পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/২৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শহরতলি S \۹ م সমস্ত পথ গম্ভীর হইয়া কী যেন ভাবে কুমুদিনী, বাড়ি ফিরিয়া যশোদাকে একাস্তে টানিয়া নিয়া বলে, বলি চাঁদের মা, একটি বউ দেখলাম জ্যোতিময়বাবুর বোনের মতো, সে বুঝি সে সুবর্ণ। মাগো ! এ সব কী ! কুমুদিনীর মুখ দেখিয়া মনে হয় সে বুঝি শুধু আশ্চর্য হয় নাই, ভয়ও পাইয়াছে। এ রকম ভূমিকা করা যশোদার স্বভাব নয়। রাজেন একটু অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিল। কী কাজ ? নন্দর ঠিকানাটি জেনে আসবে ? নন্দর ঠিকানা জেনে করবে। কী চাদের মা ? যশোদা হাসিল। বেশ মানুষ বটে তুমি, বেশ কথা সুধোচ্ছে। রাজেন ইতস্তত করিয়া বলিল, মানে কী জান চাদের মা, আসবাব হলে নন্দ নিজেই আসত আগে। বায়োস্কোপে পার্ট করলে নাকি ঢ়ের পযসা পাওযা যায শুনেছি, ওব তো পযসাব অভাব নেই।-- পয়সার কথা নয়, নিজে থেকে ফিবে আসতে হয়তো সাহস পাচ্ছে না। তখন নন্দর ঠিকানা সংগ্ৰহ কবিয়া আনিবার কথা দিযা রাজেন চলিযা গেল, যশোদা গোল সত্যাপিয্যের বাড়ি। হঠাৎ তার মনে হইয়াছে, অল্পবযসি ছেলেমেয়ে ক্টোকের মাথায় বাড়ি ছাড়িযা গেলে যে অনেক সময় সাধ থাকিলেও ফিবিযা আসিতে ভাবসা পায না, এ কথাটা সত্যাপ্রিয়কে বুঝাইয়া বলা দবকার। যামিনী স্বাধীনভাবে নিজের পায়ে ভর দিযা দাঁড়াক, বউকে নিয়া নিজের ভিন্ন সংসার পাতৃক, যশোদার তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। মানুষেব মধ্যে এ বকম তেজই সে পছন্দ কবে । কেবল যোগমায়াব সস্তান সম্ভাবনাব জন্য এ সমযটা তাকে নিয়া এ রকম টানাহঁ্যাচড়া কিবা সঙ্গত নয বলিয়া প্রথমটা সে অসন্তুষ্ট হইয়াছিল। এতকাল যে অনাযাসে শ্বশুরেব অন্নধ্বংস করিযাছে আর কয়েকটা মাস সে ধৈর্য ধবিন্যা থাকিতে পাবিল না ? বীবত্ব বা মনুষ্যত্ব তো পাগলামি নয। বেহিসাবি তেজ দেখানো গোয়াবতুমিব শামিল। প্রথমে যামিনী বুক ফুলাইযা বলিত, কুঁড়েঘবে না খাইযা দিন কটাইবে তবু অব জীবনে কখনও শ্বশুরের অন্নধ্বংস করিতে যাইবে না। কিন্তু এখন মুখেও আর সে ও সব কথা বলে না। কিছুদিন পবে সে হঠাৎ একদিন যাচিয়া গিয়া সতপ্রিযেব পায্যে ধরিষা কঁদিয়া পড়িবে, তাকে কোনোমতেই আটকানো যাইবে না। নিজের পায়ে ভর দিয়া কুঁড়েঘবে স্বাধীন জীবনযাপন করিবার মানুষ সে নয়-একটু নরম হইযা থাকিলেই সতপ্রিযের রাজপ্রাসাদে আবামে জীবন কাটানোর সুযোগটা অন্তত যতদিন সামনে উপস্থিত আছে। যোগমায়ারও এ জীবন সহ্য হইতেছে না। এ রকম অবস্থায় ওদের এখানে রাখিয়া কষ্ট দিয়া লাভ কী ? ফিবিয়া যদি যাইতে হয়, ক-মাস পাবে যাওযার চেয়ে, যোগমায়ার দিক হইতে ধরিলে, এখন যাওয়াই ভালো। তাছাড়া আর একটা কথাও যশোদার মনে হইতে থাকে- ওদের দুজনকে বাড়িতে বাখিযা সত্যাপ্রিয়কে খোঁচা দেওয়া যাইবে ভাবিয়া নিজের খুশি হওয়ার কথা। প্রতিহিংসার জন্য ওদের কেন সে কষ্ট দিবে ? এই অন্যায় কল্পনা মনে আসিয়াছিল বলিয়া এখন তাহার মনে হয়, ওদেব ফিরিযা যাওয়ার উপায়টা তারই করিয়া দেওয়া উচিত। সত্যপ্রিয় কাগজ পড়িতেছিল, মুখ তুলিয়া একটু বিস্ময়ের সঙ্গেই বলিল, এসো চাদেব মা। এবার ফিরিয়ে আনুন ?