পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শহরতলি > ど。 ধারণাটি লইয়া সময়ে অসময়ে সে মনে মনে খেলা করে, সৃষ্টি করে অর্থহীন অবাস্তব কতগুলি সমস্যা এবং ভাবিতে ভাবিতে বিফল ও বিবক্ত হইয়া ওঠে। কত সমস্যাই যে মনে জাগে সুধীরের ! নদীটাি যদি হঠাৎ মজিয়া যায়, জাহাজ স্টিমার নীেকার আনাগোনা যদি হইয়া যায় বন্ধ, কী হয় তাহা হইলে ? রেল কোম্পানি যদি হাঙ্গামা সহিতে নারাজ হইয়া একদিন বলিয়া বসে, ‘ধূত্তোর’ এবং বলিয়া রেলগাড়ির চলাচল বন্ধ কবিয়া দেয়, কী হয় তাহা হইলে ? বাজার-গাড়িতে, লরিতে, মানুষের মাথায় শহরে মাছ তরকারি আসা বন্ধ হয়, শহরের লোকের মাছ তরকারি সংগ্ৰহ করিবার কী উপায় হইতে পারে ? এই রকম আকও কত দুর্ভাবনাই আসে সুধীরের মাথায়। পচা জিনিস সম্বন্ধে মাছি যতটুকু জানে ব্যাবসা বাণিজ্যের সঙ্গে এতকাল এতভাবে সংশ্লিষ্ট থাকিয়া বেচারি ব্যাপারটা ততটুকুও বোঝে না। কিনা। কাজে ফাঁকি দিলে যতটা না হয সুধীরকে চিন্তিত দেখিলে রাজেন রাগিযা আগুন হইয়া যায়। তুই বড়ো বজাত সুধীর, এক নম্বর ধজাত । এত গরমে ক্ৰমাগত গালাগালি কঁহাতক মানুষেবা সহ্য হয় ? সুধীরের রক্ত আর মাথা এক সঙ্গে গবাম হইয়া ওঠে । মনে মনে রাজেনকে অকথ্য গালাগালি দিতে দিতে ওয়াগনের দরজা বন্ধ করিতে যায়। দরজা সিলমোহর করিতে হইবে, খড়ি দিয়া ওয়াগনের গায়ে সংকেত ও নির্দেশ লিখিতে হইবে, তারপর সরাইয়া দিতে হইবে পাশের লাইনে। প্রথম কাজ দুটি অন্যলোকের, শেষ কাজটা করিতে হইবে সুধীরকে। দরজা বন্ধ করিয়া সুধীব তীব্ৰদূষ্টিতে বাজেনকে দেখিতে থাকে-শুকনো মোচাব মতো শীর্ণ মুখ তুলিয়া রাজেন তার দিকে চাহিলেই সে মুখ ফিরাইয়া নিবে, সেটুকু বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা সুধীরেব আছে, কিন্তু যশোদার উপব নিবুপায় ক্ৰোধের জুলায় পেট ভরিয়া সুধীর খাইতে পাবে নাই, যার চেয়ে তার রাগেব বড়ো প্রমাণ বোধ হয়। আর কিছুই হইতে পারে না, কিন্তু কাজে আসিযা সুধীব তার অতীত ও বর্তমান জীবনের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এই সব কথাই ভাবে। কাজ যারা কবে তাদেব জীবনে এই জনাই কি রোমান্স থাকে না ? কাজে সুধীব্ধ ফাঁকি দেয না কিন্তু তাকে কোনো ফঁাকে চিন্তিত মুখে বিড়ি টানিতে দেখিলে রাজেন বড়ো রাগিয়া যায! নিজের জানা একটি লোক ছিল রাজেনের, এই কাজটা সে তাকে জুণ্টাইয়া দিবে। ভাবিযাছিল, যশোদার অনুবোধে সুধীরকে কাজটা জুণ্টাইয়া দিতে হওয়ায় সুধীরের উপরেই বোধ হয় তার মেজাজটা একটু বিগড়াইয়া আছে। এক নম্বর ফাঁকিবাজ তুমি সুধীর-এক নম্বর বজাত। সুধীরের রক্ত আর মাথা একসঙ্গে গরম হইযা ওঠে। পেটটাও বুঝি তার ক্ষুধার জ্বালা অনুভব করিতে আরম্ভ করিয়াছিল, মাঝ-দুপুর পার হইযা গিয়াছে। চোখ তুলিয়া চাহিয়া দাখে, ধনঞ্জয় কখন আসিযা দাঁড়াইয়াছে, বিড়ির ধৌযা ছাড়িতে ছাডিতে রাজেনের গালাগালিতেই বোধ হয় আমোদ পাইয়া মুখে হাসিও ফুটাইয়াছে। শুকনো মোচাব মতো শীর্ণকায় রাজেনের উপর যে বাগটা হইয়াছিল, সে রাগটা সুধীরেব তাই গিযা পড়ে দৈত্যের মতো বিশাল-দেহ মানুষটার ওপর। মনে মনে রাজেনের বদলে ধনঞ্জযকে অকথ্য গালাগালি দিতে দিতে সে ওয়াগনের আরও কাছে সবিয়া যায়। ধনঞ্জয়কে সুধীর ভয় করে। ভূতপ্ৰেত দৈত্যদানার যে ভয় আচমকা ছােটাে ছেলেদের ঘুম ভাঙাইয়া দেয়, অন্ধকারে মাকে জড়াইয়া ধরিয়া যে এয়ে ছোটাে ছেলে থারথার করিয়া কাঁপিতে কঁাপিতে ফুপাইয়া ফুপাইয়া কঁাদে। সেই সঙ্গে হিংসা তো আছেই। গত কয়েকদিনের মধ্যে যে হিংসার তীব্ৰতা মারাত্মক গোপন রোগের মতো ভিতরে ভিতরে একটা দুর্বোধ্য যাতনায় সুধীরকে প্রায় পাগল করিয়া তুলিয়াছে। ধনঞ্জয় কাছে আগাইয়া আসে। কালীঘাট গেলাম ভাই যশোদার সঙ্গো-যা মিষ্টিটিই একপেট খাওয়ালে যশোদা। যত বলি আর খাব না, তত খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খাওয়ায়, বলে, এই খাওয়ার ক্ষমতা মানিক ৩য়-১২