পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So মানিক রচনাসমগ্ৰ কুবেরের জীবনে সঞ্চিত হয় নাই, তিন পুরুষ ধরিয়া জমিয়াছে। মাচার নীচেটা পুরাতন জীর্ণ তক্তায় বোঝাই। কুবেরের বাপের আমলের একটা নৌকা বারবার সারাই করিয়া এবং চালানোর সময় ক্ৰমাগত জল সেঁচিয়া বছর চারেক আগে পর্যন্ত ব্যবহার করা গিয়াছিল, তারপর একেবারে মেরামত ও ব্যবহারের অনুপযুক্ত হইয়া পড়ায় ভাঙিয়া ফেলিয়া তক্তাগুলি জমাইয়া রাখা হইয়াছে। ঘরের অন্যদিকে ছোটাে একটা টেকি। টেকিটা কুবেরের বাবা হারাধন নিজে তৈয়ারি করিয়াছিল। কাঠ সে। পাইয়াছিল পদ্মায়। নদীর জলে ভাসিয়া আসা কাঠ সহজে কেহ ঘরে তোলে না, কার চিন্তা রচনার প্রয়োজনে ও-কাঠ নদীতীরে আনা হইয়াছিল কে বলিতে পারে ? শবের মতো চিতার আগুনের জড়তম সমিধটিরও মানুষের ঘরে স্থান নাই। কিন্তু এই টেকির কাঠটির ইতিহাস স্বতন্ত্র। কুবের। তখন পারে না, তত ছোটো। ছোটো একটি নৌকায় ছেলেকে সঙ্গে করিয়া হারাধন পদ্মা পার হইতেছিল। নদীর মাঝামাঝি পুরানো নীেকার তলাটা হঠাৎ কী করিয়া ফাসিয়া যায়। তখন আশ্বিন মাস, সেখানে পদ্মার এ তীর ও তীরের ব্যবধান তিন মাইলেব কম নয়। পদ্মা যাহাকে বুকে করিয়া মানুষ করিয়াছে, নয়। হারাধন একা হইলে ভাবনা ছিল না। কুবের আর একটু বড়ো এবং শক্ত সমর্থ হইলেও সে বিপদে পড়িত না। কিন্তু ছেলেমানুষ কুবেৰ ভয় পাইয়া সাঁতার দিতে চাহে নাই, দিশেহারা হইযা ক্ৰমাগত হারাধনকে জড়াইয়া ধরিবার চেষ্টা করিয়াছিল। তখন যে লম্বা কাঠের গুড়িটি হাতেব কাছে আগাইয়া আসিয়া তাহদের বঁাচাইয়া দিয়াছিল, হয়তো তাহা চিতা বচনার জন্যই কেহ। শ্মশানে আনিয়াছিল। হারাধন। কিন্তু কাঠটি ফেলিয়া দিতে পারে নাই। ঘবেবী আসবাবে পরিণত করিয়া সাদরে গৃহে স্থান দিয়াছে। কুবেরের পিসি আর তার বড়ো মেয়ে গোপি কুবেরকে দেখিয়াই চেঁচামেচি করিয়া কাছে আসিয়াছিল। কুবের কারও সঙ্গে কথা বলিল না। লম্বা হইয়া পিসির বিছানায় শূইয়া পড়িল। পিসি বলিল, শূলি যে ধন ? বউ ওদিকে পোলা বিয়াইয়া সারছে দেইখা আর্য। গোপি বলিল, বাই উ ওই বাবুগোর পোলার নাখান ধলা হইছে বাবা। নকুইলার মাইয়া পাচি কি কইয়া গেল শুনবা ? সায়েব গো এমন হয় না। না পিসি ? কুবের চেচাইয়া ধমক দিয়া বলিল, নকুইলা কী লো হারামজাদি ? জ্যাঠা কেইবার পার না ? গোপি মুখ ভার করিয়া বলিল, ক্যান কমু জ্যাঠা ? বজাতটা আমারে যা মুখে লব্য কয় না ? কী কয় ? রাইত কইরা মাইজাবাবু নি আমাগোর বাড়ি আহে। তাই জিগায়। ইবার জিগাইলে একদল পাক দিমুনে ছুইড়া মুখের মধ্যে। দিস, বলিয়া কুবের বিমাইতে থাকে। খানিক পরে ও ঘরের দাওয়া হইতে শিশুর জোরালো কান্না শুনিতে পাওয়া যায়। মনে হয়, ছেলেটা আগেভাগে আসিয়া পড়িলেও গলায় রীতিমতো জোর করিয়া আসিয়াছে, চেচাইতে পারে। রথের উৎসব হয়। সেই খ্রিসােনা একটি রথ বাহির হয়। সােনাখালি ছ। বর্ষাকালে এই পথটিই এ অঞ্চলে