পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

b8、 মানিক রচনাসমগ্ৰ আরো নিষ্কর্মর টেকি, হাতায় করে হাঁড়ি থেকে ভাত তুলে থালায় দেবে, তাও পার না ? পালা তুই, ভাগ। নন্দকে রেহাই দিয়া যশোদা জিজ্ঞাসা করিল, কে কে খেয়েছে রে নন্দ ? নন্দ গড়গড় করিয়া বলিয়া গেল, কেষ্ট, বলাই আর যতীন। যশোদা একটু আশ্চর্য হইয়া বলিল, মতি আর সুধীর খায়নি ? কী হল। তবে আর দু-থালা ভাত, বেড়ে যে রেখে গেলাম পাঁচ থালা ? নন্দ বিব্রত হইযা এদিক ওদিক তাকায়, ওই তো খেয়ে গেল, ওরা! কারা ? মতি আর সুধীর ? दूँ। এটো থালা গোল কই ? যশোদার জেরায় কাবু হইয়া এবার নন্দ সব বলিয়া ফেলে। মতি আর সুধীরের ভাত খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র সুধীর তাড়াতাড়ি এটােকাটা সাফ করিয়া থালা দুটি মাজিয়া ধুইয়া রাখিয়া গিয়াছে আর নন্দকে বলিয়া গিয়াছে অনেক করিয়া যে, যেন যশোদাকে না বলে। খুব বুদ্ধিমান তো সুধীর ! —তুই না বললেও টের পেতে যেন আমার বাকি থাকত। বলিয়া যশোদা হাসিল । তারপর গভীর হইয়া ভৎসনার সুরে বলিল, পেটের জ্বালায় ওরা না হয় বারণ না মেনে খেয়ে গেল, বলবি না বলে তুই যে আমায় বলে দিলি বড়ো ? ধিক তোকে বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসের মান যে রাখে না মানষের মধ্যে তাকেই বলি সবচেয়ে হীন, চোর-জোচ্চোর ভালো তার চেযে। এ রকম সময়ে যশোদাকে বড়োই দুর্বোধ্য মনে হয়। কী যে তার মনের ভাব, রাগ সে সত্যই করিয়াছে না। সবটাই তার ভান, কিছুই বোঝা যায় না। হাসি-তামাশা করা চলে এমন একটা তুচ্ছ ব্যাপারে কথা দিয়া কথা রাখে নাই, তাও যশোদারই জোরালো জেবার ফাঁদে পড়িয়া, এটা কখনও নন্দর এতবড়ো অপরাধ বলিয়া যশোদা ভাবিতে পারে ? মুখ দেখিযা কথা শুনিয়া মনে হয়। কিন্তু তাই সে ভাবিতেছে ! R নন্দ ভয়ে ভয়ে বলে, তুমি যে জিজ্ঞেস করলে ? জিজ্ঞেস করব না ? জিজ্ঞেস তো আমি করবই-আমি কি গুনে জানি একজনের কাছে তুমি পিাতিজ্ঞে করেছ। আমায় কিছু বলবে না ? চুপ করে থাকতে পাবতে না তুমি ? চুপ করে থাকলেও তো তুমি বকতে। বকতাম তো কী হয়েছে ? পিতিজ্ঞে রক্ষার জন্যে মুখ বুজে একটু বকুনি যদি না সইতে পাের, তুমি মানুষ কীসের শুনি ? এক জায়গায় কাজ করে বটে, তবু মাতিব সঙ্গে সুধীরের বন্ধুত্ব হওয়াটা সত্যই বড়ো খাপছাড়া ব্যাপার। মতির চুলে পাক ধরিয়াছে, মানুষটা সে শাস্ত, ভীরু এবং একটু মতলবীবাজ। সুধীরের বয়স ত্রিশেরও কম, বেঁটে আর চওড়া শরীরটা তার লোহার মতো শক্ত, যেমন অশান্ত তেমনই নিষ্ঠুর তার প্রকৃতি এবং পৃথিবীর সকল গোয়ারের মতো সে বোকা। তবু মতির সঙ্গেই সুধীর ভিড়িয়া গিয়াছে, দুজনে একসঙ্গে হাসি-তামাশা গল্পগুজব করে, নেশা আর আমোদ করিতে যায়—দুটিতে যেন সমবয়সি ইয়ার। রাস্তায় পা দিয়াই সুধীর একগাল হাসিয়া বলিল, চাঁদের মাকে ফাঁকি দিয়ে কেমন দুজনে পেটপূজাটি সেরে এলাম মতিদা | ফাকি না তোর মাথা। আমরা যাতে খাই তাই জন্যে তো ও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল, তাও বুঝিাস না পাঠা ?