পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 ○br মানিক রচনাসমগ্র না। তোমার ওপর কখনও রাগ করেছি। প্ৰভা ? একটা শুধু ভয় আছে আমার। আবার পাগলামি করবে না তো, যেমন আরম্ভ করেছিলে ? ভূপেন মৃদু হাসিয়া মাথা নাড়িল।—এই জন্যে তুমি রাজি হয়েছিলে, না ? আমাকে বাঁচাবার ଐକ୍ଯ] ? শূন্দু ওই জন্যে নয়। ঠাকুর চা সন্দেশ আর জলের গ্লাস রাখিযা গেল। ভূপেন খেয়াল করিযা আশ্চর্য হইয়া গোল জীবনের এমন গুরুতর ব্যাপারের যখন নিষ্পত্তি হইতে থাকে তখনও পেটের তাগিদ চাপা পড়ে না, তার রীতিমতো ক্ষুধা পাইয়াছে ! মুখে তুলিবাব জন্য সন্দেশের প্লেটেব দিকে সে হাত বাড়াইতে যাইতেছে, প্ৰভা উঠিযা আসিয়া পাশে দাঁড়াইয়া নিজেই তার মুখে সন্দেশ তুলিয়া দিল। ঠাকুর তখন স্ট্রলিয়া গিয়াছে। শুধু ওই জন্যে নয়। কী যে হযেছে আমার, ভালো বুঝতে পাবি না। তোমায় নিয়ে কত রকম স্বপ্ন দেখি, কত কল্পনা করি, কিন্তু সত্যি সত্যি সব ঘটবে ভাবতে গেলেই কেমন ভযা হয়। মনে হয়, যেমন ভাবি সে রকম কিছুই হবে না, বিশ্ৰী লাগবে শেষ পর্যন্ত। চেয়ারের পিছনে সরিয়া গিয়া প্ৰভা ভূপেনের কাধে দুটি হাত রাখে। আমি ভাবছি, বিয়েতে কােজ নেই। অতি ধরাবাঁধার মধ্যে আমরা যেতে পাবিব না। তার চেযে বরং তাও আমরা পারব না প্ৰভা ৷ কপালে হাত রাখিয়া ভূপেনের মাথা নিজেব শৰীবে চাপিযা বাখিযা প্ৰভা অনেকক্ষণ তেমনইভাবে দাঁড়াইয়া রহিল। তারপব অতি ক্লান্ত অতি মৃদু স্বরে বলিল, তা জানি। কিন্তু থাকতে পারিছ না বলে তুমি যে পাগলামি শুরু করে দিয়েছিলে আবার কী ঝোক চাপবে তোমাব কে জানে। তার চেয়ে সব কিছুই ভালো। আর পাগলামি করব না প্ৰভা । *ă কানের কাছে মুখ নামাইয়া প্ৰভা ফিসফিস কবিয়া বলিল, শোনো। তোমায় জানিযে রাখি। আজ থেকে আমি তোমার হয়ে রইলাম। যেদিন খুশি, যখন খুশি, আমাকে চাইলেই পাবে। বাত দুটাের সময় তুমি যদি আমায় ফোন করে ডাকো, ট্যাক্সি না পাই পাযে হেঁটে আমি তোমাব কাছে চলে যাব। তুমি কিন্তু শান্ত হযে থাকবে, নিজেকে ধ্বংস করতে পাববে না। কেমন ? 函 জীবনে যতদিন স্বাদ-গন্ধ থাকে, মানুষের মনে হয় জীবনকে সে আয়ত্ত করিয়াছে, জীবন-কাব্যের সেই কবি। যে রকম স্বাদ- গন্ধই থাক, কটু অথবা মধুর, পাঁকের অথবা গোলাপের। স্বাদ- গন্ধ যখন উবিয়া যায়, প্রত্যাশা অথবা বিস্ময়ের দিন হয় শেষ, তখন মানুষের খেয়াল হয় জীবন তার অধিকারের বাহিরে, নিজের জীবনে নিজে সে কিছুই নয়। প্রভার সঙ্গে শেষ বুঝাপড়া হইয়া গিয়াছে। বুঝিবার বা বুঝাইবার আর কিছুই বাকি নাই। স্বপ্ন আর কল্পনা সৃষ্টির কারখানায় বিচিত্র উপাদান সর্ববারের খেলা পরামর্শ করিয়া দুজনে বন্ধ করিয়া দিয়াছে। অনির্দিষ্ট লক্ষ্য সম্ভাবনাকে ছটিয়া ফেলিযা দাঁড় করানো হইয়াছে একটি মাত্র বাস্তব ও নির্দিষ্ট সম্ভাবনায়। যেদিন খুশি, যখন খুশি, চাহিলেই প্রভাকে পাওয়া যাইবে। চাহিবার সংকোচ জয় করিতে হইবে না, না পাওয়ার ভয়ে কাতর হইতে হইবে না, প্রতীক্ষায় অধীর হইতে হইবে না, কোনো