পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/২২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R মানিক রচনাসমগ্ৰ সব কাজে সাহায্য করিতে গিয়া ধনঞ্জয় সারাদিন আজ যশোদার বকুনি শুনিয়াছে, উনুন তৈরি করিতে দেখিয়া সে অবাক হইয়া বলিল, দু-চারদিনের জন্য আবার উনুন পাতিছো কেন ? ইটের উপর আড়াআড়িভাবে শিক বসাইতে বসাইতে যশোদা বলিল, দু-চারদিন কে বললে ? থাকতে হলে রোধেবেড়ে খেতে হবে তো ? না, ফলার করব রোজ ? কদিন থাকবে ? চিরদিন । এখান থেকে যাবে না ? gसन् यदि ? বাড়ি বেচাবে না ? কেন বেচব ? ও বাড়িতে যে মালপত্র গেছে ? আনিয়ে নেব। ও বেলা কেদারকে বললেই হবে। তিনটে গোরুর গাড়িতে মাল গেছে, একেবাবে একটা লরিতে মাল ফেরত আসবে। ধনঞ্জয় ব্যাপারটা ঠিক বুঝিয়া উঠিতে পারে না। যশোদার খেয়ালের আদি-অন্ত পাওয়া ভার। বাড়ি ছাড়িয়া যাওয়া হইবে না শুনিয়া মুখখানা তার বিমর্ষ হইয়া যায়। নন্দ চলিয়া যাওয়ার পর এ বাড়িতে কেবল সে আর যশোদা কদিন বাস করিতেছে। প্রথম রাত্রে নন্দ ফিরিবে কী ফিরিবে না। এ কথা কারও জানা ছিল না, কোনো কারণে ফিরিতে তার দেরি হইতেছে ভাবিয়া যে যার ঘরে গিয়া আর শত্ৰু কুমুদিনী আসিয়া বলিয়াছিল, আমি থাকব ভাই তোর কাছে রাত্রে ? যশোদা রাজি হয় নাই। ধনঞ্জয়ের সঙ্গে একা এক বাড়িতে রাত কাটানোর ভয়াবহ পরিণামের কথা বারবার মনে পড়াইয়া দিয়া কুমুদিনী যশোদাকে কাবু করিতে চাহিয়াছিল, যশোদা হাসিমুখে বলিয়াছিল, আমার সুনাম দুর্নামে কার কী আসবে যাবে বল, কে আছে আমার ? দুর্নােম হতে বাকিই বা কী আছে বল ? আমার ভাই মন্দ, আমিই বা মন্দ নাই কীসে ? শেষ পর্যন্ত রাগ করিয়া গালাগালি আর অভিশাপ দিতে দিতে কুমুদিনী চলিয়া গিয়াছিল। অনেক ভাবিয়া উদভ্ৰান্তের মতো কল্পনারাজ্যে অনেকক্ষণ বিচরণ করিয়া সেদিন সন্ধ্যার পর ধনঞ্জয় ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, আমি তোমার ঘরে শোেব যশোদা ? তোমার হয়তো ভয় করবে ? ভয় করবে ?-যশোদা অবাক হইয়া গিয়াছিল, আমার ভয় করবে একা এক ঘরে শূন্তে ! গোটা বাড়িটাতেই আমি যে আজ একা থাকিব গো ? ধনঞ্জয় আর কথা বলিতে পারে নাই। যশোদাকে বুঝা যায় না, যশোদার খেয়ালের অস্ত পাওয়া राशि न्मा | এই বাড়িতে যশোদার সঙ্গে রাত্রিযাপনের মধ্যে ধনঞ্জয় হয়তো অনেক কিছু রোমাঞ্চকর সম্ভাবনা আবিষ্কার করিতেছিল, কুমুদিনীর বাড়িতে তাকে রাত্রে থাকিতে হইবে শুনিয়া সে মুষড়াইয়া গেল । সন্ধ্যার পর রাজেন আসিল। লরিতে চাপাইয়া রাতারাতি মালপত্র ফিরাইয়া আনিবার অনুরোধে সে একটু হাসিল। রাত্তিরে হাঙ্গামা করবার দরকার কী চাঁদের মা ? আমি গিয়ে রাত্তিরটা থাকছি। সেখানে, ভোর ভোর মালপত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ব ?