পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শহরতলি SVS তার হাসিকান্না চাপা দিবার চেষ্টা করে। ঘবে তো এ বকম হয় না ? এখানে তবু মাথার উপরে আকাশ আছে, ঘরে শিক বসানো জানােলা ছাড়া কোথাও এতটুকু ফাক নাই। হয়তো ঘরের পক্ষে খাঁচা হওয়াটাই স্বাভাবিক বলিয়া পীড়ন করে না, উঠান। ফাকা হওয়া উচিত বলিয়া এখানকার সংকীর্ণতা বাগে পাইলেই যশোদার দম আটকাইয়া দিতে চায়। বাপরে বাপ-কী হাসাতেই পারে লোকটা। দাম আটকে মবলাম হাসতে হাসতে ! বলিয়া আব একটুও না হাসিয়া রান্নাঘরে ঢুকিয়া যশোদা আবার উনানে কড়াইটা চাপাইযা দেয। ভাবিতে থাকে যে, কী কুক্ষণে বেশি লোককে থাকতে দেবার জন্যে উঠানে ঘর তুলেছিলাম ! ঘর থেকে বেরিয়ে একটু হাঁপ ছাড়বার জায়গা নেই। এই কথা ভাবিয মনে মনে আপশোশ কবিতে করিতে চাদের কথা মনে পড়িয়া যশোদাব বড়ো কষ্ট হয়। প্রবল বন্যাব মতো যেভাবে হাসি আসিয়াছিল, সেইভাবে পুত্ৰশোক ভিতব হইতে ঠেলিয়া উঠিতে থাকে। কিন্তু এমন খাপছাড়া অদ্ভুত সংযম যশোদার যে, হাসি ঠেকাইতে না পারিলেও শোকটা অনায়াসে চাপিয়া রাখিযা বান্না করিয়া যায়। ধনঞ্জয়ের সঙ্গে এত হাসাহসি সুধীরের ভালো লাগে নাই, একফাকে সে যশোদাকে জিজ্ঞাসা করে, ওকে যে দালান ঘবে থাকতে দিলে, ড্রাড়া দিতে পারবে ? মতি কী বলছিল জান, ওর একটি কানাকড়ি সম্বল নেই। বেলের ইয়ার্ডে যশোদা সুধীরের একটি চাকরি করিয়া দিয়াছে। কাজটি ভালো, আগের চেয়ে সুধীরের উপার্জন বাড়িয়াছে। সুধীরেব গর্ব ও গৌরবের সীমা নাই। যশোদা বলে, তোমাব সে কথা ভাববাব দরকার ? কাজকর্ম হলেই সম্বল হবে। সুধীর সবজাস্তার মতো হাসিয়া বলে, হচ্ছে ! কাজ করার মতলব ও সব লোকের থাকে ? রোজগার কবলেও একটি পদ্যসা আদায় করতে পাবাবে ভেবেছ ? যদিন পারে থেকে তোমার ঘাড়টি StNe offri যশোদা রাগিয়া বলে, পালায় পালাবে, তোমাব কী ক্ষেতি হবে শুনি ? তোমাবা বড়ো বাকি বেখেছি আমাৰ ঘাড় ভাঙতে । কতগুনে টাকা পাব তোমার কাছে একবারটি মনে পড়ে ? শুনিয়া অপমানে মুখ কালো কবিয়া সুধীব সবিন্যা যায়। শত্ৰু অকথ্য গাল দিলেও সুধীরের এ রকম অপমান বোধ হইত না, আপনজনেব মতো ভালো পৰামর্শ দিতে আসিয়া এ রকম আঘাত খাইলে মানুষের সহ্য হয় y মনে মনে গর্জাহিতে গর্জাইতে : শীর ভাবে কী, এ মাসের বেতনটা একবার হাতে পাইলে হয, যশোদার একটি পয়সা বাকি রাখিবে না। কিন্তু একমাসের বেতনে তো কুলাইবে না ! যশোদার কাছে সে যে অনেক টাকা ধাবে ! যশোদাব পাওনাটা অবিলম্বে সংগ্ৰহ কবিয়া তার গায়ের উপর ছুড়িয়া ফেলিয়া দিলাব সুখটা অনুভব কবিবার আগ্রহে কত মতলবই যে সে মনে মনে ঠাওরাইতে থাকে। মানুষের পাওনা ফাকি দিবার মতলব ঠাওরানোই যার চিরদিনের অভ্যাস একেবারে উলটাে ধরনেব ভাবনা ভাবিবার সময তার চিস্তাক্লিষ্ট মুখে এমন একটা আশ্চর্য দুঃখের ছাপা পড়ে যে, দেখিলে অবাক হইয়া যাইতে হয়, মনে হয় এইমাত্র লোকটার কোনো আপনজন মরিয়া 6ल नादिके ? মানুষকে কাজ জুটাইয়া দিতে যশোদা বড়ো ওস্তাদ। অনেক বছর ধরিয়া ধীরে ধীরে আপনা। হইতে অনেকগুলি ছোটােবড়ো কলকারখানা৯ সঙ্গে তার একটা যোগাযোগ গড়িয়া উঠিয়াছে, অনেক কারখানার ম্যানেজার হইতে সর্দার কুলি পর্যন্ত তাকে চেনে-চোখে না দেখিলেও নাম শুনিয়াছে। অনেক শ্রমিকের সঙ্গে যশোদার মুখোমুখি পরিচয় আছে, অনেকে তাকে কেবল দু-একবার চোখে দেখিয়াছে, অনেকে সহকমীদের মুখে তার নাম শুনিয়াছে। কার কাজ নাই, কার কাজ চাই, কে কাজের লোক, কে অকেজো, কোথায় কোন কারখানায় কী ধরনের লোক নেওয়া হইতেছে বা হইবে, এ সব খবর ঘরে বসিয়াই এত বেশি পাওয়া যায় যে খাতাপত্রের সাহায্য ছাড়া মনে রাখা অসম্ভব। কিন্তু