বউ GfGSy এখােন হইতে কর্তৃপক্ষের চিঠি গেল, এবার বউমাকে পাঠানো হইবে না, পাঠানো সম্ভব নয়, অনেক কারণ আছে। সুমতি নিজে বাবার কাছে লিখিয়া দিল, যত শীঘ্র সম্ভব কাহাকেও পাঠাইয়া যেন তাহাকে লইয়া যাওয়া হয়। সদানন্দ অনেক বুঝাইযা মেয়েব কাছে লম্বা চিঠি লিখিলেন। কেউ যখন তাকে পাঠাইতে ইচ্ছক নন, তাকে নেওয়ার জন্য বাড়াবাড়ি করা কি উচিত ? এ চিঠির এমন একটা জবাব সুমতি লিখিয়া দিল যে ভদ্রলোক স্বয়ং তিন দিনের ছুটি নিয়া মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আসিয়া হাজির হইলেন। বুক তখন তার ঢ়িপটিপ করিতেছে, মুখ শুকাইযা গিয়াছে। মেযেকে নেওযার জন্য প্রায় সজল চোখে ক'ত যে কাকূতিমিনতি করিলেন, অন্ত হয় না। কিন্তু সুমতিব শাশুড়ি গোঁ ছাড়িলেন না, ঘাড় নাড়িয়া কেবলই বলিতে লাগিলেন, না বেয়াই না, এবার বউমাকে পাঠাতে পারব না। কাকুতিমিনতিতে মন গলার বদলে শেষ পর্যন্ত শাশুড়িকে রাগিয়া উঠিবার উপক্ৰম কবিতে দেখিয়া ভয়ে ভয়ে সদানন্দ চুপ করিয়া গেলেন। সদানন্দ নিজে আসিযা এভাবে বলিলে অন্য অবস্থায শাশুড়ির মন হয়তো গলিয়া যাইত, বাপের বাড়ি যাওয়া নিয়া প্রথমবার সুমতির সঙ্গে যে ঝগড়া হইয়াছিল তাও হয়তো তিনি আর মনে বাখিতেন না, কিন্তু ইতিমধ্যে সুমতি আবও অনেকবার তেজ দেখাইয়া বসিয়াছে। যেমন তেমন তেজ নয, গা পুড়িয়া জ্বালা করব মতো তেজ। সুফি সলিল, আমি তোমার সঙ্গেই চলে যাব বাবা, আমায় নিয়ে চলো। সদানন্দ মেযেকে বুঝাইলেন। এ রকম অবস্থায় যত বিকম উপাযে মেয়েকে বোঝানো সম্ভব, তাব একটাও বাদ দিলেন না। কিন্তু এ তো বোঝাব কথা নয, কথাটা তেজেব। সুমতিব মুখে সেই এককথা, আমি তোমার সঙ্গে যাব, আমায় নিয়ে চলো। শেষে সদানদেব মতো নিবীহ গোবেচারি মানুষটা পর্যন্ত বিরক্ত হইয়া বলিলেন, এরা পাঠাবে না, তবু তুই যাবি কী রকম ? আমি নিযে যেতে পারব না। এদের বুঝিযে শুনিয়ে বাজি কবতে পারিস, আমায চিঠি লিখিস, এসে নিযে যাব । যাবার জন্য এত পাগলামিই বা কেন তোর ? পিবে না হয় যাস ? সদানন্দ ফিরিযা গেলেন। এবাব নিজেব তেজেব আগুনে সুমতি নিজেই পুড়িতে লাগিল। শারীরিক অবস্থাটা তার এতখানি মানসিক তেজ সহ্য কবিবার মােনা ছিল না, এ অবস্থায় মনটা যত শান্ত আর নিস্তেজ থাকে ততই ভালো। হাত-পাগুলি দেখিতে দেখি .ত কাঠির মতো সরু হইয়া গেল, শূন্ধ শীর্ণ মুখে কেবল জুলজুলি কবিতে লাগিল দুটি চোখ। কথা কমিয়া গেল, খাওয়া কমিয়া গেল, আলস্য কমিয়া গেল।--নিজের মনে নীবাবে যতটা পাবে কাজে অধিকাজে আত্মনিযোগ করিয়া আবি যতটা পারে কোনো কাজ না কবি যা সে ছটফট করিতে লাগিল। তারপর সে এক মাস সময়ের মধ্যে বাপের বাড়ি না। যাইতে পাবিলে চাবুকের বদলে স্বামীব জুতা খাইতে বাজি হইয়াছিল, সেই সময়টা প্রায় কাবার হইয়া আসায়, একদিন শেষ ধাত্রে কিছু টাকা আঁচলে বাধিয়া একই বাপের বাড়ি রওনা হইযা গেল। এ একটা মফস্বলের শহব। বাপের বাড়িটাও মফস্বলের একটা শহরেই। কিন্তু সোজাসুজি যোগ না থাকায় কলিকাতা হইয়া যাইতে একটু সময় লাগে! সুমতিব আরও অনেক বেশি সময় লাগিল। কারণ কলিকাতায় পেঁৗছাইয়া বাপের বাড়ি যাওয়ার বদলে তাকে যাইতে হইল মেয়েদের একটা হাসপাতালে। খবব পাইয়া সদানন্দও আসিলেন, মোহনলালও আসিল এবং মোহনলাল বিনা বাক্যব্যযে মেয়েকে বাপের বাড়ি লইয়া যাইবার অনুমতিও সদানন্দকে দিয়া দিল। কিন্তু হাসপাতালের ডাক্তার একমাস তাকে বিছানা ছাড়িয়া উঠিতে দিলেন না। একমাস পরে বাপের বাড়ি গিয়া তিন মাস পরে অনেকটা সুস্থ হইয়া সুমতি স্বামীগৃহে আসিল। আর কোনো পরিবর্তন হােক না হােক, সুমতির একটা পরিবর্তন স্পষ্টভাবেই ধরা পড়িয়া গেল। দেখা গেল, তার সবটুকু তেজ কৰ্পরের মতো উবিয়া গিয়াছে।