পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

wo মানিক রচনাসমগ্র শেষে সিধু যেন প্রসঙ্গক্ৰমেই বলে, খাসির একটা মাথা আনিলাম কুবির। মস্ত মাথা খান— মইষের মতো দুটা শিং। নিল কত ? শাষ বেলা সস্তা। কিনলাম কুবির। পুরা পাঁচ আনা চাইয়া শ্যােষ ম্যাশ চােদ্দ পয়হায় দিল। মাইয়াটারে ব্যানুন রাইধবার কইলাম, তা কয, তেল মরিচ নাই, চালও নাকি বাড়ছে। সিধুর কথা শুনিবার সমস্ত আগ্রহ কুবের সহসা হারাইয়া ফ্যালে। পিসিকে সে জিজ্ঞাসা করে, ভাত হইল পিসি ? একেবারে সে পিছন ফিরিয়া বসে সিধুর দিকে। ক্ষণকাল অপেক্ষা করিয়া সিধু উঠিয়া যায়। বাঁশের একটা টুকরিতে খাসির কোটা মাথাটা আনিয়া কুবেরের সামনে ধরিয়া বলে, দ্যাখ কুবির, মিছা কই নাই। ঘাড়ের কাছে খাসা খানিক মাংস ছিল, এই দ্যাখ-টুকরির কাছে মুখ লইয়া ঠাহর করি যা করিয়া সিধু কয়েক টুকরা মাংস বাছিযা কুবেরকে দেখায়। করুণ নয়নে কুবেরের মুখের দিকে চাহিয়া বলে, তাল মরিচ দিয়া ব্যানুন যা হইব-অমর্ত। আমিনুদ্দির ঠাই প্যাজ রসুন মাইগা আইনা--- আমাবে দেখাও ক্যান ? রাঁধগা ব্যানুন। সিধু এবার স্পষ্ট করিয়াই বলে, তাল মরিচ। আর একমুঠ চাল দে কুবিব। তরেও দিমুনে ব্যানুন। কুবের সন্দিগ্ধ হইয়া বলে, দিবানি নিযাস • সিধু আহত হইয়া বলে, দিমু না ? কস কী কুবির ! তরে না দিয়া যামু কই ? তেল মশলা এবং চােল লইয়া সিধু উঠিল। আঁতুড় হইতে মালা বলিল, বুড়া কি বজ্জাত! মাথাব্য ভাগ দিব না। আইঠা কলা দিব, দেইখো। কুবেৰ উদাসভাবে বলিল, না দেয় না দিব। আজ তো শ্যােষ না, আরেক দিন আইলে মাইরা খেদাইয়া দিমু|--আমার লগে চালাকি কইবা যাইব কই ? ভাত নামিলে ইলিশ মাছ ভাজা আর লংকার্যক্তিম তরকারি দিয়া ফেনসমেত তপ্ত অল্লে কুবের মুহুর্তের মধ্যে পেট ভরাইযা ফেলিল। গোপিকে খানিক পরে একটা বাটি লইযা গিয়া সিধুব কােছ হইতে খাসির মাথাব্য ব্যঞ্জন আনিতে বলিয়া সে বাহির হইয়া গেল। পীতম মাঝির বাড়ি জেলেপাড়ার একেবারে উত্তর সীমাস্তে। গোয়ালের ভিতব দিয়া তাহার বাড়িতে ঢুকিতে হয়; গোয়ালের একদিকে বাঁধা থাকে দুটি শীর্ণ গোবু, অন্যদিকে থাকে পীতমের প্রসিদ্ধ বেড়া-জাল। এতবড়ো জাল কেতুপুরের আর কাহারও নাই। বাড়িতে উঠানের বালাই নাই, গোয়াল পার হইয়া ঢুকিতে হয় প্রকাণ্ড একটা ঘরে। দুপাশের ছোটাে দুখানা ঘরে ঢুকিবার দরজাও এই ঘরের ভিতর দিয়া। কার্পণ্য ও বেড়া-জালটির মতো বাড়ি করার এই খাপছাড়া ঢংও পীতমের কম প্ৰসিদ্ধ নয়, লোকে নাম দিয়াছে কয়েদখানা। ঘরের পিছনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা, তারপরে একটা ডোবা। ডোবার ওদিকে বাঁশবনের পরে আর মানুষের বসতি নাই, বহুদূর বিস্তুত শস্যখেত আষাঢ়ের গোড়াতেই এখন অর্ধেকেৰ বেশি জলে ডুবিয়া গিয়াছে। বাশবনে জেলেপাড়ার প্রায় সকলেরই পরিচিত একজোড়া পাঁচফুট লম্বা গোখুরা সাপ বাস করে। ডোবায় থাকে কয়েকটি (.5न्नं । বড়ো ঘরখানায় সভা রীতিমতোই বসিয়াছিল। ঘরে ঢুকিয়া কুবের অবাক হইয়া দেখিল, সভাপতি রাসু নয়, হােসেন মিয়া। পীতমের কাঠের সিন্দুকটার উপরে কঁথা ভাঁজ করিয়া পাতিয়া হােসেনকে বসিতে দেওয়া হইয়াছে। রাসু মিশিয়া গিয়াছে একেবারে ভিড়ের মধ্যে। সকলের মুখেই একটা দারুণ অস্বস্তির ভাব, আড়চোখে সকলে হােসেন মিয়ার দিকে চাহিতেছে। এতগুলি লোকের নিশ্বাসে ঘরের আবদ্ধ বাতাস হইয়া উঠিয়াছে দূষিত, গরমে হােসেন মিয়ার কপালে বড়ো বড়ো