পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৩৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V. S. মানিক রচনাসমগ্র মহেশ শ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছিল, আর তার তর্ক করার ক্ষমতা ছিল না। তখনকার মতো সে চুপ করিয়া গেল। কিন্তু বিভূতি উঠিয়া যাইবার উপক্ৰম করিতেই আবার তাকে ডাকিয়া বসাইয়া বুঝাইবার চেষ্টা আরম্ভ করিয়া দিল। রাগ করিয়া, মিষ্টি কথা বলিয়া, মিনতি করিয়া, কতভাবেই যে সে বিভূতিকে নিবৃত্ত কবার চেষ্টা করিল। যতই সে কথা বলিতে লাগিল বিভূতির কাছে ততই স্পষ্ট হইয়া উঠিতে লাগিল তার ভয়ের পরিচয়-মারি খাইয়া মহেশ চৌধুরি মার ফিরাইয়া দিয়াছে মানুষের কাছে এই রকম অসভ্য বর্বরবৃপে পরিগণিত হওয়ার ভয় ! মহেশ চৌধুরিকে এমন দুর্বল বিভূতি আর কখনও দেখে নাই। শেষে বিরক্ত হইয়া সে বলিল, আচ্ছা সে দেখা যাবে। বলিয়া ঘব छ्ाङ्घ्रि 5व्नि (ताळ । নিজের ঘরে গিয়া বিছানায় শূইয়া পড়িয়া সে ভাবিতে লাগিল। হাতাহাতি মারামারি সে নিজেও কোনোদিন পছন্দ করে না, ও সমস্ত সতাই নীচতা। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই কি তাই ? মহেশ চৌধুরি কোনো অপরাধ করে নাই, কেবল তাব বাবা বলিয়া তাকে যারা মারিয়াছে, উদারভাবে তাদের ক্ষমা করাটা কি উচিত ? তাকে কি উদারতা বলে ? তার চেয়ে ছোটোলোকোব মতো। ওদের ধরিয়া কিছু উত্তম-মধ্যম লাগাইয়া দেওয়াই কি মহত্ত্বের পরিচয় নয়, মনুষ্যত্বের প্রমাণ নয ? ভাবিতে ভাবিতে বিভূতি বুঝিতে পারিল, মাধবীলতা ঘরে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। গতবাত্রে মাধবীলতাকে বিশ্ৰী ধমক দিয়া কঁাদানোর কথাটা মনে পড়ায়, ভাব করব। উদ্দেশ্যে হঠাৎ সে মাধবীলতাব কাছে পরামর্শ চাহিয়া বসিল । মাধবীলতা চোখ বড়ো বড়ো করিয়া বলিল, ওদেব মেরে ফেলা উচিত, খুন কবে ফেলা উচিত। বিভূতি হাসিয়া বলিল, সত্যি ? কিন্তু ওরা যদি আমায মেবে ফেলে ? বিভূতি হাত বাড়াইয়া দিতে মাধবীলতা তার বুকোব মধ্যে ঝাপাইয়া পড়িল। এতক্ষণ যেন অধীর আগ্রহে সে এই জন্যই অপেক্ষা করিতেছিল। বিকাবের সঙ্গে ভালোবাসার তীব্রতা বাড়িয়া গিয়াছে। বিকার ছাড়া স্বাভাবিক মাযা-মমতা জোরালো হয় না। একরাত্রিব অভিমান সংক্ষুব্ধ বিবত মাধবীলতাকে অধীর করি যা দিয়াছে। হাঙ্গামার ফলে নন্দনপুবে যাত্রা আব্ব কীর্তন বন্ধ হইযা গেল, সেই যাত্রা আব্ব কীর্তন প্রভৃতির ব্যবস্থা কবা হইল আশ্রমে। বুদ্ধিটা মাথাব্য আসিল কয়েকটি প্রামেব মাতব্বরদের। তাবা ভাবিয়া দেখিলে, আশ্রমে সব গ্রামের লোকের সমান অধিকার, সেখানে বিশেষ সুবিধাও কেউ দাবি কবিতে পরিবে: না, বদমাইশি কবিয গোলমাল সৃষ্টি করাব সাহসও কারও হইবে না। যেদিন সকালে মহেশ চৌধুরিব জ্ঞান ফিরিয়া আসিল সেইদিন দুপুরে আরম্ভ হইল শ্ৰীকৃষ্ণের জন্মলীলা কীর্তন। রাত্রি আটটা-নটার সময় যাত্ৰাভিনয় আরম্ভ হইবে এবং সমস্ত রাত চলিবে। বিভূতি যখন দল বাধিয়া বাপেৰ প্ৰহারকাবীদের খোজে বাহিব হইল, তখন পুরা দমে কীর্তন চলিতেছে। বাছা বাছা কয়েকজন ভক্তকে সঙ্গে করিয়া পাঁচটি অপরাধীর খোজ করিতে গিয়া বিভূতি শুনিল, তারা সকলে কীৰ্তন শুনিতে গিয়াছে। বিভূতি তখন সোজা আশ্রমে চলিয়া গেল। আসর লোকে ভরিয়া গিযাছে। কীর্তনেব দলটি নামকরা, প্রধান কীর্তনিয়ার গলাটি মধুর আর আবেগ-রোমাঞ্চকবি-শ্ৰীকৃষ্ণ কেন জন্মিবেন, যুগে যুগে তপস্যা করিয়া যোগী-ঋষিরা যার হদিস পায়। না। তিনি কেন নিজে মানুষের মধ্যে মানুষের বৃপ ধরিয়া আসিবেন এই কথাটা সুর করিয়া বুঝাইয়া বলিতে বলিতেই সে সকলকে একেবারে মাতাইয়া দিয়াছে, গদগদ করিয়া তুলিয়াছে। কয়েকজনের চোখে জলও দেখা দিয়াছে। সদানন্দের কিছু তফাতে অপরাধী পাঁচজন বসিয়াছিল। মনে তাদের একটু ভয় ঢুকিয়াছে, মহেশ চৌধুরি যদি মরিয়া যায়! কাছাকাছিই বসিয়া চুপিচুপি ইঙ্গিতে তারা এ বিষয়ে প্রথমে একটু