পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৪১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 মানিক রচনাসমগ্র দিয়া তাদের দিকে একটু নজর রাখিয়াছিল বলিয়া প্রমাণ হইয়া গিয়াছে, ভূপেনের ছেলে আর বউয়ের জন্য তার একটুও দরদ নাই। দুজনে মরিয়া গেলে সে খুব কঁাদিয়াছিল, দারুণ শোকের মধ্যেও সকলে বলাবলি করিয়াছিল তার শোকের বাড়াবাড়ির কথা। ভূপেনের বউয়ের সঙ্গে তার মনোমালিন্য ছিল বলিয়া, সাধারণ দৈনন্দিন জীবনে কতগুলি ব্যাপারে ঠোকাঠুকি লাগিত বলিয়া, সে মরিয়া গেলেও যেন তার শোক হওয়া উচিত নয় ! শোকের প্রথম ধাক্কায় সকলে যখন নানারকম পাগলামি আবিস্তু করিয়াছে, তখনও সে শিশুগুলিকে যত্ন করিয়াছিল, সকলকে একটু সংযত করিবাব চেষ্টা করিয়াছিল। সে জন্য দিদি যে তাকে কতবার শুনাইয়াছে ঠিক নাই : বেঁচেছিস বড়োবাউ, না ? বড়োলোকের মেয়ে ছিল, সকলের আদুরে ছিল, হিংসেয় তাই জুলে মরতিস,-হাড়ে তোর বাতাস লেগেছে, না ? অন্যসময় তার সম্বন্ধে এ ধবনের কথা মনে আসিলেও বাড়িব লোকে সাধারণত চুপ করিয়াই থাকে, অথবা আড়ালে দু-চারজন চুপিচুপি নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে। বাড়িতে একটা অসাধাধণ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় মুখ আর কারও আটক থাকে নাই, যা মনে আসিয়াছে মুখেব উপব বলিয়া বসিয়াছে। প্রভাকে ডাকিতে বারণ করিলে ভূপেন যদি কিছু ভাবিয়া বসে, আর এখনকাব মনের অবস্থায়, বলিয়া ফেলে ? মেযেদের কথা বউদিদি গ্রাহ্য কবে না, কিন্তু ভূপেন অন্যায় কিছু বলিলে বড়েই অপমান হইবে। সে অপমান সহ্য করার ক্ষমতা তাব হইবে না, হয়তো চটচটিই হইয়া যাইবে ভূপেনের সঙ্গে। এখন ভূপেনেব সঙ্গে চটচটি হওযা উচিত হইবে না। বিবাহ করাব আগে ভূপেনোেব সঙ্গে তার বড়ো ভাব ছিল। আবার ভূপেন একা মানুষ হইয়া গেল। বিবাহ যদি আবার সে করেও,-করিবে যে তাতে অবশ্য বউদিদির কোনো সন্দেহ নাই,-দু-একটা বছর তো এমনি কাটিয়া যাইবে। এই সমযের মধ্যে বউদিদির সঙ্গে আবার কি আগের মতো ভােব কবিবে না। ভূপেন ? কয়েক মাস পরে বউদিদিব বড়ো মেয়েটার বিবাহে কর্তব্যবোধে যতটা কবুক, ‘ভাইঝির উপর মেহের বশে দুটি ননদকে মূৰ্ছা যাইতে দেখিয়া মনের দুর্বলতায় বউদিদি কঁদিয়া ফেলিযাছিল। ভূপেনেল শাস্ত ভাব দেখিয়া আর প্রভাকে ডাকিবার কথা শুনিয়া চোখেব পালকে কান্নাও বন্ধ করিয়া ফেলে, এত সব কথা তার ভাবাও হইয়া যায়। ভূপেনের পরামর্শ চাওযার জবাবে আমতা-আমতা কবিয চারিদিক বজায় রাখিয়া পালটা প্রশ্ন করে। স্পষ্ট বলে না যে এত রাত্রে প্রভাকে ডাকা উচিত নয়। প্রভাকে ডাকাই যে ভালো তাও বলে না। কিন্তু তাব কথা শুনিয়া ভূপেনকে মুখ গন্তীর করিয়া নীবলে ভাবিতে দেখিয়া, বউদিদি একটু ভড়কাইয়া যায়। নিজের বক্তব্য আবও পরিষ্কাব করিয়া বলে, তা তুমি যা ভালো বোঝা তাই করে। আমি ও সব কী বুঝি ! ভূপেন জিজ্ঞাসা করে, প্রভাকে তোমার কেমন লাগে বাউদি ? বউদিদি লাগসই জবাব খুজিতে খুজিতে ভূপেন আবার জিজ্ঞাসা কবে, আচ্ছা, সেদিন আমার নামে কী সব বলছিল না তোমাদের কাছে ? আমি ভীষণ শক্ত মানুষ, দযামায়ার ধার ধারি না, এইসব ? বউদ্দি বলে, কই না, ও সব কিছু তো বলেনি। ঠাকুরঝিদেব কাছে যদি বলে থাকে এতক্ষণে অনু উঠিয়া বসিয়াছে। ভূপেন তাড়াতাড়ি প্রভাকে ফোন করিতে নীচে চলিয়া গেল। সকলে সুস্থ হইয়া উঠিলে এত রাত্রে তাকে ফোন করার আর উপলক্ষ থাকিবে না। প্রভা আসিয়া পৌঁছতে পৌঁছতে রাত্ৰি বারোটা বাজিয়া গেল। দিদি এবং অনু তখন বেশ সুস্থ হইয়া উঠিয়াছে। সারাদিন প্রভার দেহ এবং মন দুয়েরই অনেক পরিশ্রম গিয়াছে। বাড়ি ফিরিয়া ঘুমানোর আয়োজন করিতে করিতে ভূপেনের জোর তাগিদে উঠিয়া আসিয়াছে। বিরক্ত হইয়া মুখভার করিয়া সে বলিল, কাল সকালে ডাকলেই পারতেন।