পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@を○8 সেও একটা টান অনুভব করে, কেবল তাহাকে এক পাইলে কেমন খাপছাড়া খাপছাড়া ব্যবহার করে রাসু এইটুকু শুধু গোপির আপশোষা। কেমন লজ্জা বোধহয়, অস্বস্তি লাগে। হঠাৎ বলা নাই কওয়া নাই হঠাৎ যেন ভয়ানক রাগ হইয়া যায় রাসুর উপর গাল দিতে ইচ্ছা হয়। অথচ ভালও লাগে রাসুকে। যেদিন সওদা আনিতে যাওয়ার সময় রাসুকে সে দেখিতে পায় না সেদিন অনেকক্ষণ গোপি মুখ ভার করিয়া থাকে রাসুর মমতার স্বাদটা বোধহয় মিষ্টি মদের গোপিকে নেশা জন্মাইয়া দিয়াছে ; তাকে না পাইলে যে রাসু বিবাণী হইয়া যাইবে, জলে ডুবিয়া মরিবে বোজ রোজ রাসুর মুখে এ প্রতিজ্ঞা শুনিতে না পাইলে গোপির মনটা কেমন করিতে থাকে। মাঝে মাঝে এ কথা ভাবিয়াও গোপির মন কেমন করিতে থাকে গোপিক যে, জগতে রাসুর কেহ নাই। কোথায় সে ময়নাৰ্ছীপ কে জানে, সেখানে সকলকে হারাইয়া এক রাসু ফিরিয়া আসিয়াছে।--রাসু নিজে বলিয়াছে বুক জুড়িয়া দিবারাত্র তাহার হাহাকার । তা হইবে না ? আহা, বলিতে বলিতে রাসুর চোখ কেমন ছলছল করিতেছিল ! বীে হইতে হইবে এই তো রাসু চায় তার কাছে ? তা বেঁী হইতে গোপির আপত্তি নাই ! প্ৰথম প্রথম রাসুকে গোপি বড়ো অবিশ্বাস করিত। কে জানে কি বাদ মতলব আছে ওরা-একা পাইলেই হাত ধরিয়া কাছে টানিতে চায় ? ক্ৰমে ক্ৰমে বাসুবও বুঝি মনের পরিবর্তন হইয়াছে গোপিরও জম্মিয়াছে বিশ্বাস সে জানিয়াছে রাসু তার বড়ো বাধা-পােষ্যমানা। [পাণ্ডুলিপির পববর্তী পৃষ্ঠা পাওয়া যায়নি। } জেলেপাড়ার বৃদ্ধ ও রমণীদ্বা হাহাকার কবিয়া রাত কেহ গুমরাইয়া গুমরাইয়া কঁদিতে লাগিল। ইলিশের মরশুম শেষ হইতে চলিয়াছে, মোটা উপাৰ্জ্জনের সুযোগ দুদিন পরে ফুরাইয়া যাইবে, জেলেপাড়ার কোনো ঘরে আজ বুঝি সমর্থদেহ পুরুষ নাই, পদ্মার বুকে নীেকা ভাসাইয়া ছড়াইয়া গিয়াছে দূরে দূরান্তরে। কেহে ফিরিবে প্ৰভাতে, কেহ ফিরিবে না ? উঠান ভরিয়া গিয়াছে, গোপি খুব আঘাত পাইয়াছে। কে জানে ডান পা-টি তাহারা ভাঙিয়া গিয়াছে কি না, চালা উড়িয়া দূরে গিয়া পড়িয়াছে পীতমের গোয়ালঘরের উপর। মানিক রচনাসমগ্ৰ ইলিশের মবসুম শেষ হইলে মোটা উপার্জনের সুযোগ দুদিন পবে ফুরাইয়া যাইবে, জেলেপাড়ার কোনো ঘবে আজ বুঝি সমর্থদেহ পুরুষ নাই, পদ্মার বুকে নীেকা ভাসাইয়া ছড়াইয়া গিয়াছে দূর দূরাস্তরে। কে ফিরিবে প্ৰভাতে, কে ফিরিবে না। মা রচনাসমগ্র-২, পৃ: ৪৭ .উঠান ভরিয়া পথ জুড়িয়া জমিয়াছে গাছের ডালপালা। কুবেরের শোবার ঘরখানা পড়িয়া গিয়াছে, গোপি খুব আঘাত পাইয়াছে, কে জানে ডান পা-টি তাহারা ভাঙিয়া গিয়াছে কি না। চালা উড়িয়া দূরে গিয়া পড়িয়াছে পীতমের গোয়ালঘরে, হীরু আর সিধুর একখানা ঘরও দাঁড়াইয়া নাই.. মা রচনাসমগ্র-২, পৃ: ৪৭