পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৪৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 মানিক রচনাসমগ্র তফাতে শঙ্কুর শয়নঘরের মাটিলেপ চাচের বেড়াব দেয়াল। তাক আর দেয়ালের সমান্তরাল রক্ষণাবেক্ষণে যে অন্ধকার। সৰু গলিটুকু সৃষ্টি হইয়াছে, সেটা শাস্তুর অন্দরে যাতায়াত করার পথ। অন্দবেই অবশ্য সরলাব থাকার কথা, কিন্তু মাঝে মাঝে পায্যের মল উপবে ঠেলিয়া তুলিয়া চুপিচুপি সে আসিয়া তাকের জিনিষপত্রেব ফাকে চোখ পাতিয়া দাঁড়াইয়া থাকে, স্বামীর দোকানদাবী দাখে ও কথাবার্তা শোনে। শন্তু এটা জানিতে পারে অন্দরে গিযা। ভাত ডাল ও ভাত ডালের হাঁড়ি উঠানে গড়াগড়ি দিতে দেখা যায় আর স্বয়ং সরলাকে গড়াগড়ি দিতে দেখা যায় বিছানায়, কালা, কণা, বোবা ও আগুন সরলা। শস্তুকে ওজোন কবিয়া কথা বলিতে হয়, সোহাগ জানাইতে হয, সংসারে মানুষ যে মানুষকে অকাৰণে ভুল বোঝে সে জন্য আপশোষা করিতে হয। আর দোকানে বিকীর জন্য রাখা লিজেঞ্জস্য খবচ করিতে হয়। একপয়সা দুপিয়সা তিনপয়সা-কোনদিন চাব পয়সার। সরলা একেবাবে লিজেঞ্জস খাওয়ার বাক্ষসী, শাস্তুকেও সে ফতুব কবিবে নিজেও মরিবে পেটব্যথা হইয়া। ‘সাহিত্যিকের বীে’ গল্পেরই দুটি অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ অথচ শেষ পর্যন্ত অসম্পূর্ণ পাঠ রক্ষিত হয়েছে। এই দুটি পাঠ পরপর উদ্ধৃত হল : সাহিত্যিকের বেী মাণিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্যিক ? শেষপৰ্যন্ত একজন দেশ-প্রসিদ্ধ সাহিত্যিকের সঙ্গেই তার বিবাহ হইবে নাকি ৮ -এই বিস্ময বিবাহের আগে কতদিন আমলাকে অভিভূত কবিযা বাখিয়ছিল ঠিক কবিধ বলা সহজ-মোটামুটি তিনমাস। কাবণ সম্বন্ধ স্ক্রিব হওয়ার মোটামুটি তিনমাস পরে শূভ বিবাহটি সম্পন্ন হইয়াছিল। কিন্তু বিবাহেল পাব। সত্যসত্যই সে কি স্বনাম-ধন্য সূৰ্য্যকাস্ত সেনগুপ্তের বীে হইয়াছে ?-এই কথা ভাবিয়া কতদিন পর্যন্ত অমলার কতখানি বিস্ময় জাগিীত হিসাব করিয়া বলা যায় না। শুধু বিস্মিত হওয়া নয়, বিস্ময়টাকে বাড়ানো কমানো এবং কম অথবা বেশীদিন টিকাইয়া রাখা পৰ্যন্ত নির্ভর করে মানুষেব বুচি ও প্রকৃতিত্ব উপব। জীবনের অতি তুচ্ছ একটা ঘটনা, যেমন পথে হঠাৎ ছেলেবেলার এক বিস্মৃতি-প্রায় বন্ধুর সঙ্গো দেখা হইয়া যাওয়া, একজনকে সাও সাতটা দিন অবাক করিয়া রাখিতে দেখিয়াছি। আবার বাড়ীৰ উঠানীে মাটিব নীচে পোতা সাতশ’ বছবেব পুবাগে? মন্দিব বাহিব হইয়া একজনকে সাতটা ঘণ্টাও আশ্চৰ্য্য করিয রাখিতে পারে নাই তাও দেখিয়ছি। শুধু তাই নষ । বন্ধু ও মন্দিরের আবির্ভাব যে দুটি 'একজনে 'ব জীবনে ঘটনা হিসাবে এতখানি আশ্চর্যজনক ও সাধাবণ বলিয়া পরিগণিত হইযাছে, সে দুজন ‘একজন' যে একই জন এটা খেয়াল করি যা আমি কিছুমাত্র অবাক হই নাই। অথচ আগের লাইন কটি লিখিবার আগে কেন এটা খেয়াল করি নাই ভাবিয়া আমার বিস্ময় এখনো সীমা ছাড়াইয়া আছে। ফোর্থক্লাস পৰ্য্যস্ত স্কুলে পড়িয়া তারপর বাড়ীতে লেখাপড়া, গান বাজনা, সেলাইফেঁাড়াই, সংসাবে বা কাজকৰ্ম্ম, ঝগড়া-বঁটির কৌশল ইত্যাদি শিখিতে শিখিতে যে সব মেয়ে আত্মীয় স্বজনের সতর্ক প্রহরা এবং অসতর্ক রক্ষণাবেক্ষণে বড় হয়, আমলা তাদেবি একজন। বলা বাতুল্য, লাইব্রেরী ম্যাবফত বাংলা সাহিত্যেব সঙ্গে আমলার ভালরকম পরিচয়ই ছিল। সপ্তাহে খান দুই গল্প-উপন্যাসেব বই এবং মাসে তিনচার খানা মাসিকপত্র ঘবেব কোণা আশ্রয় কবিবার মত বয়স হওয়ার পাব হইতেই অমলা নিযামিতভাবে পড়িয়া আসিতেছে। প্রকৃতপক্ষে, স্কুল ছাড়িয়া বাড়ীতে লেখাপড়া শেখার মধ্যে পড়াটা তার দাঁড়াইয়াছে এই, এবং লেখাটা দাঁড়াইয়াছে চিঠি লেখা। সূৰ্য্যকাস্তোব চারখানা উপন্যাস, তিনখানা গল্পসঞ্চয়ণ এবং একখানা নাটক সে তার সঙ্গে ভদ্রলোকের বিবাহের প্রস্তাব হওয়াং অনেক আগেই পড়িয়া ফেলিয়াছিল। তখন কি সে জানিত হৃদয়ের ভাবপ্রবণতাগুলিকে পরম উপভোগ্ন্যভাবে উদ্বেলিত করিয়া রাখা আর কখনো-হাসানো কখনো-কাদানো কাহিনীগুলির জন্মদাতা একদিন স্বয়ং তিনটি বন্ধুং সঙ্গে তাকে দেখিতে আসিবে এবং দেখিয়া পছন্দ করিয়া যাইবে। বড় খাপছাড়া ঠেকিয়াছিল। ঘটনাটা অমলার কাছে। সাহিত্যিকেরা বিশেষতঃ সূৰ্য্যকাস্তের মত সাহিত্যিকের কি রামর্শ্যামের মত এরকম সাধারণভাবে জীবন-সঙ্গিনী খুজিয়া নেয় ? তার মত পর্দােনশীন সাধারণ মেয়েৰে (সাধারণ মেয়ে অবশ্য সে নয়। কিন্তু শুধু চােখে দেখিয়া, দু'একটা প্রশ্ন করিয়া, সেলাই-এর কাজের নমুনা দেখিয়া আর একটা গানের সিকি অংশ শুনিয়া তার কি পরিচয় সূৰ্য্যকাপ্ত পাইয়াছিল শুনি ?) পছন্দ করে পুরুষ মানুষে।