পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S88 মানিক রচনাসমগ্ৰ দেখা গেল সম্ভব, পতিতপাবনকে মাদুলি ধারণ করানোর কোনো উপায় খুজিয়া পাওয়া গেল না। কে তাকে বলিবে যে, তোমার মাথা খারাপ হইয়াছে, এই মাদুলিটা ধারণ করো, সারিয়া যাইবে ? ভয়ানক কিছু করিবার ক্টোকিও পতিতপাবনের আসে না, কতকগুলি বিষযে মাথাটাও সে মোটামুটি ঠিক রাখিয়া চলে,-এই যা একটা ভরসার কথা। অন্য পাগলের মতো বঁধিয়া রাখিতে হইলেই হইয়াছিল ! প্রত্যেক মাসের পয়লা তারিখে নিয়মমতো পেনশনটাও সে লইয়া আসে, সময়মতো স্নানাহার করে, সংসারের স্বাভাবিক গতিতে এমন বাধা জন্মায় না, যে জন্য সকলকে ব্যতিব্যস্ত হইয়া উঠিতে হয়। রাত্রে যদি না ঘুমায়, অন্য কারও ঘুমের সে ব্যাঘাত করে না, বিড়বিড় যখন যা বকে, এত আস্তে জড়াইয়া জড়াইয়া কথাগুলি বলে যে সাধ করিয়া কান পাতিয়া না শুনিলে কারোর শুনিবার দরকার হয় না। দাড়িগোফে পতিতপাবনের মুখখানা একরকম ঢাকিয়া গিয়াছে, তার চােখের দিকে চাহিলে কিন্তু একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয। কেমন একটা জটিল দুর্বোধ্য রহস্য তাহাব দুটি চোখে একটা অস্বাভাবিক বিচ্ছিন্ন জ্যোতির মতো ঘনাইয়া আসিযাছে ; শিশুব চোখে যেন ফুটিযা আছে শ্মশানচারী কাপালিকের দৃষ্টি। পাগলামি পাগলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। পতিতপাবনের পাগলামি এমন বেমানান মনে হয । এ অস্বাভাবিকতা যেন তার পক্ষে একান্ত অস্বাভাবিক, অনুচিত কিছু। যাদব বলে, বাবা ভালো হয়ে যাবে, মা। আমার যেমন অব্দেষ্ট ! সত্যি ভালো হয়ে যাবে। আমি একটা বুদ্ধি করেছি। কোনো রকমে আমি যদি দুই হাজাব টাকা জোগাড় করতে পাবতাম ! মাধব একটা পঞ্চাশ টাকার চাকরি যোগাড় করিতে পাবিল বটে, যাদবোৰ পক্ষে দু হাজাব টাকা জোগাড় করার কোনো ভরসাঁই দেখা গেল না। মাধবেব চাকরি হওয়ায ভাবিয়া চিন্তি যা যাদব আৰ পড়া ছাড়িল না, কলিকাতায় এক কাকার অমত সত্ত্বেও তার বাসায় উঠিয়া কলেজের কাটা নামটা জোড়া লাগাইয়া ভয়ংকর পড়া আরম্ভ করিয়া দিল। 4؟&{ পড়িয়া পড়িয়া মরিয়া গেলেও টাকা হয় না। যাদব তা জানে, কিন্তু কী আর কিবা যায়, আব কোনো পথের সন্ধান, তো সে রাখে না। কাকার বাড়ি ফাইফবমাস খাটিতে বলিলে যাদব খাটে না, গালাগালি দিলে শোনে না, খাইতে না ডাকিলে নিজে পাত পাড়িয়া বসিয়া খায আর সপ্তাহে দু সের ওজন কমানোর মতো পড়ে। এমন অসাধারণ ভালো একটি ছেলে বাড়িতে থাকিলে যদি বাড়ির পাঠবিমুখ আডিডাধারী ছেলে দুটির কিছু ভালো হয়, এই আশায় কাকার বাড়ির সকলে শেষে যাদবেব অপরাধগুলি ক্ষমা করিয়া ফেলে। এমন কী, কাকিম একদিন মুখখানা হাসি হাসি করিয়া পর্যন্ত বলে, আচ্ছা বাবা তুই পড়, তোকে আর বাজারে যেতে হবে না। ধরাবাঁধা একটা নিয়মই আছে যে, পড়িতে পড়িতে যে যত রোগ হইতে পরিবে, সে তত ভালোভাবে পাশ করিবে। সুতরাং যাদবের পরীক্ষার ফলটা হয়। চমৎকার। গ্র্যাজুয়েটত্ব অর্জন করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম লেখাইয়া যাদব পণপ্রথার বিবুদ্ধে যত আন্দোলন উঠিয়াছে, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ভালো মেয়ে যদি পাওয়া যায় তো ভালোই, যদি না পাওয়া যায় তাতেও ক্ষতি নাই-আর সমস্ত তার গন্ডায় গন্ডায় বুঝিয়া পাওয়া চাই, আর চাই নগদ টাকা থোক দু হাজার। এক হাজার নশো নিরানব্বই হইলেও চলিবে না, পুরোপুরি দু হাজার। যাদবের ভাবসাব দেখিলেও যেন কেমন কেমন লাগে। যেমন চেহারা ছিল, স্বভাব ছিল, সে রকম চেহারাও নাই, স্বভাবও নাই। আগাগোড়া বদলাইয়া গিয়াছে। শাস্তশিষ্ট ধীর প্রকৃতির ছেলেটার মধ্যে কেমন যেন একটা চাঞ্চল্য আসিয়াছে শোঝা যায়, জীবনটা যার কাছে এতদিন ছিল সহজ ও