পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

बाऊं ԳՀ) ছাড়িয়া দিল। মাসে এক বোতল মাত্র শ্যামপেন খাওয়াও সে ছাড়িয়াছে দেখিয়া গণপতি কিছু বলিল না। নগেন্দ্ৰবালা একটু ঈর্ষা বোধ করিযাছিল, কিন্তু সেও বউয়ের জন্য ছেলের পড়া ছাড়িয়া দেওযায় বাধা দিল না। ভাবিল, তাই হোক, বউ নিযে মেতে এ বয়সটা ভালোয় ভালোয় পার হয়ে যাক । যামিনী প্রথম যৌবাব বেশিদিনের জন্য অবন্তীপুব আসিল তখন শরৎকাল। শুক্লপক্ষের কয়েকটা রাত্রিতে আকাশেব ওই পুবানো চাঁদটিব। কােছ হইতে এমন জ্যোৎস্নাই পৃথিবীতে ভাসিয়া আসে যে দেখিলে মানুষের মন কেমন কবে। এমনই জোৎস্না উঠিলে অনেক রাত্রে নিদ্রিত রাজপুরীর নিশীথ রহস্যকে অতিক্ৰম কবিয ভূপতি আর যামিনী উঠিত ছাদে। আলিসা ঘেষিয়া দাঁড়াইয়া তাহারা পৃথিবীকে দেখিত। এদিকে আধাশহর আধাগ্রামখানি নিঃসাড়ে ঘুমাইয়া আছে। হয়তো শুধুই দেখা যায় একটি আধভেজানো জানালায় নিঃসঙ্গ একটি আলো। যামিনী ভাবিত, ওখানে হয়তো তাদেরই মতো ভালোবাসার জাগরণ এখনও আলো জালিয়া বাখিযাছে। ওদিকে দিঘিব জলে থাকিত সোনালি রঙের চমকিত চাঞ্চল্য। দিঘির ওই তীর দিযা দুপাশে গাছের সারি বসানো নির্জন পথটি কোথায় কতদূরে চলিযা গিযোছে। যামিনী স্বামীর বুক ঘেষিযা আসিত। ওই স্তব্ধ পথটি ধরিয়া পৃথিবী ছাড়িয়া গ্ৰহতারার কোনো একটা জগতে চলিয়া যাওয়া যায় এমনই একটা কথা ভাবিয়াই সে বােধ হয। ভূপতির দুটি হাত দিয়া নিজেকে ‘পিয়া ফেলিত । বলিত-পৃথিবী কতকাল আগে সৃষ্টি হয়েছিল বলে না। পৃথিবী কতকাল ধরিয়া এমন সুন্দর এমন অপার্থিব হইয়া আছে। এই ছিল যামিনীব জিজ্ঞাসা। এমনই স্তিমিত জ্যোতির্ময়ী বাত্রে ভূপতির উদাত্ত প্রেমকে অনুভব কবিতে করিতে সে প্রায়ই এই ধবানাবা প্রশ্ন করিত। ভূপতি ইহাব জবাব দিত। তাহাব কানে কানো। বলিত --অনেক দিন আগে গো, অনেক দিন আগে। কোটি বছর আগে। প্রথমে সব অন্ধকাব ছিল, তারপব ভগবান বললেন, আলো হােক, আমনই আলো হল। তিনি তাধপর বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ড সৃষ্টি করলেন। শুনিয়া নিজেকে যামিনীর এত বেশি ছেলেমানুষ মনে হইত। যে সে অসহায়ের মতো প্রশ্ন কবিত, আচ্ছা সত্যি ভগবান আছেন ? বিকালে চাকর গালিচা রাখিযা গিযাছে। বিছাইযা ভূপতি ৩৭ গ্রাতে বসিত। তাহার কোলে মাথা রাখিয়া শহঁত যামিনী। যামিনীৰ মুখে পড়িত জ্যোৎস্না আব্ব ভূপতি : মুখের পিছনে থাকিত আকাশব পটভূমিকা। ব্যাকুল অন্বেষণেব দৃষ্টিতে তাহাবা পবিত্সপরের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিত। পবশ্বম্পরের মুখের সঙ্গে তাহদের পবিচায্যের যেন শেষ নাই, কোনোদিন এ রহস্য তারা যেন বুঝিবে না। যামিনী পাতা কাটিয়া চুল বঁধিত, ভূপতি চুল সরাইয়া তাহার কাপোলে আবৃত অংশটুকু আবিষ্কার করিত। যামিনী চিবুক ধরিয়া স্বামীব মুখ উঁচু করিয়া সে মুখে ফেলিত জোৎস্না। যামিনীর ঘুম আসিলে তাহার অর্ধনিমীলিত চোখেব গাঢ় অতল বহস্যকে ভূপতি চুম্বন করিত, যামনী তাহার একখানি হাত চাপিয়া ধরিত বুকে ! আঠারো বছরের কচি মেযে সে, সে বলিত-জানো আমি এখন মরে যেতে পারি। হালকা হাসি তামাশা তাদের বিশেষ ছিল না। তারা গে" (শা করিত কম। অতর্কি৩ে যামিনীর খোপা যে ভূপতি কখনও খুলিয়া দিত না এমন নয়, নিদ্রিত স্বামীর কপালে বড়ো করিয়া সিন্দূরের ফোটাও যে যামিনী আঁকিত না তাও নয়, কিন্তু ভূপতির টেরি নষ্ট না করিযী খোপা খোলার প্রতিশোধ যামিনীর লওয়া হইত না। ঘুম ভাঙিয়া যামিনীর আঁচলে কপালের সিন্দূর ভূপতির মোছা হইত না। তাদের সহিত অকালমরণ ঘটিত। তারা বুঝিতেও পারিত না কখন তারা গভীর অলৌকিক ভাবাবেগে আচ্ছন্ন অভিভূত হইয়া গিয়াছে। যে বয়সে প্রেম বহির্বস্তুকেই আশ্রয় করিয়া থাকে বেশি, প্রেমকে লইয়া দুজন মানুষ যে বয়সে শিশুর মতো অর্থহীন খেলা খেলে, ধরা দেওয়ার চেয়ে পলাইয়া বেড়ানোই যখন বেশি