পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S(? R মানিক রচনাসমগ্ৰ বছর তিনেক আগে দেখা একজন বুড়োকে এতকাল পরে চোখে দেখামাত্ৰ মনে পড়ার মানসিক প্রক্রিযাটিকে সে ভাবনা একটুও প্রশ্রয় দেয না। অনুপম বলিল, আপনি কে ? বীরেশ্বর ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, আগে নেমে আয, তারপর বলছি আমি কে । নাম, নাম, শিগগির নাম । জীবনে আর কখনও তো এমন ঘটনা ঘটে নাই। এমন দামি মোটরের আবোহী, ধূসর রঙের দামি কাপড়ে তৈরি চাপিকানের মতো লম্বা এ রকম কোিট গাযে সাদা গোফদাড়িতে এ রকম ঋষির মতো মুখওয়ালা, এমন সম্রােন্ত চেহারার বৃদ্ধ জীবনে আর কবে অনুপমকে নাম ধরিয়া ডাকিযা বাস হইতে নামিতে বলিয়াছে ? যানবাহনের গতি-নিযামক যন্ত্রেব লাল আলো এতক্ষণে নীল রঙে পরিবর্তিত হইয়া যাওয়ায় বাস চলিতে আবস্তু করিয়াছিল। অনুপম নামিবার চেষ্টা আরম্ভ করিয়া দিল। মানুষ ঠেলিয়া বাস হইতে নামিবার অভ্যাস তার অনেক দিনের, তবু, মোড়ের অন্যপ্রান্তে পৌছোনোর আগে মাটিতে পা দেওয়া সেও সম্ভব কবিয়া তুলিতে পারিল না। হাতে বই, মুখে স্ত্ৰণ, কালো একটি মেয়ের কাছে মাথা তার কাটা গিয়াছে লজ্জায়, পা মাড়াইযা দেওয়ায় একজন প্রৌঢ়বিয়সি ভদ্রলোক ছোটোলোকের মতো কী যেন বলিযাছেন অপমানকার, বাস হইতে নামার জন্য বীরেশ্বরের হ্রকুমেব অজানা বহস্য মনের মধ্যে হইয়া উঠিয়াছে আবও গভীব, তবু বাসের টিকিটের পযসা ক-টা নষ্ট হওয়াব কথাটাই যেন খচখচ বিধিতে লাগিল অনুপমের মনে। আবাবা টিকিট কবিতে হইবে। আবার দিতে হইবে চার চারটা পয়সা । মোটর গাড়িটি বাসের পিছুপিছু আগাইয়া আসিযাছিল, পাশে থামিযা গেল। সঙ্গে সঙ্গে পিছনের কুড়ি-বাইশটা গাড়ির হর্নে বাজিযা উঠিল বিরক্তির আওয়াজ। বীরেশ্বব বলিলেন, আয় অনুপম, ভেতরে আধ। অনুপম ভিতরে গিয়া বসিল। চেনা মানুষ সন্দেহ নাই, কিন্তু চেনা যায না কেন ? এতক্ষণ এটা খেয়াল থাকে নাই, এবার পাশে বসিযা বীরেশ্বরের গোফদাড়িতে ঢাকা মুখখানায়, অপবিচায়ের অধিবণ সরাইতে না পাবিয়া হঠাৎ লজ্জায় অনুপম একেবারে যেন কাৰু হইয়া গেল। চেনা মানুষকে না চিনিতে পারার লজ্জা। প্ৰণমাকে প্ৰণাম করার বদলে মনেব ভুলে তাব গালে একটা চড় বসাইয়া দেওয়ার মতো এ যেন একটা সাংঘাতিক অপবাধ ! বীরেশ্বর বলিলেন, আমি চিনলাম, তুই আমাকে চিনতে পারলি না অনু ? আজিকালিকার ছেলে তোরা, তোদের কােণ্ডই আলাদা। মনের মধ্যে হাজার রকম চিন্তা আর স্মৃতিব খিচুড়ি পাকাস, একটাও স্পষ্ট হতে পারে না। আমি হলাম তোর ঠাকুরদা। একটু হাসিলেন বীরেশ্বর, অত দাড়িগোঁফের জঙ্গলেও হাসিটা দেখা গেল। হঠাৎ খুশি হইযা অনুপম বলিল, চিনেছি। কে বল তো আমি ? আপনি সীতা পিসিমার বাবা। তোর বাবার বাবা নাই ? এটা পরিহাস। নিজের কথায় বীরেশ্বর নিজেই হাসিলেন, কিন্তু অনুপমের অতি সহজে হাসি আসে না। মনের মধ্যে হাসির যে কারখানা আছে সেটার অনেকগুলি কল বিগড়াইয়া গিয়াছে, মনটাও কি হইয়া যায় নাই গোলকধাঁধার মতো এলোমেলো রকমের বঁাকা ? সংক্ষেপে সে শুধু বলিল, হঁ্যা । হাঁ ? শুধু হ্যা ? আমি হলাম তোর ঠাকুরদা, শুধু হ্যা বলে আমার কথার জবাব দিলে পাপ হয় -এ তোর রামলাল কাকার ছেলে শঙ্কর। কাকার ছেলের সঙ্গে কী সম্পর্ক হয়, তা তো