পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অহিংসা \\లి অপমান করিয়াছে। সদানন্দের অপমান অনেকটা গা-সহা হইয়া আসিয়াছে মহেশ চৌধুরির। কিন্তু বিপিনের অপমান সে সহ্য করিবে কেন ? দুজনে যদি এখন কলহ বাধিয়া যায় ! মহেশ চৌধুরি কী বলে শুনিবার জন্য সকলে উৎকৰ্ণ হইয়া থাকে। মহেশ চৌধুরির মুখ দেখিয়া বিশেষ কিছু বুঝা যায় না। বিপিনের ধমকটা তার কানে গিয়াছে কী না এ বিষয়েও যেন কেমন সন্দেহ জাগে ! চাহিয়া সে থাকে মাধবীলতার মুখের দিকে। কিছুক্ষণের জন্য তার দৃষ্টি এমন তীক্ষ্ণ ও অস্বাভাবিক মনে হয় যে, এতদিনেব। ঘনিষ্ঠ পবিচায়ের পর তার একটা নতুন বৃপ আবিষ্কারের সম্ভাবনায় শশধর ও সদানন্দের কেমন ধাঁধা লাগিয়া যায়। মহেশ চৌধুরির মুখ ধীরে ধীরে গম্ভীর হইয়া আসে। আকাশের দিকে একবার মুখ তুলিয়া উদাস কণ্ঠে সে বলে, মাধু আশ্রমে আসতে পাবে না। হুকুম দিয়েছিলেন, আমি জানতাম না। বিপিনবাবু ! মহেশ চৌধুরির ভঙ্গিটাই মারাত্মক। তার উপর হুকুম শব্দটা সকলের কানে যেন বিধিয়া যায়। মাধবীলতার অপরাধক্লিষ্ট মুখের স্নানিমায় স্নায়বিক মুঢ়তার ভাবটাই এতক্ষণ স্পষ্ট হইয়াছিল, তবে মহেশ চৌধুরি ছাড়া সেটা কেউ বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখিয়াছিল। কিনা সন্দেহ। নিজের প্রয়োজনে কে আবি ও ভাবে তৰুণী মেয়ের মুখ দেখিতে শেখে ? সোজাসুজি ভীরুতা আর কোমলতার অভিব্যক্তি বলিয়া ধরিয়া নেওয়ায় কত ভালো লাগিতেছিল। সকলেব, কেমন দরদ সকলে বোধ করিতেছিল মেয়েটার জন্য ! কিন্তু ও রকম বর্বরের মতো মায়া করা মহেশ চৌধুরিব ধর্ম নয়, ও বকম সংকীর্ণ স্বাথপবিতা ৩ার নাই। মানুষের এই স্বাগত রসানন্দকৃপী পিপাসা-সৃষ্টির আগ্রহ ক্ষয় হইযা যাওয়ায় অসংখ্য ছোটাে ছোটো মুক্তির মধ্যে মহেশ শক্তি সঞ্চয় কবিয়াছে। মাধবীলতার ভীরু কোমল কঁদো কঁদো মুখখানা দেখিয়া মহেশ চৌধুরি ছাড়া আর কে বুঝিতে পারিত তার ভয় বা দুঃখ হয় নাই, আকস্মিক স্নায়বিক উত্তেজনায় সে একটু দিশেহারা হইয়া গিয়াছে ? খোঁচা দিয়া তাব আত্মমর্যাদার জ্ঞান জাগাইয়া তুলিবার এবং তার অবরুদ্ধ তেজকে মুক্তি দিবাব বুদ্ধি বা সাহস আর কার হইত ? সোনালি রোদের মতোই মাধবীলতার মুখে লালিমার আবির্ভাব ঘটিতে দেখিযা মহেশ আবাব বলে, এবাবকার মতো। ওকে মাপ করুন বিপিনবাবু। আপনি ওকে বাবণ করেছেন জানালে-বিপিনের আদেশ অমান্য করায মাধবীলতার যে অকথ্য অপবাধ হইয়াছে তার বিরাটত্ব অনুভব কবিয়া মহেশ চৌধুবি নিজেই যেন সংকুচিত হইযা যায, কোনো রকমে। এবারকার মতো মেয়েটাকে বিপিনের ক্ষমা পাওয়াইয়া দিবার ব্যাকুলতাষ যেন দিশেহাবা হইয়া যায। মাধবীলতার হইয়া সে যেন বিপিনেব পায়ে ধরিয়া বসিবে। এবার মাধবীলতা ফোস করিযী উঠে, বাবণ কবেছেন মানে ? উনি বাবণ করবার কে ? বেশ করেছি। আমি আশ্রমে এসেছি। বিপিন বলে, আশ্রমটা বেড়াবাব জায়গা নয। মাধু! মাধবীলতা বাঙ্গ কবি যা বলে, কী করবেন, মারবেন ? সদানন্দ বলে, আহা, কী আরম্ভ করে দিয়েছ তোমরা ? সে কথা কানে না তুলিয়া বিপিন রাগে। কঁাপিতে কঁাপিতে বলে, ছেলেমানুষি কোরো না মাধু। আমার সঙ্গে এসো। মহেশ তাড়াতাড়ি সায় দিয়া বলে, যাও মা, যাও। বিপিনবাবুর সঙ্গে যাও । মহেশ চৌধুরি ফোঁড়ন না দিলে হয়তো মাধবীলতার উদ্ধত ভাবটা ধীরে ধীরে নরম হইয আসিত। বিপিনের সংযমহারা রাগ দেখিতে ভিতরে ভিতরে তাব যেন কেমন ভালো লাগিতেছিল। সেদিন রাত্রের কথা মাধবীলতার মনে পড়িয়া গিয়াছে, বিপিন যখন তাকে মহেশ চৌধুরির বাড়ি রাখিয়া আসিয়াছিল। সে রাত্রের স্মৃতি ভুলিবার নয়, মাধবীলতা ভুলিয়াও যায় নাই। হঠাৎ তার