পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ዩኃ S মানিক রচনাসমগ্র বনমালী বলিল, ছেলেমানুষ, বোঝে না। বোঝে না ? কুঁঃ, কচি খুঁকি কি না, বোঝে না ! বোঝে সব, সব বুঝেও, এমনি করে, এ আর আমি টের পাইনে ! দিদির যে আর টাকা নেই, দিদি যে ফুট বলতে পাঁচশো টাকা পাঠিয়ে দেয়নি ! বনমালী কিছু বলিল না। চাবুও নিজের জ্বালা আর অভিমানে খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। উহাদের স্তব্ধতা নিঃসম্পর্কীয়। কাবণ আজ একজন প্রৌঢ়া নারী এবং অপরজন মধ্যবয়সি ° प्रळ्नक् । খানিক পরে চাবু বলিল, যা বলছিলাম। ভাগ্যে এই বাড়ি আর বাগান তোমার কাছে বঁধা রাখার কথা মনে হয়েছিল! টাকা দেবার মেয়াদ পাের হয়ে গেছে বলে তুমি অবিশ্যি বাড়িটা নিয়ে নেবে না, কিন্তু আর কারও কাছে বঁধা রাখলে কী সর্বনাশ হত বল তো ! তা বইকী। বাগানবাড়ি পরের হাতে চলে যেত। কিন্তু আমার কাছে বাড়ি তো তুমি বঁধা রাখো নি চাবুদি, বিক্রি করেছিলে। ওমা, সে কী, ওই বাড়ি আমি বিক্রি করলাম কখন ? বনমালী একটু হাসিয়া বলিল, দলিলের নকলটা একবার পড়ে দেখো। তিরিশ হাজার নগদ আর ওই টাকার ফাঁস বছরের সুদের দামে তুমি আমাকে বাড়ি বিক্রি করেছি। বরাবব সুন্দ দিয়ে এলে বলতে পারতে বাধা আছে। মুখ পাংশু হইয়া যাওয়াটা চাবু সম্পূৰ্ণ নিবারণ করিতে পারিল না। কী বলিবে হঠাৎ সে ভাবিয়া পাইল না। শেষে বলিল, তুমি হাসছ, তাই বল ! বনমালীর মুখের হাসি অনেক আগেই মুছিয়া গিয়াছিল, কিন্তু সে কিছু বলিল না। জীবনের একটা অভিজ্ঞতাকে বনমালী খুব দামি মনে করিয়া থাকে। তাহা এই যে, বক্তব্য দুবার মুখ দিয়া বাহির করিতে নাই। পুনরুক্তিতে কথার দাম কমিয়া যায়। চাবু আবার বলিল, আমি বলি কি, ত্ৰিশ হােক বত্ৰিশ হােক দেনা তো তোমার আমি শুধতে পারছি না, এ বাড়ি দিয়ে তুমিই বা করবে। কী , তার চেয়ে বিক্রি করে ফেলে তোমার টাকাটা তুমি নিয়ে নাও, বাকিটা আমাকে দাও । তোমার তিরিশ হাজার কেটে নিলে আমার যা থাকবে তাই দিয়ে। দেশে একটা ছোটােখাটাে বাড়ি তুলে বাস করিগে। জমিজায়গা যা আছে দু-চার বিঘে তার খাজনা পাই না, ফসল পাই না, নিজে থাকলে একটা ব্যবস্থা হবে। বনমালী খাওয়া বন্ধ করিল। আজকাল কোনো কিছুতেই সে বিস্ময় বোধ করে না, আকাশের একটা বজু পাখি হইয়া পাশ দিয়া উড়িয়া গেলেও না। কিন্তু চাবুর কথায় সে যেন অবাক হইয়া গিয়াছে এমনই মুখের ভাব করিয়া বলিল, তুমি এ বাড়ি বিক্রি করতে চাও ? খেপেছা! চাৰু সভয়ে বলিল, কেন ? তোমার টাকা তো তুমি পাবে ! আমার টাকা চুলোয় যাক । চাৰু আরও ভয় পাইয়া বলিল, রাগ কোরো না ভাই। মেয়েমানুষ, কিছুই তো বুঝিনে । বনমালী বলিল, ভুবনের বাড়ি বিক্লি করার পরামর্শ তোমাকে দিলে কে ? ও সব দুবুদ্ধি কোরো না। সময়টা, কী জান চাবুদি, আমারও তেমন সুবিধে যাচ্ছে না। তোমার এই বাড়িটা বন্ধক রেখে কিছু ধার পেয়েছি। একটু সামলে উঠলেই ছাড়িয়ে নেব। চারু, বুদ্ধ নিশ্বাসে বলিল, তারপর ? ভুবনের বাড়ি ভুবন ফিরে পাবে। গলনালী প্ৰায় বুদ্ধ করিয়া চাবু বলিল, কিন্তু তোমার টাকা ? তোমার তিরিশ হাজার টাকা ? ভুবনের কাছে জমা থাকবে । এ কথা কেহ বিশ্বাস করে । নিৰ্ম্মল আশার শোকে চাবু কঁাদিয়া ফেলিল।