পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিহি ও মোটা কাহিনি ves উপকারের জন্য কৃতজ্ঞ হইয়া নাম-ধাম না দিয়া লোকটি রহস্যের মীমাংসা করিয়া দিয়া গিয়াছে। যুবতিটি নাকি লোকটির স্ত্রী নয়, বালবিধবা কন্যারত্ন। পাপিটাকে যাহাতে গুহাতেই মরিতে দিয়া পলাইয়া গিয়া জগতের কল্যাণ করি শেষের দিকে এ-ৰূপ একটা অনুরোধও জানানো হইয়াছে। খুকিকে কোনো প্রকারে একটু দুধ খাওয়াইয়া আমি মাথায় হাত দিয়া বসিয়া রহিলাম। অনুপস্থিত বিধবাটি এবং তাহার বাপের উদ্দেশে আমার গালাগালি শুনিয়া গুহার পাথরগুলিও বোধ হয় সেদিন লজ্জা পাইয়াছিল। বাৎসল্যর সিমেন্ট দিয়া যৌবনের শক্ত গারদ করিয়াছিলাম, তাহা ফাটিয়া একেবারে চৌচির । মেয়েটা গুহা আলো করিয়া জন্মিয়াছিল, এখন আমার বাড়িটা এমন আলো করিয়াছে যে, এই প্রৌঢ় বয়সে মাঝে মাঝে চোখে অন্ধকার দেখিতে আরম্ভ করিয়াছি। একরাশি কালো চুল পিঠে ছাড়াইয়া ফরসা একখানি কাপড় পরিয়া চঞ্চলপদে সারাদিন চোখের দেখি আব্ব তারিফ করি। মেয়েটা যে এত সুন্দর, এ যেন আমার অবিশ্বাস্য সুখ। কত কী মনে হয়। পিছু হাঁঢ়িতে হাঁটিতে আমি যেন একেবারে কৈশোরের প্রাস্তে গিয়া দাঁড়াই, ওর ওই টানা চোখ আর রাঙা ঠোঁট আর অপূর্ব-গঠন তনু আমাকে সেইখানে আটকাইয়া রাখে। রাতদুপুরে তার ঘরের দরজায় টােকা দিয়া অদ্ভুত গলায় ডাকি, শিলা ! সে অবশ্য ঘুমাইয়া থাকে, সাড়া দেয় না, আমার মুখের ডাকে আমারই ভবিষ্যৎ ভূতটা যেন সামনে আসিয়া দাঁড়ায়, অকস্মাৎ এমন আতঙ্ক হয়, যে বলিবার নয়। নিজের ঘরে ছুটিয়া গিয়া কঁাপিতে ধরাইয়া টানিতে গিয়া কাশিতে আরম্ভ করিয়া দিই। কাশিতে কাশিতে হাসি পায়, আমার হাসির শব্দে অন্ধকার যেন নড়িয়া ওঠে, বাড়িটা যেন বিরক্তিতে একবার একটু কঁপে, আমার গা যেন ছমছম করে। গলা চাপিয়া হাসি থামাইতে গিয়া গোগো শব্দ হয়, তাড়াতাড়ি হাত সরাইয়া নিয়া আমি উঠিয়া বসি । খোলা জানালায় শব্দ হয়, দাদু ! কীরে শিলা ? আমার ভয় করছে। দাদু। কে যেন হা হা করে হাসছিল। শুনিয়া শিহরিয়া উঠি।। চৌকির প্রাস্তটা শক্ত করিয়া চাপিয়া ধরিয়া বলি, ভয় আবার কীসের ? ঘুমোগে যা। আমি তোমার ঘরে শোেব দাদু, দরজা খোলো। মেয়েটা বলে কী ! এই নিস্তব্ধ রাত্রি, অনুভূতিতে ঘা-মারা এই গাঢ় অন্ধকার, অর্ধেম্মাদ এই নিদ্রাহীন তৃষিত প্রৌঢ়, এ ঘরে শূইতে চায় ও কোন হিসাবে ? রাতদুপুরে জ্বালাতন করিতে নিষেধ করিয়া এমন জোরে ধমক দিয়া উঠি যে, নিজেরই চমক লাগে ! মিনিটখানেক ঘড়িটার টিকটিক শব্দ ছাড়া সব স্তব্ধ হইয়া থাকে, তারপর শুনিতে পাই অবাধ্য মেয়েটা জানালা ছাড়িয়া এক পাও নড়ে নাই, অধিকন্তু ফুপাইয়া কাঁদিতেছে। হাতে চোেখ ঢাকিয়া জানালার নীচে বসিয়া পড়িয়াছে। দেখিয়া আমার হৃদয় হিম হইয়া যায় এবং আমি স্পষ্ট অনুভব করি সেখানে অতনুর মুছা হইয়াছে। भनिक २झ-२8