পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শহরতলি S8V বাটে নাকি, হঁয়া ? সুধীর বিস্মযে অভিভূত হইয়া গেল। এমন খাপছাড়া প্যাচালো দরদের ব্যাপারগুলি সে ভালো বুঝিতে পারে না। পবেবি সুখদুঃখের কথা যে সংসারে কেউ ভাবে এ ধারণাটাই তার কেমন অদ্ভুত ও অসম্ভব মনে হয়, জীবনেব অভিজ্ঞতার সঙ্গে খাপ খাইতে চায় না। তার সমস্ত জীবনটাই একটা একটানা পোষণের ইতিহাস, পরের আশ্রযে মানুষ হইযাছে, পরের অবজ্ঞা, উপেক্ষা, অন্ধ স্বার্থপরতা ও ক্ষমাহীন নির্মমতাকে জানিযাছে সংসারের স্বাভাবিক নিয়ম, সুস্থ শরীরে খাটিতে পারিলে জেলেও গিয়াছে। একবাবা অনেক কষ্টে কিছু টাকা জমাইযা বিবাহ করিয়াছিল, দু-মাসের মধ্যে বউট একজনের সঙ্গে উধাও হইয়া গিযাছে। তাব আগে এবং পাবে যে কযেকটি স্ত্রীলোকের সঙ্গে সে বাস করিযাছে, তাবা যেমন তাব কাছে প্ৰাণপণে আদায় করিয়াছে সেও তেমনি তাদের কাছে প্ৰাণপণে আদায্য করিযাছে। মানুষেবা সঙ্গে মানুষের যেভাবে হােক নিজের প্রাপ্য আদায় করার সহজ সরল সম্পর্কটা সুধীব বুঝিতে পাবে, আর কিছু তার মাথায় ঢেকে না। নিজেও সে চিরদিন নিজের সুখদুঃখ ভালোমন্দের হিসাব ছাড়া আব্ব কোনো হিসাব কবে নাই, অন্য কেউ এই হিসাব লইযা মাথা ঘামাইবে এ আশাও করে নাই। জীবনে যে কারও অকার্বণ দরদ পায় নাই এ জন্য তাব তাই কোনো আপশোশও নাই। হয়তো কখনও পাইয়াছিল দরদ, হয়তো মানুষকে দরদি করিবার সুযোগ আসিয়াছিল, কিন্তু সে বুঝিতেও পাবে নাই কী পাইতেছে, কীসের সুযোগ আসিয়াছে। কেহ তাহাকে কোনোদিন বুঝাইয়াও দেয় নাই, বুঝিতেও দেয় নাই। চলিতে চলিতে নানা কথা মনে হয় সুধীবোব। একটি দুটি কবিয়া যশোদার কতগুলি কাজের কথা মনে পড়ে, আজকেৰ আশ্চর্য ব্যবহাবের সঙ্গে যার কেমন যেন একটা মিল আছে। কিছুদিন আগে তার জুব হওযায যশোদা তাব সেবা করিষাছিল, খুবই সাধারণ সেবা, মাথাটা ধোয়াইয়া মুছিযা দেওয়া, জোব কবি যা বার্লি আর ওষুধ খাওয়ানো, আর কিছু নয়-তবু ও বকম সেবাও কি সুধীরকে যশোদা জবিমানাটা না দিলে জেলে যাইতে হইত। তারপর দু-একটাকা করিয়া মাস তিনেকের মধ্যে যশোদা প্ৰায দশ-বারোটাকা আদায্য করিষা নিখাছে বটে, কিন্তু খাচিয়া জরিমানার টাকা দিয়া কেউ কি সুধীবকে কোনোদিন জেল হইতে বাঁচাইয়াছে ? সত্যি বলছি মতিদা ? কী সত্যি বলিয়াছে মতি ? অ, যশোদার কথা ! সত্য বইকী, যশোদাকে তো চেনে না। সুধীর, ও সব সে বুঝিবে না। মেজাজটা একটু যা খাবাপ যশোদার, চেহাবাটাও হাতিব মতো, কিন্তু সকলের জন্য বড়ো মায়া যশোদার, আমন মেযেমানুষ হয় ? -একটা বিড়ি দে তো। গাটা কেমন করছে সুধীর, কালকের নেশােটা এখনও কাটেনি। विष्टि (नश्। দে না একটা ? কেমন ধারা মানুষ যেন তুই সুধীব্য। সুধীর বিরক্ত হইয়া বলিল, নেই তো দিব কোথা থেকে ? গড়াব ? একটা বিড়ির জন্যই দুজনের মধ্যে যেন মনোমালিন্য ঘটিবার উপক্ৰম হয। মতি খানিক আগে আর সুধীর খানিক পিছনে চলিতে থাকে। এত সকালেই বড়ো রাস্তায় গাড়ি আর মানুষের ভিড় হইতে আরম্ভ করিয়াছে। দশটা এগারোটার সময় এ রাস্তায় চলাই দুষ্কর হইয়া পড়ে। ঠেলা গাড়ি, মহিষের গাড়ি, লরি আর বাসের সংখ্যা বাড়িতে বাড়িতে এমন হইয়া দাঁড়ায় যে থাকিয়া থাকিয়া মোটরগাড়িকেও গোবুর গাড়ির সঙ্গে