পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○>ペ মানিক রচনাসমগ্ৰ দেখানো তাদের মধ্যে চলিবে কেন ? কী হইয়াছে সদানন্দের আজ, সাতদিন ঘরের কোণে কাটাইবার পর ? বিপিন সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়, সে দৃষ্টির বিশ্লেষণপটুতা অসাধারণ। বিপিন উশখুশ করে, সেটা তার শারীরিক অস্বস্তিবোধের চরম প্ৰমাণ। তখন দুপুরবেলা, ঘণ্টা দুই আগে দুজনেরই মধ্যাহ্ন ভোজন হইয়াছে। অনেক ভাবিয়া, অনেক দ্বিধা করিয়া, মনকে শান্ত করিবার জন্য সাতদিন ঘরের কোণে নিজেকে বন্দী করিয়া রাখিয়া মনকে আরও বেশি অশাস্ত করিয়া, অতিরিক্ত জ্বালাবোধের জন্যই মাধবীলতা সম্পর্কে অত্যাশ্চর্য আত্মসংযমের মধ্যে নিজেকে সত্যসত্যই মহাপুরুষ করিয়া ফেলিবার চরম সিদ্ধান্ত সদানন্দ গ্ৰহণ করিয়াছিল। আজ সকালে তাই হঠাৎ মাধবীলতাকে আজই রাত্রে ঘরে আনিবার জন্য নিমন্ত্ৰণ করিয়া বসিয়াছে। কে জানিত মাধবীলতাকে এমনভাবে সে নিমন্ত্ৰণ করিয়া বসিবে ? সকালে নদীর ধারে বেড়াইতে বেড়াইতে চোখে পড়িল স্নানরত রত্নাবলী আর উমাকে, তাই মাধবীলতাকে খুজিতে সে জোরে জোরে হাঁটিতে আরম্ভ করিল আশ্রমের দিকে। মাধবীলতাকে দেখা গেল এক আমগাছের তলে! আশ্রমে যে গোয়ালা দুধ জোগায়, তার বউয়ের সঙ্গে গল্প করিতেছে। গোয়ালা বউয়ের কঁখের শিশুটি প্রাণপণে স্তন চুষিতেছিল, দুধের কারবার করে বটে গোয়ালাবউ, নিজের বুকে যে তার সস্তানের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে দুধ জন্মে না, দেখিলেই সেটা বোধ যায়। সদানন্দকে দেখিয়া গোয়ালা বউ সরিয়া গিয়াছিল। রাত্রে একবার আমাব ঘরে আসবে, মাধু ? আদেশ নয়, অনুরোধ। মাধবীলতা নয়, মাধবী নয় মাধু। পবে দুপুরবেলা বিপিনকে ভাই বলার ভূমিকার মতো। রাত্রে ? কখন ? যখন তোমার সুবিধা হয়। সন্দেবোলা ? না, একটু রাত করে এসো। এই এগারোটা সাড়ে এগারোটার সময়। অনুরোধ নয়, আদেশ। এতক্ষণে মাধবীলতা বুঝিতে পারিয়াছিল, আহ্বানটা খাঁটি অভিসারের, ধর্ষণের ফলে প্রেমের জন্ম হওয়ায় এতদিন যে পূর্বরাগের পালা চলিতেছিল আজ তার সমাধি। আজ নয়, পরশু যাব। একটা হাত বাড়াইয়া মাধবী আমগাছের গুড়িতে স্থাপন করিয়াছিল, যেখানে ছিল পিঁপড়াদের সারি বঁধিয়া যাতায়াতের পথ। ri, TSRS আদেশ নয়, প্ৰায় ধমক ৷ আজ নয়, পরশু। মিনতি নয়, মৃদু কোমল নিবুপায় বিদ্রোহ। সদানন্দ তখন অন্ধ আর বোকা হইয়া গিয়াছে কিনা, তাই ভাবিয়া-চিস্তিয়া পাঁচ বছরের প্রিয়াকে লজেনচুসের লোভ দেখানোর মতো কোমলকণ্ঠে বলিয়াছিল, তুমি কিছু বোঝা না মাধু। আজ ত্ৰয়োদশী, মেঘ-টেঘ না করলে চমৎকার জোৎস্না উঠবে, জ্যোৎস্নায় বসে তোমার সঙ্গে গল্প করব। এসো। কিন্তু। পরশু কি জ্যোৎস্না উঠিবে না ? পরশু কি জ্যোৎস্নায় বসিয়া গল্প করা চলিবে না ? কিন্তু প্রতিবাদের যতটুকু শক্তি মাধবীর ছিল এতক্ষণে প্রায় সবটুকুই শেষ হইয়া গিয়াছে। এবার যদি সদানন্দ রাগিয়া যায় ? দুঃশাসন জানিয়াও যা বোঝে নাই, সদানন্দ কী না জানিয়া তা বুঝিবে ? তবু মাধবী অন্যভাবে চেষ্টা করিয়াছিল। উমাশশী, কুন্দ ওরা টের পাবে যে ? একটা কেলেঙ্কারি হবে।