পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সরীসৃপ 8 ○> যাদব বলিলেন, কাল থেকে দূর্ভাবনা শুরু হবে ছোটােবউ। আমি চলে যাব বলে ? যাদব বিচলিতভাবে বলিলেন, আমাব বাড়ি যদি তোমার বাড়ি হত ! তিন কাল অশান্তিতে কাটল, শেষের এই মহাকালটাও কি আমার তেমনই অশাস্তিতে কাটবে ? জীবনে একবার জন্ট পাকালে আর ইতি নেই, ক্ষমা নেই। শেষবেলায় আজ জোর বাতাস উঠিয়াছে। যাদবের দাড়িতে চাঞ্চল্য দেখা দেয়, একটা ক্যালেন্ডার পাখির পাখার মতো দেওয়ালে ঝাপটা মারে। সুলতার চোখ মিটমিট করিতে থাকে। যাদবের কোলে ন্যাকড়া জডানো যে ঝাপসা শিশুটি হাত-পা নাড়িয়া খেলা করে একেবারে আন্তৰ্হিত হইয়া যাইবে আশঙ্কায় সুলতা ভালো করিয়া তাকাইতে পাবে না। যাদব আবার বলিলেন, বাপের বাড়ি যেতে তোমাব খুব ইচ্ছা করে ছোটোবউ ? খুব ! একটুও করে না। বাপ নাই, বাপের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা তার হইবে কেন ? না গিয়া উপায নাই তাই যাওয়া। সবমা আর তাহাকে এখানে রাখিবেন না। এ সময়ে এ বয়সে নাকি স্বামীব কাছে থাকিতে নাই। তবে তোমায একটা জিনিস দেখাই বাছা।--বলিয়া পকেট হইতে যাদব ছোটো একটি ফটো বাহির কবিয়া সুলতার হাতে দিলেন। এখানে ওখানে পোকায় কাটিয়া দিয়াছে, লম্বালম্বি পাশাপাশি অজস্র আঁচড় পডিয়াছে, কিন্তু এ যে একটি তৰুণী বধূর ফটাে তাহা সহজেই বুঝিতে পাবা যায । সুলতা ভালো করিয়া ঘুরাইয়া ফিরাইযা দেখিল। সাড়ে তিন হাত মানুষকে তিন ইঞ্চি করিযা ফেলা হইয়াছে, স্নান আলোছায়াব সামঞ্জস্যেই রক্তমাংসের পরিচয়, তবু সুলতাব দৃষ্টি ভাবী হইয়া উঠিল, এলোমেলো নিশ্বাস পড়িল । আমার প্রথম স্ত্রীব ছবি ছোটোবউ। মববাব কযেক মাস আগে নিজেই তুলেছিলাম ভালো ७ळेन्नि ! আপনার দু বিয়ে ! যাদব হাসিলেন।

  • न्ट्र † &iन्म ? জানেন বইকী ! খুব ভালো করেই জানেন। সুলতা বুকের মধ্যে কেমন ভার বোধ করিতেছিল ! চাপা গলায্য সে বলিল, খুব ভালো করে জানেন কেন ?

হঁ্যা। শাস্তি বেঁচে থাকলে আজ মনোর মার চেয়ে বুড়ো হয়ে যেত, কিন্তু মরে গিয়ে সে আমার মনে নতুন বউ হয়েই বেঁচে আছে। একি মনোর মা টেব পায় না বাছা ! এই সেদিন আমায কবিত্ব করে বলছিল, মরে যাওয়ার পব মানুষের বয়স আর বাড়ে না। এ বড়ো আশ্চর্য গো, এ বড়ো অন্যায । সুলতা সন্দিগ্ধভাবে বলিল, কবিত্ব করে নয়। না। তাহলে নিজের কথায় নিজেই ও আঁতকে উঠত। তেইশ বছরের অভিজ্ঞতা। যাদব খানিকক্ষণ নীরব হইয়া রহিলেন। সুলতার মনে হইল, কঁচাপাকা গোঁফদাড়ির আড়ালে ঠোঁট দুটি কঁাপিতেছে। একটা অস্বাভাবিক উত্তেজনা তাহার মাথার মধ্যে দপদপ করিতে লাগিল। পাশে গিয়া বসা যায় না ? দাঁড়ি ফাঁক করিয়া দেখা যায় না ঠোঁট দুটি কঁাপিতেছে কি না ? প্রাচীন যন্ত্রে আত্মার বাণী এমন ক্ষীণ মুমূর্ষ কেন ভাবিয়া, সুলতার কান্না আসিবার উপক্ৰম হইল।