পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র তৃতীয় খণ্ড.pdf/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বউ ኳrዒ ছুটির দিনের পান সাজাব দাযিত্ব সজো ননন্দ কৃষ্ণার, বিবাহ হইয়া যতদিন না। পরের বাড়ি যায়। জল গরম হইতে হহঁতে পানের খবরটা আনিতে গিয়া শতদলবাসিনী দ্যাখে কী, পান সাজা হইয়াছে মোট পাঁচ-সাতটি, পান সাজাের সরঞ্জাম সামনে নিমা কৃষ্ণা মশগুল হইয়া পড়িতেছে চিঠি। হাতের লেখা চেনা, কার চিঠি তাও জানা। ঠাকুরঝি ! কৃষ্ণা চমকাষ, থতোমতো খাদ্য, চিঠিখানা ব্লাউজের আড়ালে চালান করিয়া দেয়, ঢোক গেলে। —এই হয়ে গেল বউদি, এক্ষুনি সেজে দিচ্ছিা! চুলোয় যাক তোমাব সাজা, ফের আরম্ভ করেছ ? দুদিন বাদে তোর বিয়ে, আর তুই— লিখলে আমি কী করব ? আমি তো লিখি না। লেখো না কীসের, জবাব না পেযেও সে চিঠির পর চিঠি দিয়ে যাচ্ছে। এবার কিন্তু ওকে সব বলব আমি, আমার তো একটা দায়িত্ব আছে। একটা কিছু ঘটুক, আর সবাই আমায় দুযুক, জেনেও চুপ করে ছিলাম। টুকটুকে রাঙা রং শতদলবাসিনীর, বৃপেব আর সব খুঁত তাতে চাপা পড়িয়া গিযাছে, চােখ দুটি যে একটু ছোটাে বড়ো প্ৰায সে খুঁতটা পর্যন্ত। মুখভার করিয়া ট্যাবা চোখে সে তাকায় তার সেজো ননদের দিকে ভৎসনাব দৃষ্টিতে, আর মুখ নিচু করিয়া কৃষ্ণা নীরবে পান সাজে। দেখি কী লিখেছে। আবাব। কৃষ্ণা কাতরভাবে বলে, দেখে আর কী কববে। বাউদি z বলেই যখন দেবেশতদলবাসিনী বলে, আচ্ছা, এবারকার মতো আব্ব বলব না। কিন্তু ফের যদি তোমরা চিঠি লেখালেখি কর—তুই বুঝিস না ভাই দুদিন পবে তোর বিয়ে--- গভীর আগ্রহে শতদলবাসিনী চিঠি পড়ে, কৃষ্ণার ঠোঁটে দেখা দেয় মুচকি হাসি আর এদিকে রান্নাঘবে উনানে চাপানো চায়েব জলেব ডেকচি টগবগা শব্দে বাষ্প ছড়িতে থাকে। চা দিতেও দেরি হয়, পান দিতেও দেরি হয়। রাগে আগুন হইয়া যতীন আবার আসিযা প্রায় দাঁত কড়মড় করিতে করিতে বলে, তোমরা সবাই হনুমান—এক নম্বরের জাম্বুবান তোমবা সব। একটু ম’ আর দুটাে পান দিতে কি বেলা কাবার করবে। চাউনি দ্যাখে একবাব, মারবে না। কী ? সলজ হাঁসি হাসিয়া শতদলবাসিনী বলে, ওমা, ছি কী যে বল তুমি ! মারব কী গো ! গরম জলে হাতটা পুড়ে গেল। কিনা--- পুড়বে না, যা কাজের ছিরি। নাও নাও, চটপট বানাও চা! উপরে মজলিশে ফিবিয়া গিয়া যতীন প্রায় তার বউয্যের লজ্জা পাওয়া হাসিটাই নকল কবিয়া বলে, দুধ ছিল না। কিনা, একটু দেরি হয়ে গেল চায়ের। যাক, এইবার এসে পড়ছে। চা না হলে কী আলাপ জমে ! আলাপ প্রচণ্ডভাবেই জমি যাছিল, বর্ষাকালে মেঘের গলিযা গলিয়া অবিরাম ধারাবর্ষণের মতো, যার ঝমােঝম গুঞ্জনধ্বনি শুনিতে শুনিতে মনে হয় বিশ্বব্যাপীই তুঝি হইবে। ঘরখানা মস্ত, আগে যতীনের বাবার শয়ন ঘর ছিল, আসবাবে বোঝাই হইয়া থাকিত। এখন যতীন এ ঘরে শোয় বটে, ঘরে আসবাবপত্র একরকম কিছুই নাই। মেঝের প্রায সবটা জুড়িয়াই শতরঞ্চি পাতা, এক কোণে দেয়াল ঘোষিয়া বিছানার তোশকপত্র গুটািইয়া রাখা হইয়াছে। বসিবার ঘরে সবদিন সকলের স্থান সংকুলান হয় না দেখিয়া যতীন এ ঘরখানা খালি করিয়া নিয়াছে। বসিবার জন্য দেয়াল দরকার হয় না। তাই দেয়ালে অনেকগুলি ছবি আর ক্যালেন্ডার লটকানাে। দক্ষিণের দেয়ালের মাঝামাঝি প্রকাণ্ড তৈলচিত্র-যে জানে না দেখিলেই তার মনে হইবে নিশ্চয় যতীনের পরলোকগত পিতার ছবি।