পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অহিংসা vobro সারাদিন তো বটেই, সারারাতও থাকতে পারি। মাধবীলতা এই উদ্ভট সিদ্ধাস্তের কারণটা জানিবার চেষ্টা আরম্ভ করার আগেই মহেশ চৌধুরি উঠিয়া চলিতে আরম্ভ করিয়া দিল। সদানন্দ তখন চোখের আড়ালে চলিয়া গিয়াছে। নদীর ধারে অনেক খোঁজাখুঁজি করিয়াও তার দেখা না পাইয়া মহেশ চৌধুরি অবশ্য বুঝিতে পারিল যে নদীর দিকের খিড়কি দিবাজা দিয়া সদানন্দ কুটিরে ফিরিয়া গিয়াছে, কিন্তু নিজে সে কুটিরে ঢুকিল না। রত্নাবলীর কুটিরে ফিরিয়া গিয়া মাধবীলতাকে বলিল, ওঁকে একবার ডেকে আনো তো মাধু। মাধবীলতা অবাক। ডেকে আনিব ? এখানে ? হ্যা। বলে গে। আমি একবাব দেখা করতে চাই । মহেশ চৌধুরি হুকুম দিয়া ডাকিয়া আনি যা দেখা করিবে সদানন্দের সঙ্গে। প্রতিবাদ করিতে গিয কিছু না বলিযাই মাধবীলতা চলিয়া গেল। হঠাৎ তাব মনে পড়িয়া গিয়াছিল মহেশ চৌধুরির পাগলামির মানে বুঝিবার ক্ষমতা এতদিন এক বাড়িতে থাকিয়াও তার জন্মে নাই। প্রায় একঘণ্টা পরে, রত্নাবলী যখন ব্যস্ত আর বিব্রত হইয়া বারবার বলিতে আরম্ভ করিয়াছে যে তাব একবার গিয়া খোঁজ করিয়া আসা উচিত, মাধবীলতা ফিরিয়া আসিল। সদানন্দ বলিয়া পাঠাইফাছে, দেখা করিবার দরকার থাকিলে মহেশ চৌধুরি যেন সন্ধ্যার পর তার সঙ্গে গিয়া দেখা করিয়া আসে। শুনিয়া নিঃশ্বাস ফেলিয়া মহেশ চৌধুরি বলিল, চলো আমরা ফিরে যাই মাধু। সাংবাদিন এখানে থাকবেন বলেছিলেন যে ? আর থেকে কী হবে ? ভেবেছিলাম মানুষটা বুঝি হঠাৎ বদলে গেছে, কিন্তু মানুষ কী কখনও বদলায় ? মানুষ যে বদলায় না, তার আর একটা মস্ত বড়ো প্রমাণ পাওয়া গেল ফিরিবার পথে। চরডাঙা গ্রামেব কাছাকাছি মস্ত একটা মাঠে পচিশ-ত্রিশজন অর্ধ উলঙ্গ নোংরা মানুষকে আত্মহত্যা করিতে বিভূতি নিষেধ কবিতেছে। মুখে ফেনা তুলিযা এমনভাবে নিষেধ করিতেছে যেন কোনো বকমে এই লক্ষ্মীছাড়া বোকা মানুষগুলোকে কথাটা একবার বুঝাইয়া দিতে পারিলেই তারা হত্যা করিবে তবু আর এ ভাবে আত্মহত্যা করিবে না ! একসঙ্গে খাইতে বসিয়া মহেশ চৌধুবি সোজাসুজি জিজ্ঞাসা করিল, আবার কি তুমি জেলে (25 543 ? সাধ করে কেউ জেলে যায ? বিভূতির মেজাজটা ভালো ছিল না। আমন করে ওদের খেপিয়ে তুললে জেলেই তো যেতে হয় বাবা ? একটু কিছু ঘটলেই তোমাকে ধরে নিয়ে যাবে। 0न्म: 6न्मt<! ! মহেশ চৌধুরি ডালমাখা ভাত খায় আর ভাবে! খুঝাইয়া কোনো লাভ হইবে না। এই কথাটাই অনেকবার অনেক ভাবে ছেলেকে সে বুঝাইয়াছে যে, অকারণে জেলে গিয়া কোনো লাভ হয় না, সেটা নিছক বোকামি—কাজের মতো কোনো কাজ কািরয়া ছেলে তার হাজারবার জেলে যাক, হাজার বছরের জন্য জেলে যাক মহেশ চৌপরির তাতে তো কোনো আপত্তি নাই ! কিন্তু পাহাড়ে উঠিবার উদ্দেশে সমুদ্রে ঝাপ দেওয়ার মতো দেশ আর দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য চোখ কান বুজিয়া জেলে যাওয়ার তো কোনো অর্থ হয় না। মনে হইয়াছিল, বিভূতি বুঝি কথাটা বুঝিতে পারিয়াছে— বিভূতি চুপচাপ শুনিয়া গিয়াছে, তর্কও করে নাই, নিজের মতামত জাহির করিবার চেষ্টাও করে নাই। আজ আবার মহেশ চৌধুরির মনে হইতে লাগিল, অনেকদিন পরে বাড়ি ফিরিয়া সে শুধু বাপের সঙ্গে কথা কাটাকাটি এড়াইয়া চলিয়াছিল, কথাগুলি তার মাথায় ঢেকে নাই।