পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S Se SR মানিক রচনাসমগ্ৰ আশ্চর্য এই, মেয়ে যে প্ৰায় আধাআধি সর্বনাশ করিয়া চলিল এ কথা মার মনেও পড়িল না। তেরো বিঘা ধানের জমি একেবারেই গিয়াছে, স্বামী-পুত্ৰ লইয়া মাথা গুজিবার এই ঠাইটুকু এগারো শো টাকায় বাধা পড়িয়াছে। কত মাস, কত বছর ধরিয়া স্বামীর অল্প আয়ের অধিকাংশ গ্ৰাস করিয়া এ বাড়ি মুক্ত হইবে কে জানে। কেমন করিয়া সংসার চলিবে, পাঁচ-ছয় বছর পবেই বিন্দুর বিবাহ দিতে হইবে, তখন কী উপায় হইবে। এ সব ভাবিলেও মাথা ঘুরিয়া যাওয়ার কথা, মা কিন্তু এখন ও—সব কিছুই ভাবিতেছিলেন না। ভাবিবার সময় অনেক জুটিবে, মেয়ে যে আজ তাহার মহাসমারোহে পর হইয়া যাইতেছে। ইন্দু আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করিল, হাঁ্যা মা, খোকার ঘুম ভাঙেনি ? জানিনে। ওর দিকে তাকাবারও সময় পেয়েছি কি সকাল থেকে ? সময়মতো ওষুধও আজি বোধ হয় খাওয়ানো হয়নি। ইন্দু বলিল, আমি খাইয়েছি ওষুধ । বিকালে ডাক্তাববাবুকে আর একবার আনিয়ো মা। দেখে আসি খোকাকে একবার ওদিকের ছোটাে ঘরটিতে পাঁচ-ছয় বছরের একটি ছেলে শূইয়াছিল, সাত-আটদিন ক্ৰমাগত জুরে ভুগিয়া জীৰ্ণশীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে। সাত মাইল দূরের গ্রাম হইতে ডাক্তারকে বার দুই আনা হইয়াছিল, জুরটা তিনি ঠিক ধরিতে পারেন নাই, কিন্তু দুই-চারদিনের মধ্যে কমি যা যাইবে বলিযা খুব জোরালো আশ্বাস ও ঝাঝালো ওষুধ দিয়াছেন। খোকা জাগিযা চুপ করিয়া শূইয়াছিল, মাকে দেখিযা কঁদিতে আরম্ভ করিয়া দিল। তাহার ক্ষুধা পাইয়াছে, সে সন্দেশ খাইবে। মা বুঝাইয়া বলিলেন, আজ দিদি চলে যাবে, আজকেই তুই সন্দেশ খাবি খোকা ? দিদিকে তুই ভালোবাসিসনে বুঝি ? তুই কঁদিস তো ইন্দু-খুব কঁদিস পালকিতে উঠে। খোকা সািভয়ে কান্না থামাইয়া বলিল, আমি দিদির সঙ্গে যাব। যাস। আগে তবে বার্লি খা। বার্লি না খেলে দিদি সঙ্গে নেবে না।--নিবি ইন্দু ? ইন্দু কান্না চাপিয়া বলিল, না। भी बालि शामिठ bलिशा (कोलम । এ ঘরখানা খুবই ছোটো, পুরোনো চাচের বেড়া, বিবর্ণ টিনের চাল। এককোণে এক বোঝা প্যাকাটি ঠেস দিয়া রাখা হইয়াছিল, কখন কান্ত হইয়া পড়িয়াছে, বাঁশের তৈরি চৌকির তলে সারি এই ঘরেই খোকা জন্মিয়ছিল। ইন্দুর সহসা সে কথা মনে পড়িযা গেল। তাহার আকস্মিক ও অপরিমিত আশঙ্কার মধ্যে যুক্তির সম্পূর্ণ তিরোভাব ঘটিল। মনে হইল, বিবাহের গোলমালে রোগা ছেলেটাকে যে এ ঘরে সরাইয়া আনা হইয়াছে তাহাতে বোধ হয় নিয়তির হাত ছিল, ফলটা হয়তো ইহার শূভ হইবে না। - মনে মনে ইন্দু ভয় পাইল। কয়েক সেকেন্ডের কল্পনায় সে যেন ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখিয়া ফেলিয়াছে। কুলুঙ্গিতে তিন-চারিটা ওষুধের শিশি, চোখ তুলিয়া ইন্দু সেগুলি ভালো করিয়া নিরীক্ষণ করিল, উপরের তাকে খোকার ময়লা রবারের বলটা কে যেন তুলিয়া রাখিয়াছে। ভগবানের বুড়োটে খেয়ালের ঠিক উপরেই খোকার ছেলেখেলা। তোর বলটা তাকে কে তুলে রাখলে রে খোকা ? গদাইদা রেখেছে। খেলিতে খেলিতে খোকার হােত যখন ব্যথা হইয়া গেল, গদাইদা তখন বলাটা তুলিয়া রাখিল।-শুয়ে শূয়ে বল খেলা বিচ্ছিরি, না দিদি ? হাঁ্যা। আচ্ছা খোকা, বল খেলতে তুই খুব ভালোবাসিস ?