পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অমৃতস্য পুত্ৰাঃ vo A আপনারাও যদি আমাদের সমিতিতে যোগ না দেন, যদি দশজনের মতো কেবল নিজের সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করাটাই জীবনে একমাত্র কর্তব্য বলে মনে করেন অনুপম বলে, আমি কি বুলেছি যোগ দেব না ? কিন্তু এত সহজে ব্ৰহ্মানন্দের ক্ৰোধের উপশম হয় না। সহজে কেন, কিছুতেই হয় না। আপনি না বলতে পারেন, আপনার মতো অনেকেই বলে। লেখাপড়া শিখে কোনো রকমে একটা চাকরি বাগিয়ে বিয়েটিয়ে করে ঘরসংসার কবাটাই যেন মানুষের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ! আপনি বিয়ে করেছেন ? আমি ? আমি বিয়ে করব ! ব্ৰহ্মানন্দের মুখ দিয়ে কথা সবে না। এইভাবে অনুপমের জীবনের গতিও শঙ্করের জীবনের গতির সঙ্গে একাভিমুখী হইয়া গেল। শঙ্কর যাত্ৰা আবিস্তু করিল একেবারে প্রকাশ্য রাজপথে-স্বেচ্ছায়। অনুপম যাত্রা আরম্ভ করিল। সবু গলিতে-পরের ইচ্ছায়। শঙ্করকে ভিড়ের মধ্যে নিজের পথ করিয়া লইতে হইল ধাপ্লাবাজিব জোরে-অনুপমাকে ঠেলিয়া লইয়া চলিল একদল ছেলেমানুষের নির্বোিধ উচ্ছসি। মহাপুরুষের সঙ্গে বিচরণ করিবার অধিকার লাভের জন্য প্ৰাণপাত করিতেছে, বিনা চেষ্টায় অনুপমও আগাই ঘা চলিয়াছে সেইখানেই। ছেলেবা অনুপমকে পছন্দ করে, ছাত্রছাত্রীমহলে তাব নাম ছড়াইয়া পড়িতেছে। যে কোনো অনুষ্ঠানই হােক, ছেলেরা তাহাকে টানিয়া লইয়া যায়। কিছু বলিতে হয়। অনুপমাকে। কী যে সে বলে ভালো বোঝা যায় না, কারণ, মনে যা আসে তাই সে বলিয়া যায়। কিন্তু স্কুলে মাস্টার আর কলেজে প্রফেসরদের ব্যাখ্যামূলক লেকচার শুনিতে অভ্যস্ত ছেলেদের কাছে তার ঈষৎ ভয়ে ভয়ে আবোল-তাবোল কথা বলাটাই মনোহর লাগে। অনুপমের দাঁড়ানোর ভঙ্গি, কথা বলার সময় মুখ ছাড়া হাত প্রভৃতি শরীরেব বাড়তি অঙ্গগুলি লইয়া অস্বন্তি বোধ করিবার ভঙ্গি, মাঝে মাঝে নাকের ডগা চুলকানো, এ সব দেখিয়া ছেলেদেব একটা গভীর মমত্ববোধ জাগে। অনুপমকে মনে হয় ঘরের লোক। ছাত্রীরা সাধারণত মুচকি মুচকি হাসে, তবে কারও কারও মধ্যে বাৎসল্যের সঞ্চারও হয়। অন্তত আশালতার যে হয় তাতে সন্দেহ নাই। পছন্দসই ছেলে দেখিলে একদিন, খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, তার শুধু প্রেমেরই সঞ্চার হইত। কিন্তু একবার শুধু একটু অসাবধানতার জন্য, তাও বড়ো বেশি দিনের কথা নয়, মাতৃত্বের পথে মাস তিনেক আগাইবার সুযোগ পাওয়ার পর, বাৎসল্য ভিন্ন আর কিছুই সে অনুভব করিতে পারে না। নিজে যাচিয়া সে অনুপমের সঙ্গে পরিচয় করিল। আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় আপনার মধ্যে এমন কিছু আছে, আজকাল মানুষের মধ্যে যা খুঁজেই পাওয়া যায় না। সরলতা, তেজ, আদর্শ অনুরাগ, ন্যাচুরেল পেইজ মনে হয়, যেন অনুপমের পিঠ চাপড়াইয়া দিবে ! একদিন আসবেন আমাদের বাড়ি ? আপনার সঙ্গে ভালো করে আলাপ করতাম। নিশ্চয় যাব। আজকেই চলুন না ? এখনও আটটা বাজেনি। অনুপম মুখে বিষাদের ভাব ফুটাইবার চেষ্টা করিয়া বলিল, আজি ? আজ আমায় মাপ করতে হবে। বাড়িতে মার শরীর ভালো নয় আশালতা দুশ্চিস্তায় ব্যাকুল হইয়া বলিল, মার শরীর খারাপ ? যান যান শিগগির বাড়ি যান। আমিও রইলাম, আপনিও রইলেন, একদিন গেলেই হবেখন আমাদের বাড়ি। মাকে ফেলে কী করে যে এলেন । ܗܝ