পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ー)8 ○ মানিক রচনাসমগ্র আশ্রমের আয়ে প্রথম থেকে তোর অধিকার ছিল ? ছিল বইকী। আমার নামে আশ্রম হল। আশ্রমের আয় আমার হবে না ? লোকসান হলেও অবশ্য আমার ঘাড়ে চাপত। প্রথমে ক-জনকে নিয়ে কতটুকু আশ্রম হয়েছিল মনে আছে সদা ? তখন তোরা ভাবতেও পারিসনি একদিন আশ্রম এত বড়ো হবে।--দিনরাত কেবল কানেক কাছে ঘ্যানঘ্যান করতি, আশ্রম চলবে না, আশ্রম চলবে না। রাজাসাহেবও আশ্রমের এ রকম উন্নতির কথা ভাবতে পারেননি, তাই প্ৰথম দফার অল্প জমি আমাকে একেবারে দান করে দিয়েছিলেন। পরের দফায় যখন জমি দিলেন, তখন করলেন কী জানিস, এত সব অধিকার চেয়ে বসলেন যে আশ্রম নিয়ে যা খুশি করতে পারেন। আমি তাতেই রাজি হয়ে গেলাম। জানতাম, একদিন সমস্ত ক্ষমতা আবার আমার হাতেই ফিরে আসবে। এক মুহূর্তের জন্য বিপিন থামিয়াছিল, তারপর আবার বলিয়াছিল, এ সব কথা তোকে বলতাম না, তোকে আর শাখা চলবে না বলেই বললাম। আমার আশ্রম ছেড়ে তুই চলে যা ভাই, দোহাই তোর। গোলমাল তুই করতে পারিস, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না, যেতে তোকে হবেই। গোলমাল না করে যদি চলে যাস, আশ্রমের এতদিনের লাভের একটা ভাগ বরং তোকে দেব, যতই হােক, এতদিন তো তুই আশ্রমের উন্নতিতে সাহায্য করেছিস, কিছু দাবি তোর আছে। ওই টাকায় যেখানে খুশি নিজের একটা ছোটােখাটাে আশ্রম তুই খুলতে পারবি। রাত্রি বাড়িবার জন্যই ঘরের আলোটার জ্যোতি যেন একটু ঘনীভূত হইয়া আসিয়াছে বলিয়া মনে হইয়াছিল। দুজনে চুপ করিয়া থাকিয়াছে। বিপিন একবার ভালো করিয়া মুখখানা দেখিয়াছে সদানন্দের, সদানন্দ একবার ভালো করিয়া মুখখানা দেখিয়াছে বিপিনের। ব্যাপারটা গুবুতর তাই তারা ভিন্ন কে বুঝিবে কী গুরুত্ব সেই দেখার ! দুজনে তারা বন্ধু, বন্ধুর মধ্যে ছাড়া এমন ব্যাপার ঘটে না, এ রকম বিচ্ছেদের ব্যবস্থা হয় না। সদানন্দ কী বলিত অনুমান করা কঠিন, বিপিন একটা খাপছাড়া কথা বলিয়া বসায় সে আর মুখ খোলে নাই। আরও একটা জিনিস তোকে দিলাম সদা। মাধুকে তুই নিস। ওকে দিয়ে আমার আর দরকার নেই। বিপিনের শেষ কথাটার কোনো মানে হয় ? মাধবীলতাকে সে দান করিয়া দিল, মাধবীলতা যেন তার সম্পত্তি !! আশ্রমটা সম্পূর্ণরূপে নিজের দখলে আনার জন্য এতদিন মাধবীলতাকে তার দরকার ছিল, এখন আর দরকার নাই। তাই বন্ধুকে দিয়া দিয়াছে। কেমন লাগে কথাটা ভাবিতে ? মনটা কী রকম জ্বালা করে ? কে বলিয়াছে বিপিনকে, মাধবীলতাকে তার দরকার আছে ? তবু বিপিনের কথার একটা ইঙ্গিত নিন্দনীয় অভিপ্ৰায়ের ধারাবাহিক অবাধ্যতার মতো মনের মধ্যে পাক খাইয়া বেড়ায়। মাধবীলতাকে নিয়া সদানন্দ এবার যা খুশি করিতে পারে, বিপিনের দিক হইতে এতটুকু বাধার সৃষ্টি হইবে না। মাধবীলতাকে বিপিন আশ্রমে আনিয়াছিল। কিন্তু ওর সম্বন্ধে সমস্ত দায়িত্ব তার শেষ হইয়া গিয়াছে। হয়তো এতটুকুই ছিল বিপিনের আসল বক্তব্য। মাধবীলতার সম্বন্ধে বন্ধুকে অভয় দেওয়া। মহেশ যখন সদানন্দকে তার ঘরে একা বিশ্রাম করিবার সুযোগ দিয়াছে, সকলকে বারণ করিয়া দিয়াছে। ঘরে যাইতে, তখন মাধবীলতা আসিয়া হাজির হয়। ব্যাপার কী বলুন তো ? এসো মাধু। বোসে। বসছি, কিন্তু ব্যাপারটা কী হ’ল ?