মানিক রচনাসমগ্র 88ܓ শিথিল হইয়া আসিত, তাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু ভালো করিয়া গড়িবার উদ্দেশ্যে সদানন্দের ভাঙন ভালোরকম আরম্ভ হইবার আগেই বিপিন ফিবিযা আসিল । কযেক ঘণ্টাব মধ্যে আশ্রমও যেমন ছিল হইয়া গেল। তেমনই। সদানন্দ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিফা বলিল, বাঁচলাম ভাই। বলা নেই কওয়া নেই। কোথা গিয়েছিলি তুই ? আশ্রম চালানো কী আমার কাজ ! বাহাদুরি করতে তোকে কে বলেছিল ? যা আরম্ভ করেছিলি তুই-চমৎকার ! কথাটার খোচা লাগিল সদানন্দের। একবার ইচ্ছা হইল সত্যসত্যই বাহাদুরি কবিয়া বলে, কয়েকটা মাস পরে ফিরিয়া আসিলে আশ্রমের উন্নতি দেখিয়া বিপিনের তাক লাগিয়া যাইত। বিপিন। রাগিয়া যাইবে ভাবিয়া ইচ্ছােটা দমনও করিল, নিরীহভাবে একটু শাস্ত হাসিও হাসিল। কোথায় গিয়াছিল বিপিন ? আমবাগানটা বাগাইতে-–একেবাবে দানপত্র পাকা কবিয়া আসিয়াছে। একটা খাব দেয় নাই কেন বিপিন ? কেন দিবে, সদানন্দ যখন চাষ যে বিপিন আর তার এত সাধের আশ্রম সমস্ত চুলোয় যাক ! কী গব্বজ বিপিনের খবর দিবার ! না না, ঠিক তা নয়, খুব ব্যস্তও ছিল বটে বিপিন, একটু মজাও দেখিতেছিল বটে। হঠাৎ সে জন্মেব মতো বিদাষ হইয়া গেলে সদানন্দ কী কবে দেখিবার সাধটা বিপিনের অনেকদিনেব। চার বর্ষাকালে সদানন্দ অবসব পায় বেশি। বড়ো চালাটার নীচে সর্বসাধাবণের জন্য সভা বসে মাঝেমধ্যে, লোকজন আসেও খুব কম। সামান্য জলকাদা ভক্তদের উৎসাহ কমাইযা দেয় দেখিয়া সদানন্দ ক্ষুন্ন হয়। নানারকম খটকা জাগে মনে। লোক কী তার কথা শুনিতে আসে যুজুগে পড়িষ্যা, সময কাটানোব জন্য ? একটু কষ্ট স্বীকাব করিবার দরকার হইলেই অনায়াসে আসাটা বাতিল করিাসা দেয় ? কিন্তু আশ্রমের ভান্ডারে দান হিসাবে প্ৰণামি তো তাকে প্রায় সকলেই দেয, কেউ দেখা যতবার আসে ততবারই, কেউ দেয় মাঝে মাঝে! ঘরের কড়ি পরকে দেওয়া ত্যাগ বইকী। বিনিমযে পুণ্য অবশ্য তারা পায। কিন্তু বর্ষাকালে পুণ্যোব দরকারটা এত কমিয়া যায কেন ওদেব ? পুণ্যও কি বাজাবের ভালো মাছ তরকারির শামিল ওদের কাছে, জলকাদা ভাঙিয়া জোগাড় করার চেযে ঘরে যা আছে। তাই দিয়া কাজ চালাইয়া দেয় ? সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ হয় সদানন্দের, বর্ষার জল ভক্তদের কাছে তাঁর আকর্ষণকে জোলো করিয়া দিতে পারে বলিয়া ! অহংকার বড়ো আহত হয। এদিকে আশ্রমেব কাজেও বর্ষাকালে শৈথিল্য আসে। নিজের নিজের কুটিরে বসিয়া উপাসনা জপতপ পূজাৰ্চনা যার যত খুশি করে, যার যত খুশি করে না, সকলকে একত্র করিয়া সদানন্দ উপদেশ বিতরণ করিতে আসে কম। কোনোদিন বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে, কোনোদিন থাকে মুষলধাবে বর্ষণ। সদানন্দ হয়তো মেঘে ঢাকা আকাশকে উপেক্ষা করিয়া নদীব ধারে খানিকটা ঘুরিয়া আসে, হয়তো বাহির হইয়া যায়। কেবল বৃষ্টিতে ভিজিতে। অথবা হয়তো নিজেব ঘরে শূইয়া বসিয়া পড়ে বই। আশ্রমের নরনারীদের উপদেশ দিতে যায় খুব কম। মাধবীলতা মাঝে মাঝে আসে। উপদেশ শুনিয়া যায়। হিল তোলা জুতা খটখট করিয়া হাজির হয় সে একেবারে সদানন্দের অন্তঃপুরে। এটা আশ্রমের নিয়মবিরুদ্ধ। কিন্তু সদানন্দ নিজেই যখন অনুমতি দিয়াছে, নিয়ম-অনিয়মের প্রশ্ন কে তুলিবে। বিপিন তুলিতে পারে, সদানন্দকে পাগল করিয়া দিতে পারে প্রশ্নের প্রশ্ন তুলিয়া, কিন্তু সে চুপ করিয়া থাকে। একদিন দুপুরবেলা মাধবীলতা আসিবার পর সদানন্দকে জানাইয়া হঠাৎ সে চলিয়া গিয়াছিল বাহিরে, বলিয়া গিয়াছিল ফিরিতে সন্ধ্যা হইবে। আধঘণ্টা পরে ফিরিয়া আসিয়াছিল। হঠাৎ ৷