পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

W8S মানিক রচনাসমগ্ৰ লইয়া যাইবে, তারপর কুবের নীেকা লইয়া ফিরিয়া আসিবে কেতুপুরে। দ্বিতীয় আদেশ পাওয়া পর্যন্ত নৌকা কেতুপুরেই বাধা থাকিবে। সকলকে সঙ্গে করিয়া হোসেন রেলের মালগুদামে গেল। টাকা দিয়া মাল খালাস করিয়া আর সে কথা বলিল না, কুবেরেব হাতে তিনটি টাকা দিয়া জেটিতে যে স্টিমারটি বাধা ছিল সোজাসুজি তাহাতে গিয়া উঠিল । হােসেন মুখে বলিয়া যায় নাই, তবু কাহারও বুঝিতে বাকি থাকে নাই যে সমস্ত ভাব সে দিয়া গিয়াছে কুবেরকে, কুবেরই সব ব্যবস্থা করিবে। কুবের প্রথমটা একেবারে অভিভূত হইয়া গেল। এ কী সম্মান তার, এ কী সৌভাগ্য ! এত বড়ো একটা নীেকা, তিনজন জবরদস্ত মাঝি, তিনশো। চারশো টাকার মাল- এ সমস্তের উপর কর্তৃত্বের অধিকার তাহার একার। সকলের রাহাখরচেব টাকা পর্যন্ত হোসেন মিয়া তাহাব জিম্মা কবিয়া দিয়া গিযছে ! মাল তুলিতে গিয়া কুবেরেব মুখে কথা আটকাইয়া গেল। ভযে ভয়ে সে একবার সকলোব মুখেব দিকে চাহিল। হােসেন মিযার পক্ষপাতিত্বে না জানি মনে মনে ওরা কত রাগিথাছে { তারপর কুবের নীরবে একটা প্যাকিং কেস তুলিয়া লইল। শাস্তু জিজ্ঞাসা কবিল, জলপানি দিবা না কুবিব ? কুবের ক্ষীণকণ্ঠে বলিল, মাল নাযা তুইলা দিলে চলাব না ? তা চলিবো। ধীরে সুস্থে তাহারা বিড়ির কেসগুলি নৌকায় তুলিতে লাগিল। কাজে কারও যেন গা নাই। কাজের চেয়ে কথা বলিযা কুবেবের সঙ্গে খাতির জমাইবার চেষ্টাই তাদের বেশি। এক প্রস্তু মাল রাখিয়া আসিযাই বগা কুবেরের কাছে একটা বিড়ি দাবি করিয়া বসিল। ওদের দেখাদেখি গণেশও যেন গা ছাড়িযা দিযাছে। কুবেৰ মনে মনে বিবক্ত হইয়া উঠিল। কিন্তু মুখে কিছু বলিতে সাহস १ाईल ना। মাল বোঝাই হইলে কুবেৰ চিড়াগুড়ি কিনি যা দিলা সকলকে, বসিযা বসিয়া এ ৩ আগবামে তাহারা চিড়া চিবাইতে লাগিল যেন আজকের মতো কাজকর্ম সব শেষ হইয়া গিযাছে। নৌকা খুলিবার পরেও তাদের শৈথিল্যে ঘুচিল না । এমনভাবে দাঁড় টানিতে লাগিল যেন কত কাল আগে তারা মরিয়া গিযোছে। কুবের বলিল, গাও লােগাও বাই, জোরে খ্যািপ মাৰিব। শাস্তু বলিল, কান ? কুবের সাহস করিয়া বলিল, ক্যান কী ? সারাদিন লাগাইবা আমিনাবাড়ি যাওনে ? হোসেন শাস্তু বলিল, হোসেন মিয়া শূনব ক্যান ? বলিয়া শাস্তু হাসিল। দাঁড় উচু কবিয়া বাখিয়া বুক চিন্তাইয়া বলিল, ডরাও নাকি হােসেন মিয়ারে কুবির, আঁই ? কুবেরের পরিচয় এতক্ষগণে ওরা পাইয়া গিয়াছে, সর্দার বলিয়া আর মানিবে না, বন্ধুর মতো সমানভাবে কথা কহিবে। কুবের বড়ো বিমর্ষ হইয়া যায়। কত বড়ো পদটা হোসেন মিয়া তাহাকে দিয়া গিয়াছে, ইতিমধ্যে সে তার পদমর্যাদা হারাইয়া বসিল ! প্ৰথম প্রথম ওরা যখন খাতির করিয়া ভাব জমাইবার চেষ্টা করিয়াছিল তখন একটু দূরত্ব বজায় রাখিয়া চলিলে ভালো হইত। গণেশটা পর্যন্ত ওদের সঙ্গে মিলিয়া তার সঙ্গে ইয়ার্কি জুড়িয়া দিয়াছে। কড়া কথা বলিবে নাকি ? ভয় দেখাইবে ? ওরা অবশ্য চটিয়া যাইবে, কিন্তু তাহাতে কী আসিয়া যায়। তার ! স্বয়ং হােসেন মিয়ার সে নির্বাচিত প্রতিনিধি ! তবু জোর করিয়া কুবের কিছু বলিতে পারে না। যেটুকু সে বলে সকলে হাসিয়া উড়াইয়া দেয়, নীেকা অগ্রসর হয় মন্থরগতিতে।