পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শহরতলি JSł সুব্রতা সবিনয়ে ঘোষণা করিয়াছিল, সে সুন্দরী বটে। কিন্তু তার মতো গন্ডা গন্ডা। সুন্দরী মেয়ে রাস্তাঘাটে গড়াগড়ি যাইতেছে। সুব্রতার কথা আর ভঙ্গিকে তখন যশোদার মনে হইয়াছিল, একেলে মেয়ের পাকামির প্যাচ, ঘষামাজা ন্যাকমি। তারপর যশোদা জানিতে পারিয়াছে মেয়েদের পক্ষে এ বিশ্বাস পোষণ যতই বিস্ময়কর হােক, কথাটায় সুব্রতা সত্যসত্যই বিশ্বাস করে। তাব মতো বৃপবতী মেয়ের পক্ষে নিজেব বৃপ সম্বন্ধে এমন একটা ধারণা আন্তরিকতার সহিত পোষণ কবা যে সম্ভব, এ অভিজ্ঞতা যশোদার ছিল না। রামলক্ষ্মণের মন ভুলানোর প্রতিযোগিতায় সীতা-উৰ্মিলার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে এ বিশ্বাস যে সূৰ্পণখার ছিল, সে তো সে স্ত্রীজাতীয়া জীব বলিয়াই ! স্নেহ করার সঙ্গে সুব্রতাকে যশোদা তাই একটু শ্ৰদ্ধাও করিতে শিখিয়াছে। চার সুব্ৰতাক চরিত্রের আব্ব একটা দিকও ক্ৰমে কমে যশোদার কাছে স্পষ্ট হইয়া উঠিল। মেযেটা খুব মিশুক । যশোদা আব্ব কুমুদিনীর সঙ্গে ভােব জমিয়াছিল একদিনে, পাড়ার কযেকটি বাড়ির মেযেদের সঙ্গেও সে ভাবি জমাইয়া ফেলিল কযেক দিনের মধ্যে। প্ৰথমে পরিচয় করিতে গোল সবচেযে কাছেব বাড়ির এবং সম্ভবত ছোটোখাটো একটা পরিধির মধ্যে সবচেয়ে গবিব ও অতি ভদ্র পরিবাবেব মেয়েদের সঙ্গে। পরিবারটি অমূল্য নামে একজন বছব পঞ্চাশেক বয়সের রোগজীৰ্ণ কেরানি দিনের। পাবদিনই ও বাড়ির সাত হইতে চল্লিশ পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সেব আটজন মেযে যশোদার বাড়ি বেড়াইতে আসিল। সাত বছৰ বয়সের মেয়েটির রঙিন কাপড় পরার ভঙ্গি দেখিযা মনে হইল, যৌবনে পা দিয়া তাড়াতাড়ি দলের তিনটি তবুলী মেযের সঙ্গে পাল্লা দিতে যেন তাব তর अशिद्धtछ नीं। অনেকদিন আগে অমূল্যর বাড়ির মেযেরা। দু-একবার যশোদাব বাড়ি বেড়াইতে আসিযাছিল। যশোদা তখনও কুলিমজুরদের বাড়িতে ভাড়াটে বাখিতে আবস্ত করে নাই। তারপর নানা আপদেবিপদে মাঝে মাঝে যশোদাকে তাবা ডাকিয়াছে বটে, কিন্তু যশোদার বাড়িতে কখনও আসে নাই। আজও তারা যশোদার কাছে আসে নাই, আসিয়াছে সুব্রতার নতুন সংসার দেখিতে { অমূল্যর স্ত্রী আশাপূর্ণ পান চিবাইতে চিবাইতে বলিল, আমবা এলাম। কই, তোমার নতুন ভাড়াটে কই চাদের মা ? যশোদা বলিল, আমার নতুন ভাড়াটেকে খুঁজছি। পাচুর মা ? এসো, বসবে এসো। আশাপূর্ণর পান চিবানাে বন্ধ হইয়া গেল। এতকাল কুলিমজুরের সঙ্গে কারবার করিয়া প্রায় তাদের মতো বনিয়া গিয়া এখনও তাকে সমানের মতো সম্বোধন করার মতো ভদ্রতা যশোদার আছে, সে তা কল্পনাও করে নাই। কয়েক মাসের মধ্যে দেখা গেল যশোদার বাড়িতে দুপুরবেলা রীতিমতো মেয়েদের বৈঠক বসিতে আরম্ভ করিয়াছে। দু-একটি মেয়ে নয়, উকিল, ডাক্তার, মাস্টার, প্রফেসর, কেরানি, জীবনবিমাের এজেন্ট প্রভৃতি অনেক রকম ভদ্রলোকের বাড়ির অনেক মেয়ে। সকলের বাড়ি যে খুব আগাঁইয়া নিয়া গিয়াছে।