরা জ্যোতির্ময়বাবুর দেখা পাব ? ঘরের টানে চাকরি ছেড়ে আমাদের না ডুবিয়ে দেন । পরিহাসের সুরে কথাগুলি বলিতে বলিতে সিঁড়ির দিকে আগাঁইয়া গিয়া তেমনই নিবুদবেগ, আচঞ্চল মন্থর গতিতে অবতরণ। কিছু খেতে হবে ? আপনি তো জানেন জ্যোতির্ময়বাবু, আমরা সেকেলে বামুন, সন্ধ্যাহিক না। করে কিছু খাই না। যে ভিড় কাজের, কখন বা বাড়ি ফিরি কখন বা সন্ধ্যাহিক করি। বেশ তো বেশ তো, সে জন্য কী, পাঠিয়ে দিন না বাড়িতে কী খাওয়াতে চান। সেকেলে মানুষের খাওয়াও জানেন তো--যাই পাঠান, দু-চার মনের নীচে যেন না নামে, দেখবেন। হাসিতে হাসিতে সত্যপ্রিয় গাড়িতে ऐठिंब्ल, छिं छांख्रिय़ा निव्न।। সত্যপ্রিয়ার নিমন্ত্রণ রক্ষার এই পদ্ধতির সঙ্গে জ্যোতির্ময়ের পরিচয় আছে, আরও দু-একটি বাড়িতে প্ৰায় এই রকমভাবেই সত্যপ্রিয়কে সে নিমন্ত্রণ রাখিতে দেখিয়াছে। কিন্তু একটা ব্যাপার সে আগে দ্যাখে নাই, সত্যপ্রিয়র এত দামি উপহার দেওয়া, কর্মচারীর বউকে। একটু পরেই তার কানে আসিল, সত্যপ্রিয় একটি নেকলেস দিয়া বউ দেখিয়াছে। চোখ ঝলসানো নেকলেস, হাজার দেড়েকের বেশিই দাম হইবে। বিস্ময়ে, আনন্দে অভিভূত হইয়া জ্যোতির্ময় নিজের চােখে দেখিতে গেল। দেখিয়া আরও বেশি অভিভূত হইয়া গেল। এ কী আশ্চর্য ব্যাপার ! সুবৰ্ণ আবার প্রায় আত্মহারা হইয়া বলিল, দেখেছ, যশোদা দিদি, দেখেছি ? যশোদা সংক্ষেপে বলিল, দেখেছি। সোজাসুজি চেনা না থাক, সত্যপ্ৰিয়র পরিচয় যশোদা কিছু কিছু জানে। এত দামি জিনিসের দাম না তুলিয়া কি সত্যপ্রিয় ছড়িবে ? হয়তো ইতিমধ্যেই কিছু দাম তুলিয়া নিয়াছে। যে খাটুনিটাই জ্যোতির্ময় খাটে, মানুষ হইয়া গাধার মতো। সকাল সকাল খাইয়া যশোদা বাড়ি ফিরিবে ভাবিয়াছিল, কিন্তু সেটা সম্ভব হইল না। মেয়েদের খাইতে বসানোর সময় এমনই বিশৃঙ্খল দেখা গেল চারিদিকে যে কখন মেয়েদের দেখিয়া শুনিয়া খাওয়ানোর ভারটা যশোদার ঘাড়ে আসিয়া চাপিয়া গেল সে নিজেই টের পাইল না, যশোদাকে