পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অহিংসা ৩২৩ কিছুই না ? একেবারে কিছু না ? বিপিন মাথা নাড়িযা বলে, কী বলবো ? বলবার ক্ষমতা থাকলে তো বলবে। কী কুক্ষণে যে ওর সঙ্গে আমাৰ বন্ধুত্ব হযেছিল। মাধু। মাধবী ভাষা ও বিস্মযে চুপ করিয়া থাকে। তাব জন্য বিপিন আব্ব সদানন্দের মন্যাস্তব হইয়া গেলি ? জানালা দিয়া গ্রামের পথ দেখা যায, বর্ষাযা একেবাবে শেষ করিষা দিয়া গিয়াছে, এখনও ভালো রকম মেরামত হয় নাই। পথেবা ধারে অবনী সমাদাগরেব বাড়িব সামনে একটি গোবু বাধা আছে। বোজই বাঁধা থাকে, ঘাসপাতা খায় আর কয়েকদিনেব। বাছুরটিব গা চাটে । আজ বাছুবিটি যেন কোথায় হারাইয়া গিােযাছে। আশ্চর্য না ? মাধবীলতা মেদিন যে সময় কথা পাডিল সে চলিয়া আসায় সদানন্দোিব কী অবস্থা হইযাছে, সেই দিন সেই সময বাছুরটি উধাও হাইমা গিয়া গাভিটিকে ব্যাকুল কবিয তুলিযাছে । আশ্রমের কীসে উন্নতি হবে সে চিন্তা ওব নেই, দিনরাত নিজেৰ কথাই ভাবছে। আমার এটা হল না, আমার ওটা হল না, আমাৰ এটা চাই, আমার ওটা চাই। ওকে নিয়ে সত্যি মুশকিলে পড়েছি মাধু। কেন, উনি বেশ লোক । মাধবীলতার মুখে এ কথা শুনিসা পিপিন প্রায় চমকইষা যায়। নৌকায উঠিবার আগে বাগেব মাথায় সদানন্দোিব কুটিরের দিকে পা বাড়াইযা, স্টেজে সবলা কোমলা বনবালাব অভিনযা করিয়া করিয়া হয়বান হইয়া গরম মেজাজে সাজঘরে ফিরিয়া আসা বেশ্যার মতো ফুসিতে ফুসিতে মাধবীলতা যেসব কথা বলিয়াছিল বিপিন তার একটি শব্দও ভোলে নাই। জ্যোৎস্নালোকে দেখা মুখভঙ্গিও ভোলে নাই মাধবীলতাব। সদানন্দের অত্যাচার মেযেটার অসহ্য হইয়া উঠিযাছে, তার চােখের আড়ালে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি করিবার সুযোগ সদানন্দ পাইযাছে ভাবিদ্যা সে বাগেব চেযে অনুতাপের জালাতেই জুলিয়াছিল। বেশি। সে বিপিন, আশ্রমেব কোথায় মাটিৰ নীচে কোন চাবাল বীজ হইতে অঙ্কুর মাথা তুলিতেছে এ খবব পর্যন্ত যে রাখে, তাকে ফঁকি দিয়া সদানন্দ এত কষ্ট দিয়াছে মাধবীলতাকে । কী হইয়াছিল তাব ? আগেই কেন সে অবস্থা বুঝিযা ব্যবস্থা কবে নাই ? কেন আশ্রমকে চুলায় যাইবাব অনুমতি দিয়া নিজে গা এলাইযা দিয়াছিল অসহায় শিশুব মতো ? সদানন্দেব কুটিবোব সামনে একটা কদমগাছেৰ নীচে মহেশ চৌধুবিব মহাযুদ্ধ এবং মাধবীলতাব মধ্যস্থতায় সে যুদ্ধেব সমাপ্তিব পািব কযেকটা দিন যেভাবে কাটিয়াছিল ভাবিলে বিপিনোবা এখন লজ্জা করে। শবীবটা একটু দুর্বল ছিল কিন্তু দাঁতের ব্যথা ছিল না। স্নায়ু ভোতা হইয়া থাকা উচিত ছিল বিপিনের, শ্রান্ত অবসন্ন দেহে দু-তিনদিন পড়িয়া পডিযা, ঘুমানেই ছিল তাব পক্ষে স্বাভাবিক। কিন্তু তার বদলে কী তীব্র মানসিক যন্ত্রণাই সে ভোগ কবিযাছে। বারবার কেবলই তাক মনে হইয়াছে, সে কি ভুল কবিযাছে ? ছলে-বলে কৌশলে দিগন্তের কোল হইতে তাব আদর্শের সফলতাকে আশ্রমেব এই মাটিতে টানিযা আনিবার সাধনা কি তার ভ্রান্তিবিলাস মাত্র ৫ এ ভাবে কী বড়ো কিছু মানুষ করিতে পাবে না ? নিজের জন্য সে কিছু চায় না, এইটুকুই কি তাব নৈতিক শক্তিকে অব্যহত বাখিবার পক্ষে যথেষ্ট নয় ? ন্যায় অন্যায়ের বিচাবের চেযে কার্যসিদ্ধিকে বড়ো ধবিদ্যা লইয়াছে বলিয়াই কি তার এত চেষ্টা আর আযোজন বার্থ হইযা যাইবে ? মনে মনে নিজের দুঃখ কষ্ট ও তাগ স্বীকারের হিসাব করিয়া বিপিন বড়ো দমিয়া গিয়াছে। কতটুকু লাভ হইয়াছে, কতটুকু সার্থকতা আসিয়াছে ? কোনদিকে কতটুকু অগ্রসর হইতে পারিয়াছে ? আশ্রম বড়ো হইযাছে, আশ্রমেব সম্পত্তিও বাড়িয়াছে, লোকজনও বাড়িয়াছে, কিন্তু উন্নতি হয় নাই। ভালো উদ্দেশ্যে যে মিথ্যা। আর প্ৰবঞ্চনা আর ফন্দিবাজিকে সে প্রশ্রয় দিয়া আসিয়াছে, সে সব একান্তভাবে তার নিজস্ব গোপন পরিকল্পনার অঙ্গ, আশ্রমের জীবনে কেন সে সমস্তের প্রতিক্ৰিয়া ফুটিয়া ওঠে ? আর এদিকে মহেশ চৌধুরি, সরল নিরীহ বুদ্ধিহীন ভালোমানুষ মহেশ চৌধুরি, না চাহিয়া সে সকলের হৃদয় জয় করিয়াছে, না জানিয়া নিজের দুঃখময় ব্যর্থ জীবনকে পর্যন্ত সার্থকতায় ভরিয়া তুলিয়াছে। কী এমন মহাপুরুষ