পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধরাবাঁধা জীবন 8vov তাকায় না। আজ জানালা হইতে সরিয়া আসিযা একাগ্র দৃষ্টিতে বহুক্ষণ সে সবামাব ফটোর দিকে চাহিয়া রহিল। না, সরমাকে সত্যই সে ভালোবাসে নাই, প্রভাকে যেমন ভালোবাসে। কিন্তু সরমা তাব জীবনের অনেকখানি জুড়িয়া ছিল। তার দৈনন্দিন। ধরাবাঁধা জীবনে আতখানি অধিকাৰ বিস্তারের ক্ষমতা প্ৰভারিও কোনোদিন হইবে না। অনিবার্য অবিরাম মোহের মতো প্ৰভা তার মনকে আচ্ছন্ন কপি যা রাখিয়াছে, প্ৰভা আজি মরিয়া গেলে তার জীবনীশক্তি ঝিামাইয়া পড়িবে, চেতনা স্তিমিত হইয়া আসিবে। সরমা মরিয়া যাওয়ায তার কষ্ট হইতেছে, অসহ্য কষ্ট হইতেছে! দিনান্তে একত্ৰ বসিয়া প্রভার সঙ্গে দু-দণ্ড কথা বলিতে না পারিলে সে বাঁচিযা থাকিতে পারে, সরমাকে সর্বদা কাছে না পাওন্যান্য জীবনটাই তার দুর্বাহ হইয়া উঠিয়াছে। প্ৰভা সরমা হইতে পরিবে না। ওই অজানা অচেনা শাস্তি মেয়েটি হযেতো সবমাকে নকল করিতে পারে, প্ৰভা পরিবে না। কাজের ঘরে যাওয়াব জন্য বারান্দায় আসিতেই সংসারের বিচিত্র কলরব ভূপেনের কানে আসে। পিসি কাকে বকিতেছে। বিমলা শিখিতেছে গান। পাশের ঘরে বিমলা আর স্বর্ণ কথা বলিতেছে। নীচের ঘরে ছোটো ছেলেমেয়েরা গোলমাল কবিতেছে। মা ঠকঠক করিয়া হামানদিস্তায় গুড়া কবিতেছেন পানের মশলা। বান্নাঘর হইতে শব্দের বদলে ভাসিয়া আসিতেছে। সম্ভাবের তীব্র সুবাস। উপেনের সিগাবের কড়া গন্ধও সেই ঝাঝালো সুবাসের নীচে প্রায় চাপা পড়িয়া গিয়াছে। নিয়ম আছে। সখেব সংসাব পাতিবাব কতগুলি নিযম আছে, চোখ-কান বুজিয়া সেগুলি মানিয চলি৩ে - ধ - অজিত এই কথা বলিয়াছিল। বলিয়াছিল, নিয়মগুলি সে সাধনাব মতো মানিয়া চলে বলিযা সে সুখী। সাংসাবিক সুখ-শাস্তির আতিশয্যে অজিতের যে সত্যই ছোটােখাটাে একটি স্টুড়ি গড়িয়া উঠিতেছে তাও চোখ মেলিয়া চাহিলেই দেখা যায। তার কথাই কি ঠিক দ্য সুখী হওয়া কি এত কঠিন আব্ব সহজ ? আট-ন বছৰ ধবিয়া ভালোবাসার ব্ৰত পালন কবিবাব পাবেও যাকে ভালোবাসা যায। তাকে লইযা সংসার পাতিয়া সুখী হওয়া যায় না, অজানা অচেনা শাস্তিকে লইয়া অনাযাসে পাতা যায সুখেব সংসার ? হয়তো তাই। সংসারে ভালোবাসাব স্থান নাই। সুখশাস্তির সঙ্গে সম্পর্ক নাই ভালোবাসাব । হঠাৎ-পড়া গরমের পর দুদিনেব জন্য বসস্তেব নাতিশীতোষ্ণ বাতাস বহিতে শুবু কবিল। যাব বসন্ত শুধু তাকে তোলা কাব্যের পাতায় থাকে, তাকেও স্বীকার কবিতে হইল বসন্তেব্য বাতাসে দেহমানের কমবেশি কিছু পরিবর্তন ঘটিযোছে। মন উড়াউড় না। কবুক, অন্তত ক্ষুধা আর উৎসাহ যে একটু বাড়িয়াছে বেশ বুঝা যায়। বিকালে প্রভা নিজেই ভূপেনকে তার বাডি যাইতে বলিযাছিল। বিকালে ভূপেন গিযা শুনিল, দুপুরে সে কোথায় বাহির হইয়াছে, সন্ধ্যার আগেই ফিবিবে। প্ৰসন্ন বলিল, তোমায় বসতে বলে গেছে। ভূপেন বলিল, আসতে না বললেই হত। প্ৰসন্নও মুখভার করি যা বলিল, ওর এই বকম স্বভাব। প্ৰসন্ন নিন্দ করায় ভূপেন তখন প্রভাকে সমর্থনা কবিয়া বলিল, ডাক এলে না গিয়ে তো উপায় নেই। রোগীর কথা আগে ভাবতে হবে বইকী। প্ৰসন্ন একটা নিশ্বাস ফেলিল। সে বড়ো আশ্চর্য নিশ্বাস, এত বেশি ক্ষোভে ভরা যে শুনিলেই বুঝিতে পারা যায় নিশ্বাসটা ক্ষোভের, হতাশার নয়।