পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪০৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ひbr মানিক রচনাসমগ্র ভৈরব মহিমকে বলিল, ঘরে ঘরে সমান বিপদ, আলতামণির চিল্লানিটা শুনিছ ? সবার আগে মাচান হল তোর, আগে থেকে পোটলাপুটলি নিয়ে বসে আছিস মাচানে উঠে, এত চ্যাচানি কীসের রে বাবু! অমনি স্বভাব ছুড়ির, গা-সুন্ধু লোক দেখতে পারে না। সাধে ? মহিম বোধ হয় তামাক সাজিতে আরম্ভ করিয়াছে, আগুন দেখা গেল। একটু তামাক টানিতে পারিলে মন্দ হইত না, কিন্তু মহিমের মাচানে যাওয়ার উপায় নাই। গেলেও সুবিধা হইবে না, অতটুকু মাচানের উপর মহিমের বউ, মহিমের ছেলের বউ, দুটি বয়স্ক মেয়ে, সকলে আশ্রয় নিয়াছে। তাদেরই বোধ হয় নড়িবার ঠাই নাই, ওর মধ্যে কোথায় বসিয়া সে তামাক টানিবে ? ডিঙি নৌকাটি অবশ্য আছে মহিমের, কিন্তু তাকে তামাক খাওয়ানোর জন্য মহিম যে মাচান হইতে নামিয়া ডিঙিতে করিয়া এখন তার চালায় আসিয়া উঠিবে সে ভরসা নাই। কোমবে দুটি বিড়ি আর দেশলাই গোজা ছিল, একটু হিসাব করিয়া ভৈরব একটা বিড়ি ধরাইল। তারপর আবার শোনা গেল আলতামণির আর্ত চিৎকার, --এবার আওয়াজটা আরও তীক্ষু, আরও মর্মভেদী । ও মহিমমামা ! ও ভৈরব মামা ! তোমাদের ভাগনি জামাই যে মরে গেল গো, একবারটি আসবে না ? মহিম হ্রকায় একটা টান দিযা জিজ্ঞাসা করিল, যাবে নাকি ? ভৈরব বলিল, চল যাই। কুঁকাটা এনে দাদা, বিড়িফিড়ি একদম মুখে ঝুচে না। বাড়ির পিছনে সব চেয়ে মোটা আমগাছটার অনেক উচুতে মোটা ডাল বাছিয়া আলতামণির মাচান বাঁধা হইয়াছে। গাছটার সকলের নীচের ডালটা পর্যন্ত জল উঠিয়াছে, দেড়খানা মানুষ ডুবিয যাইবে। আশ্চর্যের কিছু নাই, উচু জমিতে উচু ভিটায় ভৈরবের বড়ো ঘর, চালা হইতে নামিবােব সময় দেখিয়া আসিয়াছে সে ঘরের দরজার অর্ধেকেব বেশি জলের নীচে ডুবিয়া গিয়াছে। ইট দিয়া তক্তপোেশ উচু করিয়া কী সাহসেই সে ঘরের মধ্যে রাতটা কাটাইয়া দিবে ভাবিয়াছিল ! তক্তপোশটা এখন বোধ হয়। ঘরের মধ্যে ভাসিয়া বেড়াইতেছে। এখানে আলতামণির অবস্থা সত্যই কাহিল। কাছে আসিয়া ভৈরব ও মহিম দুজনেই বুঝি৩ে পারিল, অকারণে আলতামণি ও রকম আর্তনাদ করে নাই। আমগাছেব ডুবুডুবু ডালটা সে এক হাতে প্ৰাণপণে জড়াইয়া ধরিয়া আছে ; অন্য হাতে ধরিয়া আছে কানাই জীবিত না মৃত বুঝিবার উপায় নাই, কিন্তু একেবারেই নিশ্চেষ্ট, আলতামণি ছাড়িয়া দিলেই জলে ডুবিয়া স্রোতে ভাসিয়া চলিয়া যাইতে পারে, এমনিভাবে গা এলাইয়া দিয়াছে। ধরো মামা, চট করে ধরে একজন,-হাত এলিয়ে গেছে আমার। কিন্তুখন এমনি করে ধবে আছি। মৃদু ও মধুর গলা আলতামণির, কে বলিবে একটু আগে তারই গলা দিয়া আমন ইঞ্জিনের গাছের ডালে ডিঙি বঁধিয়া দুজনে ধরাধরি করিয়া কানাইকে ডিঙিতে তুলিতেই ব্যাপারটা মোটামুটি বুঝা গেল। কানাইয়ের মুখ দিয়া দেশি মদের তীব্র গন্ধ বাহির হইতেছে। ভৈরব বলিল, বটে ! এই জন্য বঁােদরটার নায়ের দরকার হয়েছিল । না-টা হল কী রে আলতা, আঁ্যা ? আলতা তখন ডালটার উপর বুক দিয়া হাঁপাইতেছে, উঠিবার ক্ষমতা নাই। ক্ষীণস্বরে বলিল, ভেসে গেছে। ভৈরব চমকাইয়া বলিল, ভেসে গেছে ! কোনদিকে গেল ? হায় সৰ্ব্বেবানাশ ! আলতা কঁদিবার উপক্ৰম করিয়া বলিল, কোনদিকে গেল কী করে বলব। মামা ? আমার ইন্দিকে ७ --