পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

woS মানিক রচনাসমগ্র বিভূতির মা বলিল, আর তুমি ? এককথা একশোবার কেন বলছ ? বললাম না প্রভুকে দর্শন করতে না দিলে আমি উঠিব না এখান থেকে ? তুমি এখানে বসে থেকে কী করবে, তাতে লাভটা কী হবে শুনি ? তুমি এখান থেকে না উঠলে আমিও উঠিব না। সন্ধ্যা হইতে এ বিষয়ে দুজনের মধ্যে অনেক তর্ক, অনেক রাগারগি হইয়া গিয়াছে, মহেশ চৌধুরি আর কিছু বলিল না, কেবল শশধরকে সুকুম দিল দাওয়ায় গিয়া বসিতে। শশধর দাওয়াতে গেল, বিপিন মাদুর আর বালিশ আনিয়া দিলে তৎক্ষণাৎ মাদুর বিছাইয়া শূইয়াও পড়িল! আপশোশ করিয়া বলিল, বর্ষাকালে এ কী ঠান্ডা মশায়, আঁধা ? এ কি শালার শীতকাল নাকি ? বিপিনের সহানুভূতি জাগিব।ার লক্ষণ নাই দেখিয়া গলা নামাইয়া আবার বলিল, বউটাি এসেছে কাল-ছ-মাস বাপের বাড়ি ছিল। কী গরমটা গেছে। কাল রাতে, তা বউ বলে কী, না বাবু, বাদলার দিন ঠান্ডা লাগবে। বালে আপনি বাড়ি ফিরে যান না ? শশধর উঠিয়া বসিলা। -আমি ? মামি কাল বাড়ি ফিবেই কী করবে জানেন ? কানটি ধরে বলবে, বেরো বাড়ি থেকে। কেবল আমাকে নয় মশায়, নিজের জন্য কি আমি ভাবি, বউটাকে সুন্ধু। গায়ে দেবার দিতে পারেন কিছু, কাপড়াচোপড় যা হােক ? বিপিন একটা চাদর আনিয়া দিল। কিন্তু বাদল রাতে সদানন্দের সদর-দাওয়ায় চাদর মুড়ি দিযা আরাম করিবার অদৃষ্ট বেচারির ছিল না। বিভূতির মা ডাকিয়া বলিল, ও শশী, ও ভদ্রলোকের কাছ থেকে ছাতিটা চেয়ে রাখ, আর জিজ্ঞেস কর আরও যদি ছাতি থাকে একটা--- একটা কেন, আরও তিনটা ছাতি ছিল, সবগুলি আনিয়া দাওয়ায় শশধবের কাছে ফেলিযা বিপিন ভিতরে চলিয়া গেল। দাঁতের অসহ্য যন্ত্রণায় তাব মাথার মধ্যে তখন বিমঝিম কবিতেছিল, ইচ্ছা হইতেছিল মাটিতে শূইয়া হাত-পা ছড়িতে থাকে আব্ব চিৎকার কবিয কঁদে । ছাতি নিয়া শশধর গাছতলায় গেল। একটি ছাতি খুলিয়া দিল মামির, হাতে, আর একটি ছাতি খুলিয়া মহেশ চৌধুরিকে দিতে গেলে সে বলিল, না, আমার ছাতি চাই না। স্ত্রী বলিল, কেন ? এখানে ধম্নে দিয়েছ, না খেয়ে বসে থাকবে, তা না হয় বুঝলাম--বিষ্টি যখন পড়ছে ছাতিটা মাথায় দিতে দোষ কী ? মহেশ চৌধুরি বলিল, নিজে থেকে আমি কিছুই করব না। তখন মহেশ চৌধুরির স্ত্রী আবার এমনভাবে নিজের মরণেব জন্য আপশোশ আরম্ভ করিল যে মনে হইল। আবার বুঝি আজ অপরাহ্রের মতো বালার আঘাতে নিজের কপাল কাটিয়া রক্ত বাহির করিয়া ছাড়িবে। কিন্তু খানিক আপশোশ করিয়া নিজের ছাতিটা বন্ধ করিয়া শশধরকে ফেরত দিল, বলিল, যা তুই, দাওয়ায় শো গে যা শশী। শশধর একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিল, থাক, আমিও বসে বসে ভিজি এখানে, আমিই বা বাদ যাব কেন । তারপর মিনিট দুই সব চুপচাপ। এ অবস্থায় গাছের পাতায় বাতাসের মৃদু শো শো শব্দ আর গাছের পাতা হইতে জল ঝরিবার ক্ষীণ জোলো জোলো আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ কানে শোনাও পাপ। মনে অবশ্য অনেক কথা টগবগা করিয়া ফুটিতে থাকে এবং সেগুলি স্মৃতিও कीं । সারাটা জীবন আমায় তুমি জ্বালিয়ে খেলে, আমার শনিগ্ৰহ তুমি। আমরা সব ব্যাপারে তোমার বাহাদুরি করা চাই, হাঙ্গামা বাধানো চাই। যদি শাস্তি পাবার জন্যে গাছতলায়। ধন্না দিয়ে পড়ে থাকি, তোমার কী তাতে, কেন তুমি এসে আমার মন বিগড়ে দেবে, কে ডেকেছিল তোমায় ? স্বামীভক্তি