পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S. মানিক রচনাসমগ্র এত রাত্রে বিপিন একা মাধবীলতাকে সঙ্গে করিয়া মহেশ চৌধুরির বাড়ি যাইবে। মহেশ চৌধুরির বাড়ি কাছে নয়, আশ্রম হইতে প্রায় চার মাইল পথ। বিপথে মাঠ-ঘাট বন-জঙ্গলের ভিতর দিয়া গেলে পথ কিছু সংক্ষিপ্ত হয়, কিন্তু এখন বর্ষাকালে দিনের বেলাও সে পথে যাতায়াত করা মানুষের পক্ষে অসম্ভব। আশ্রম হইতে বাগবাদ যাইতে হইলে সাতুন।ার গা ঘেষিয়া যাইতে হইবে, সাতুন বেশি দূরে নয়। সাতুন পর্যন্ত যাওয়ার আগেই পথের ধারে ছাড়া ছাড়া ভাবে কয়েকজন গৃহস্থের খানকযেক বাড়ি আর খেতখামার পাওয়া যায়, তাদের কারও কারও গোরুর গাড়ি আছে, বিপিন কি লোক পঠাইয়া গোরুর গাড়ি আনাইয়া লইবে ? অথবা মাধবীকে সঙ্গে করিয়া হাঁটিতে আরম্ভ কবিয়া দিবে, পথে ওই ছোটাে পাড়াটিতে হােক, সাতুনায় হােক, কারও কাছে সংগ্ৰহ করিয়া লইবে গোরুর গাড়ি ? গোরুর গাড়ি না পাওয়া গেলে হাঁটিয়াই হাজির হইবে বাগবাদায় মহেশ চৌধুরির বাড়িতে ? এই সব ভাবিতে ভাবিতে রত্নাবলীর সর্বাঙ্গে কাটা দেয়, আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী ক্ষাস্তবৰ্ষার রাত্রি রত্নাবলীকে ঘিরিয়া আছে, নির্জন পথ বাহিয়া দুজন হাঁটিয়া চলিয়াছে ঘুমন্ত গ্রামের গা ঘেষিয়া, পথের খানিক খানিক ভিজা চাদের আলোয় ঢাকা আর খানিক বড়ো বড়ো গাছের স্থায়ায় প্রায় অন্ধকার, কোথাও ঝোপঝাড় পথের উপর ঝুঁকিয়া পড়িয়াছে, কোথাও দুদিকেই জলভরা খেতি : হাঁটিয়া চলিতে চলিতে দুজনে কখন উঠিয়া বসিয়াছে গোরুর গাড়িতে ছাউনির মধ্যে, গাড়িব দোলনে এদিক-ওদিক টলিতে টলিতে কখন তারা জড়াইয়া ধরিয়াছে পরস্পরকে, কখন শশধরেব দুটি হাত অন্ধের দুটি হাতের মতো রত্নাবলীর সর্বাঙ্গে ব্যাকুল আগ্রহে খুজিতে আরম্ভ করিয়া দিয়াছে রত্নাবলীর সর্বাঙ্গের পরিচযএক বিপিনের সঙ্গে একাকিনী মাধবীর এত রাত্ৰে মহেশ চৌধুরির বাড়ি যাওয়ার নানারকম অসুবিধা ও অসঙ্গতির কথা ভাবিতে ভাবিতে রত্নাবলীর গায়ে সত্যই কঁটা দিয়া ওঠে ! বিপিনের কী মাথা খারাপ হইয়া গিয়াছে ? কাল মাধবীকে নিয়া গেলে চলিবে না মহেশ চৌধুরির বাড়ি ? কী ভাবছেন ? খাওয়া হয়ে থাকলে মাধবীকে পাঠিয়ে দিন বাইরে। আমিও যাই না আপনাদের সঙ্গে ? বিপিন মাথা নাড়িয়া জোর দিয়া বলিল, না না, আপনাকে কেতে হবে না। আমি সঙ্গে না গেলে মধু আপনার সঙ্গে যাবে না। মাধু যাবে কী যাবে না সেটা আপনার কাছে না। শুনে মাধুব কাছেই না হয শূনতাম ? রত্নাবলী অধীর হইয়া বলিল, বুঝেও কি বুঝতে পারেন না। আপনি ? এত রাত্রে আপনার সঙ্গে মাধুকে আমি যেতে দেব না। যদি চেষ্টা করেন নিয়ে যাবার, হইচই গন্ডগোল বাঁধিয়ে দেব। বিপিনের যে প্রতিভা কদিন হইতে মায়া-নিদ্রায় আচ্ছন্ন হইয়া ছিল, বত্নাবলীর মুখে এ কথা শুনিবা মাত্র সোনার কাঠির স্পর্শে ঘুম ভাঙার মতো চােখের পলকে জাগিয়া উঠিল। সত্যই চােখের পলকে। প্ৰত্যক্ষ প্ৰমাণ পর্যন্ত পাওয়া গেল বিপিনের চোখেই । রত্নাবলী স্পষ্ট দেখিতে পাইল একবাব কী দুবার পলক পড়ার মধ্যে বিপিনের চোখ যেন জ্বলজ্বল করিযী উঠিল। অন্ধকারে হিংস্র পশুর চোখের মতো, তারপর হইয়া গেল জ্ঞানের ছানিপড়া বৃদ্ধের চােখের মতো স্তিমিত । আপনাকে নিলে আর গোলমাল করবেন না ? मां । उभाभि नलों (5rलডাকব নাকি সবাইকে ? রত্নাবলী ভয় পাইয়া বলিল, সবাইকে ডাকবেন ? সবাইকে ডাকবেন মানে ? কেন ডাকবেন। সবাইকে ? বিপিন। গভীর মুখে বলিল, পালিয়ে যাওয়ার চেয়ে সকলের কাছে বিদায় নিয়ে যাওয়া কি ভালো নয় ? আপনি এত সংকোচ বোধ করছেন কেন, আপনি প্রথম নন, আপনার মতো দু-একজন এ ভাবে আশ্রম ছেড়ে গিয়েছে।