পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏚᏄ8 মানিক রচনাসমগ্র বললেন বইকী, সকলের আগে উনি বলেছেন, ওঁকে আগে বলতে দিতে একটু আপত্তি হয়েছিল, হিংসুটে লোকের তো অভাব নেই, সভার রিপোর্টে কাগজে আগে ওঁর নামটা বেবুবে, তাতেও লোকের গা জুলে। আমি কিন্তু ছাড়বার ছেলে নাই বাবা, স্পষ্ট বলে দিলাম প্রথমে বলতে না দিলে উনি যে একশো টাকা চাদার কথা বলেছেন সেটা ক্যানসেল হয়ে যাবে। শূনে সবাই চুপ।। কেদারনাথ একটু অস্বস্তির সঙ্গে বলিলেন,-একশো ! শঙ্কর দেখিতে পাইল কেদারের উরুতে আঙুলের খোঁচা দিয়া লীলাময় কী যেন ইঙ্গিত করিলেন, কেদার আর কথা বললেন না। লীলাময় খুশি হইয়া শঙ্করকে বলিলেন, কিন্তু তোমার কাণ্ড দেখে আমি কিন্তু থ বনে গেছি ভাই। ইচ্ছােটা কী বল তো ? এই বয়সে বড়ো হওয়ার শখ চেপেছে না কি ? শঙ্কর ঝিমাইয়া পড়িয়াছিল, তবু গায়ের জোরে উদ্ধতভাব বজায় রাখিয়া বলিল, বড়ো হওয়ার শখ কোন বয়সে থাকে না ? কিন্তু ও ভাবে কি বড়ো হওয়া যায় বে দাদা ! তার ধরাবাধা মেথড আছে। এই যে এত কাণ্ড করলে, তুমি ভাবছ কাল কাগজে কাগজে তোমার নাম বেরিয়ে যাবে ? সে গুড়ে বালি।--এক লাইন শুধু লিখে দেবে, একজন পাগলাটে ইয়ংম্যান মিটিংয়ে গোলমাল করেছিল। তোমার নামটি পর্যন্ত করবে না।--কী করছ, তুমি এখন ? কিছু না। এ লাইনে আসবে ? বলিয়া শঙ্করেব জবাবের জন্য অপেক্ষা না কবিযই খুশিতে উচ্ছসিত হইযা উঠিলেন, শঙ্করের হাত নিজের হাতের মধ্যে গ্ৰহণ করিয়া বলিলেন, বেশ, কিছু ভেবো না তুমি, আমার উপব সব ভার ছেড়ে দাও, আমি সব ঠিক করে দেব। কিন্তু সে তো দু-একদিনের ব্যাপাব নয়, দু-এক কথাতে সব ঠিক হয়ে যাবে না। এক কাজ করো তুমি, কাল দুপুরবেলা একবার এসো আমার বাড়িতে-কথাবার্তা কওয়া যাবে। হ্যা কেদারদা, এই সন্ধেবেলা বাড়ি ফিরে যাব ? কোথাও একটু কিছু-একজন ইয়ংম্যান সঙ্গে রয়েছে, আজ বেশ জমত। আঁ্যা ? কেদার বলিলেন, কনর্কের ওখানে---? শঙ্কর আবার দেখিতে পাইল, কেদারের উরুতে আঙুলের একটা খোঁচা দিয়া লীলাময আবার কী যেন ইঙ্গিত করিলেন, কেদার আর কথা বলিলেন না। একটা অদ্ভুত অবর্ণনীয় অনুভূতি শঙ্করের ভিতরে ম্যাজিকওয়ালার চারাগাছের মতো গজাইয়া উঠিতেছিল। জীবনে যেন হঠাৎ একটা বহস্যময় অ্যাডভেঞ্চার শুরু হইয়া গিয়াছে। কনক যে কে এবং কেন যে সে বাতিল হইয়া গেল বুঝিতে শঙ্করের বিশেষ কষ্ট হইল না। ছেলে সে কেমন, কনক নামধেয়ার স্মৃর্তির বাজারে সওদা কিনিতে যাওয়াটা সে কীভাবে গ্রহণ করিবে, এখনও লীলাময় তার হদিস পান নাই। চালাক-চতুর মানুষ, হিসাব না করিয়া এক পা চলেন না, কনককে তাই এখনকার মতো আড়ালেই রাখিযা দিলেন। চৌরঙ্গির এক হােটেলে গিয়া সামনে ধরিলেন শুধু একটা পেগ। শুকনো নীরস জীবন মানুষের, কঠিন বাস্তবতার ধুধু প্ৰান্তর পার হইয়া চলিতে হয় মানুষকে-হয় না ভাই শঙ্কর ? বিষ-জীবনে শুধু বিষ। মাঝে মাঝে তাই একটু অমৃত চাই মানুষের-চাই না ভাই শঙ্কর ? শঙ্কর সায় দিয়া বলিল, নিশ্চয়। বলিয়া এক চুমুকে গ্লাসটা শেষ করিয়া নিজের হাতে নিজের গলা চাপিয়া ধরিয়া শঙ্করের মুখ বঁকানোর রকম দেখিয়া লীলাময় ও কেদার দুজনেই হাসিলেন। কিন্তু গ্লাসে চুমুক সে যে দিয়াছে, দলে সে যে ভিড়িয়াছে, ইহাতে পরম স্বস্তিও দুজনে যে পাইয়াছেন, সেটা বেশ বোঝা গেল। কেদার বলিলেন, আনাড়ি।