পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/২০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RO 8 মানিক রচনাসমগ্ৰ সামনাসামনি এমনভাবে কথা কুমুদিনী সচরাচর বলে না। চার আনা চান্দা দিতে হওয়ায় গায়ে এত জ্বালা ধরিয়াছে নাকি তার ? কে জানে, হয়তো ধনঞ্জয় আর তাকে নিয়া সত্যসত্যই খুব একচেটি আলোচনা, গবেষণা আর নিন্দা চলিতেছে। তারপর যশোদার কানে আসে, এ কাজে সুধীরের উৎসােহই নাকি সকলের চেয়ে বেশি, সত্য মিথ্যা কত কথাই যে সে রটাইয়া বেড়াইতেছে! এখনও সুধীরের ক্ষোভ থাকিবার কোনো কারণ যশোদা ভাবিয়া পায় না। কালোকে নিয়া সে বরং এমন মশগুল হইয়া পড়িয়াছে যে দেখিয়া শুনিয়া মনে হয়, অল্পের জন্য যশোদার হাত হইতে রেহাই পাওয়ার জন্য অদৃষ্টকে তার ধন্যবাদ দেওয়াই বেশি স্বাভাবিক। সুধীরের যে পরিবর্তন ঘটিয়াছে-গ্ৰীষ্মের তৃষ্ণাতুর পশুর একেবারে শ্রাবণের ধারাজলে লুটোপুটি করার মতো-দেখিলে হাসিও পায় করুণাও হয়। ছায়ার মতো যে যশোদার সঙ্গে সঙ্গে থাকিত, উদভ্ৰান্ত দৃষ্টিতে যশোদার চলাফেরা লক্ষ করিত, মুখ দেখিলে মনে হইত এই বুঝি সর্বনাশ ঘটিল, বহুদিনের উপবাসী বাঘের মতো এই বুঝি সে বঁাপাইয়া পড়ে তুঙ্কার দিয়া যশোদার ঘাড়ে—সেই সুধীর এখন যশোদার ধারে কাছে ভিড়িতে চায় না, কেবলই এড়াইয়া চলিবার চেষ্টা করে, সামনে পড়িলে এদিক ওদিক তাকায় আর কখনও কখনও বোকার মতো একটু হাসে, আরও বেশি বোকার মতো জিজ্ঞাসা কবে, কী খবর চাদের মা ? চালচলন বদলাইয়া গিয়াছে সুধীরের, মেজাজ নরম হইয়াছে, শুকনো বাকলের মতো বৃক্ষ কঠিন মুখের চামড়ার ভিতর হইতে একটা কোমল আস্তরণের হদিসও যেন পাওয়া যাইতেছে না ? একটি কালো সোনার কাঠির ছোয়াচে মানুষটার মধ্যে যেন পলকে পলকে পরিবর্তনের ভেলকি আরম্ভ হইয়া গিয়াছে। নিন্দে করে নাকি বেড়ােচ্ছ তুমি আমার ? সুধীর জবাব দিবার আগেই কালো তাড়াতাড়ি বলে, না দিদি না, মিথ্যে লাগিয়েছে তোমার কাছে মানষে। যশোদা চোখ পাকাইয়া বলে, তুই চুপ কর ছুড়ি, তোকে বলিনি। আমি। কেউ কেউ করতিস দুদিন আগে কুকুর বাচ্চার মতো, বড়ো মুখ ফুটেছে, না ? 领 সুধীর ক্ষুব্ধ হইয়া বলে, গাল দিয়ে না। চাঁদের মা। কতবার কত কারণে রাগ করিয়াছে। যশোদা, এমন কালো মেঘের ছায়া কে কবে তার মুখে ঘনাইয়া আসিতে দেখিয়াছে ?-গাল দেব না ? গাল দিতে বারণ করলে ? কথা কইলে যদি না সয়, যাও না চলে এখান থেকে ? কে মাথার দিব্যি দিয়েছে থাকতে ? পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দিয়ে গটগট করে বেরিয়ে যাও দুজনে। বলিয়া যশোদা নিজেই গাঁটগট করিয়া বাহির হইয়া যায়, পরীক্ষণে ফিরিয়া আসিয়া অপেক্ষাকৃত শাস্তকণ্ঠে বলে, আজ পর্যন্ত একটি পয়সা দিলে না, এমনি করে তো দেনা শোধ হবে না। সুধীর। আজকে ভাড়া চুকিয়ে দিয়ো, ও মাসের আর পাঁচটি টাকা দিয়ে দেনার জন্যে। আচ্ছা, পাঁচটা না পার, তিনটে টাকাই দিয়ে। তারপর যশোদার রাগটা কমিবার সময় দিয়া রাত্রে কালোকে সুধীর তার কাছে কঁাদাকাটা করিতে পাঠাইয়া দেয়। সুধীর নয়, অনেকেই তার নিন্দা করিতেছে। এ খবরটা আবিষ্কার করিয়া যশোদার রাগটা কমিয়া আসায় কালোকে সে বলিয়া দেয় যে, আচ্ছা যা, মাইনে পেলে দিতে বলিস। এতদিন ধনঞ্জয়কে যশোদা ঘরে ভাত দিয়া আসিয়াছে, আজ বাহিরে আসিয়া সকলের সঙ্গে বসিয়া খাইবার ডাক পড়িল। ठेठ श्रोलेि ना (श फ्रैंgलद्ध भी ? খুব পারবে। চেষ্টাই করে দ্যাখো পাের। কিনা। বড়ো লাগে চাদের মা।